শিপুফরাজী, চরফ্যাশন প্রতিনিধি :: অচল দু’পায়ে ভরসা করে স্বপ্নের পৃথিবীতে এগিয়ে চলেছে প্রতিবন্ধী আবু জাফর (২৪)। বাড়ি চরফ্যাসন উপজেলার আব্দুলাহপুর ইউনিয়নে । আবু জাফরেরা ৪ ভাই বোন । রিক্সাচালক বাবা খোরশেদ আলমের পক্ষে চার সন্তান নিয়ে জীবন সংসারের ঘানী টানতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ১৯৯৫ সালে স্বাভাবিকভাবে জন্ম আবু জাফর। পরে সাড়ে চার বছর বয়সে টাইপয়েড জ্বরে তার দু’টো পা অচল হয়ে যায়। টাকার অভাবে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানো হয় নি আর ।
সেই থেকে চিকিৎসার অভাবে পা দু’টো হারিয়ে প্রতিবন্ধীর তালিকায় নাম লেখালেন আবু জাফর। ছোটবেলা থেকেই দু’চোখে স্বপ্ন ছিল সমাজের পাাঁচজনের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে সে। কিন্তু সে স্বপ্নে গুড়েবালি, বাধাগ্রস্ত হয়েছে বার বার। সাত বছর বয়সে প্রতিবন্ধী জাফরকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাতে চেয়েছিল এলাকার কতিপয় লোভী মানুষেরা। তার মা বিবি আয়েশা বেগমের বাধায় ভিক্ষাবৃত্তি করাতে পাড়েনি তারা। বড় খালার সহায়তায় চরফ্যাসন কুলসুমবাগ ব্রাক স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পরে ঐ স্কুলের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক তার শারিরিক অক্ষমতার কারণ দেখিয়ে স্কুল থেকে তার নাম কেটে স্কুল থেকে বের করে দেয়।
পরবর্তিতে তার খালা ঐ প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীর মাধ্যমে পুনরায় ভর্তি করিয়ে দেন সেই ব্রাক স্কুলে। সেখান থেকেই পঞ্চম শ্রেণীতে পাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন জাফর। পা নেই তাতে কি দু’চোখ আর দু’টো হাত আছে, স্বপ্ন দেখতে বাধাতো নেই । আর তাই আবু জাফর এবার দু’হাতের শক্তি ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে শত বাধা, বঞ্চনা এবং কষ্টকে জয় করে স্বপ্ন বুনেছে নিল আকাশের ঐ রঙ্গিন ঠিকানায়।
আবু জাফর এ প্রতিবেদককে বলেন, বড় খালা উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আমি পড়ালেখা করেছি। ২০১০ সালে আমিনাবাদ হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাশা থেকে এসএসসিতে ৩৬ জিপিএ, ২০১২ সালে দুলারহাট আদর্শ ডিগ্রী কলেজ থেকে ২৪০ জিপিএ ও একই কলেজ থেকে ডিগ্রীতে ২য় বিভাগ অর্জন করি এবং বর্তমানে বরিশাল সরকারি কলেজে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত আছি।
রিক্সাচালক বাবা সারাজীবন রিক্সা চালিয়ে আমাদের সংসার খরচের জোগান দিয়েছেন এখন তিনি কোমরে ব্যাথা নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় ঘরে পরে আছেন। আমরা চার ভাই আমিই সবার বড় আমার ছোট দু’ভাই মানুষের বাসা-বাড়ির কাজ করে সংসার চালাচ্ছে আরেকটা ছোট ভাই বাড়িতেই থাকে। আমি মানুষের বাড়িতে লজিন (গৃহশিক্ষক) থেকে টিউশনি করে শতবাধাবিপত্তি পেরিয়ে নিজের পড়লেখা খরচ চালাচ্ছি। ছোট ভাইগুলোও আমাকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করে।
আবু জাফর আরোও বলেন, বর্তমানে আমাদের সংসারে খুব টানাপড়েন চলছে, এমতাবস্থায় আমি যদি কোনো চাকরি না করি তাহলে আমাদের পরিবার নিয়ে অসহায়ের মতো রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনোও পথ থাকবেনা। রোদবৃষ্টিতে ভিজে মানুষের দরজায় দরজায় কড়া নেড়ে যাচ্ছি একটি সরকারি চাকরির স্বপ্ন নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে একটি চাকরি দিতেন তাহলে হয়তো আমার অসুস্থ বাবা ও মায়ের চিকিৎসা ও ছোট ভাইদেরকে নিয়ে সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারতাম।
কোনোদিন যদি ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় তখন মানুষের জন্য কি করবেন এমন প্রশ্নে জবাবে আবু জাফর বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি সমাজের সকল প্রতিবন্ধীদের মানষিক বিকাশের জন্য একটি প্রতিবন্ধী ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করার। স্থানিয় সংসদ সদস্য যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয়ের স্থায়ি কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের সাহায্যও কামনা করেন শারিরিক প্রতিবন্ধী আবু জাফর।