রাকিবুল হাসান, মনপুরা(ভোলা)প্রতিনিধি ::

ভোলার মনপুরা মেঘনা নদীতে ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ শিকার করেন মনপুরার জেলেরা। কিন্তু নদীতে জলদস্যু ও ডাকাতের ভয়ে মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা। প্রতিদিনই জলদস্যুরা হামলা চালিয়ে জাল, নৌকা ও মাছ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।আবার নৌকার মাঝি ভাগিদের কে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেন।মুক্তিপন দিয়ে ফিরে আসেন পরিবারের কাছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি ও রুজি-রোজগারের তাড়নায় নৌকা নিয়ে নদীতে নামছে জেলেরা।মাছ শিকার বন্ধ থাকায় অনেক কিস্তি ও দাধনের টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা দিন পার করছেন।

জেলেদের কাছে এখন আতংকের জনপদে পরিনত হয়েছে মেঘনা নদী।গত(৪ঠা জানুয়ারী) দিবাগত রাত ৩ টার সময় ঘুমন্ত
মনপুরার মাঝেরঘাটের জসিম মাঝি পঁচাকোড়ালিয়া সাইফুল মাঝি ও বাচ্চু মাঝির ট্রলারে মেঘনা নদীতে জাল পাতা অবস্থা
হামলা চালায় জলদস্যুরা।পরে জনপ্রতি ৭৫হাজার টাকা মুক্তিপণে ফিরে আসেন।জেলেরা জানান গত ৪মাসে মেঘনার বিভিন্ন
পয়েন্টে অন্তত ১০টি ডাকাতির ঘটনায় ১০ জেলে অপহরনসহ লুট হয়েছে ১৫টি ট্রলার। মুক্তিপন দিয়ে জেলে ও ট্রলার
উদ্ধার করলেও যেন শংকায় কাটছে না তাদের ।

আহত জেলেরা জানান, হঠাৎ করে মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সময় জলদস্যুরা হানা দেয়। তারা ট্রলারে এসে মারধর ও
কুপিয়ে জখম করে এবং সব জাল ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।ট্রলার লুট করার শেষে মাঝি ও ভাগিদের কে অপহরন করে
নিয়ে যায়।জলদস্যুরা নোয়াখালী জেলা হাতিয়া উপজেলার বলে জানান জেলেরা।

জেলেরা জানান,ডাকাত দলের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কার্ড করে আনতে হয়। যাদের কার্ড করা হয়নি তাদের
উপর আক্রমন করে। তারা আরো বলেন,হাতিয়া উপজেলা নৌ পুলিশ পাড়ি ক্যাম্প এর পাশে ডাকাত দলের আস্থানা। নদী
থেকে জিম্মি করে সেখানে নিয়ে আবদ্ধ করেন।

ইলিশ ভাড়ার সাথে সাথে হঠাৎ করেই দস্যুতা বেড়ে যাওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন জেলেরা। দস্যুদের কারণে নদীতে
যেতে ভয় পাচ্ছেন জেলেরা।একটি রাত নদীতে থাকা মানি জীবন নিয়ে শংকায় থাকা।

জেলেদের অভিযোগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল না থাকায় ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে দস্যু
দমনে সক্রিয় রয়েছে বলে দাবী প্রশাসনের।

তবে বেশ কয়েক দিন মেঘনায় ইলিশ বাড়ায় নিয়মিত নদীতে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা।এতে আড়ৎদার, পাইকার ও
জেলেদের হাকডাকে মৎস্য ঘাটগুলো মুখরিত হলেও জলদস্যুদের উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন জেলেরা।
এ সব ঘটনা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানানো হচ্ছে না কেন ?

এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেরা বলেন, তাহলে আমরা জীবন নিয়েই নদী থেকে ফিরতে পারবো না।নির্জন  জায়গা নিয়ে আবদ্ধ করে আমাদেরকে।যদি শুনে আমার পরিবার পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কাহুকে বলেছে।তা হলে নির্যাতন ও হত্যা করে ফেলবে।নাম বলতে অনিচ্ছুক জেলেরা বলেন জলদস্যু নদীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নৌকায় হানা দিয়ে জলদস্যুরা জেলেদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে জাল, নগদ অর্থ, মাছ, সোলার প্যানেল, জেলেদের মোবাইল ফোনসহ সব সরঞ্জাম নিয়ে যায়।

বিশেষ করে হাতিয়া উপজেলা মহিউদ্দিন ও রুবেন নামে দুইজন ডাকাত প্রধান মনপুরার জেলেদের উপর এমন অমানবিক
নির্যাতন করে।এবং জেলেদের কে জিম্মি করে তার বসত বাড়ি হাতিয়া উপজেলা তমরুদ্দি কোড়ালিয়া নিয়ে আবদ্ধ
করেন।সেখান থেকে মুক্তিপন দিয়ে ফিরে আসেন জেলেরা।

গত বছর(২রা ফ্রেরয়ারী) মনপুরার ৭ জেলেকে অপহরন করেন মহিউদ্দিন বাহিনীর সদস্যরা।পরে বিকাশের মাধ্যমে
মুক্তিপন আদায় করেন ডাকাত দলের সদস্যরা ।মুক্তিপন দিয়ে ফিরে আশা জেলেরা মনপুরা থানায় একটি মামলা দায়ের
করেন ।সেই মামলা আমলে নিয়ে মাঠে নামে মনপুরা থানা পুলিশ ।বিকাশে নেওয়া টাকা জব্দ ও নাহিদ,ইসমাইল,মফিজ নামে
তিন দসদ্যকে আটক করেন জেল হাজতে ফেরন করেন মনপুরা থানা পুলিশ ।

তবে মামলা করা জেলেদের কে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি প্রধান করছেন ডাকাত দলের প্রধান মহিউদ্দিন ও অন্যন সদস্যরা।
রহমানপুর মাঝের ঘাট এলাকায় জসিম মাঝি বলেন দস্যুদের উপদ্রপ বৃদ্ধি পেয়েছে, গভীর নদীতে গেলেই ডাকাতদের কবলে
পড়তে হয়। তখন কোন উপায় থাকেনা।

এছাড়া জেলেরা আরো জানান,হাতিয়া মহিউদ্দিন ও রুবেন বিশাল এক বাহিনী তৈয়ারী করে মেঘনার বিভিন্ন পয়েন্টে
প্রতিদিন রাত ৫-৬টি ট্রলার নিয়ে মনপুরা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলের উপর আক্রমণ করেন।

জেলে দুলাল মাঝি,টিটব মাঝি ইসমাইল মাঝি,বসির মাঝি বলেন, রাতের বেলায় দস্যুদের আনাগোনা বেশী, তাই রাতে মাছ
শিকার করতে যাইনা, দিনের বেলায় গিয়ে সন্ধ্যান সাথে সাথে ঘাটে ফিরে আসি।এখন প্রশাসনের কঠোর হন্তেক্ষেপ না হলে
মেঘনা নিরাপদে মাছ শিকার করা যাবে না ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলেরা জানান,হাতিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে জলদস্যুদের আস্তানা রয়েছে, সেখান থেকেই দস্যুরা
ডাকাতির পরিকল্পনা করে মনপুরা সহ অনন্য জেলা থেকে আসা জেলেদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে হাতিয়া্ নিঝুমদ্বীপ নৌ-পুলিশের দায়িত্বে থাকা এস আই কাউসার আলম বলেন,দস্যু দমনে আমরা নিয়মিত
মেঘনা নদীতে টহল জোরধার করছি।সেই সাথ গোয়েন্দা নজরদারি করে ডাকাত দলের আস্থানায় অভিযান পরিচালনা করা
হচ্ছে ।

মনপুরা কোস্টগার্ড কন্টিজেন্ট কমান্ডার আলমগীর হোসেন বলেন, ডাকাত দমনে কোস্টগার্ড সক্রিয় রয়েছে।মনপুরা থানা অফিসার ইনর্সাজ(ওসি)সাউদ আহম্মেদ বলেল,প্রত্যকটা অভিযোগ যদি জেলেরা প্রশাসন কে অবগত করেন।তাহলে যাচাবাচাই করে ডাকাত দলের সদস্যদের কে আটক করতে সক্ষম হয়ই।সমন্বিত চেষ্টার মাধ্যমে মেঘনা নদীকে ডাকাত মুক্ত করার চেষ্টা চলমান রয়েছে ।

নৌকা প্রতি ১০ হাজার টাকা করে টোকন সংগ্রহ করতে হয় জেলেদের।টোকেন এর গায়ে লেখা থাকে “আল্লাহর
দান” ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here