সৈকত দত্ত, শরীয়তপুর প্রতিনিধি :: শরীয়তপুর পৌরসভার স্বর্ণঘোষ গ্রামের সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ১৬ বছর পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন দুলাল। ইসলাম ধর্ম গ্রহনের ২ বছর পরে নিজ এলাকার মুসলিম পরিবারের মৃত তোয়াব আলী সরদারের মেয়ে জায়েদা বেগম নামের এক মহিলাকে ইসলামী শরীয়াহ ও রেজিষ্ট্রি কাবিন সহ মুসলিম রীতি-নীতি মেনে বিবাহ করেন।
গত ২৫ নভেম্বর’১৫ দুলাল পরলোক গমন করেন। মৃত দুলালের পূর্ববর্তী সনাতন ধর্মের হিন্দু ভাই, ভাতিজা ও নিকট আত্মীয়-স্বজনগণ জোর পূর্বক দুলালের লাশ শ্মশানে পোড়ান।
এ ঘটনায় মৃত দুলালের স্ত্রী জায়েদা বেগম বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) শরীয়তপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মৃত দুলালের ভাই কাজল ঠাকুর (৫০) সহ ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। আদালত পালং মডেল থানাকে বাদীর আবেদন এফআইআর হিসেবে গণ্য করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে ও মামলার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, শরীয়তপুর পৌরসভার স্বর্ণঘোষ গ্রামের মৃত তারেক ঠাকুরের ছেলে মৃত দুলাল ঠাকুর ১৩ মে’২০০০ তারিখে নিজ সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হলফ নামা প্রদানের করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। পরবর্তীতে ২৯ আগস্ট’২০০২ সালে দুলাল নিকাহনামা রেজিষ্ট্রি করে জায়েদা বেগমকে বিবাহ করেন।
সেই থেকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা বসবাস করতেন। মৃত দুলালের সনাতন ধর্মের ভাই ও ভাতিজারা প্রভাবশালী হওয়ায় ধর্ম পরিবর্তন ও মুসলিম বিবাহ করার পরেও তথ্য গোপন রেখে তিনি দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর বেঁচে ছিলেন। মৃত্যু পরবর্তী দুলালকে দাফন না করে জোর পূর্বক দুলালের সনাতন ধর্মের ভাই কাজল ঠাকুর, ভাতিজা কাঞ্চন ঠাকুর, অনু ঠাকুর, ভানু ঠাকুর ও কানু ঠাকুর শ্মশানে তুলে চিতা সাজিয়ে মৃতদেহটি পুড়ে ভশ্ম করে ফেলে।
মামলার অভিযুক্ত কাজল ঠাকুর ও কাঞ্চন ঠাকুর বলে, মৃত দুলাল যদি ১৬ বছর পূর্বে ধর্মত্যাগ করে আর ১৪ বছর পূর্বে জায়েদাকে বিয়ে করে তাহলে দুলালের সকল কাগজ-পত্রে দুলাল ঠাকুর পিতা মৃত তারেক ঠাকুর ব্যবহার করতো কেন? আমরা কোন দিন শুনিনাই দুলাল ধর্মত্যাগ করে মুসলিম হয়ে জায়েদা বেগমকে বিয়ে করেছে। দুলালের মৃত্যুর পরে জায়েদা কিছু কাগজ-পত্র নিয়ে আমাদের কাছে ৩ লাখ টাকা দাবী করে। আমরা ১লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলাম। এখন ঘটনার আড়াই মাস পড়ে গিয়ে আদালতে মামলা করেছে।
মামলার সাক্ষী উজালা বেগম বলে, আমি দুলালকে অনেক দিন যাবৎ চিনি। দুলাল তার বিবাহীত স্ত্রী জায়েদাকে নিয়ে আমার গ্রামের বাড়ি ও ঢাকার বাসায় বেড়াইছে। অসুস্থ দুলাল ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থয়ও আমার বাসায় জায়েদাকে নিয়ে এসেছিল।
মামলার বাদী ও মৃত দুলালের স্ত্রী জায়েদা বেগম বলে, আমাদের এলাকার সকলেই জানে দুলাল মুসলিম হয়ে আমাকে বিয়ে করে। আমার পূর্ববর্তী স্বামীর সংসারে থাকতে দুটি সন্তান ছিল। তাই দুলালের সাথে দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান নেইনি। দুলাল অসুস্থ হলে আমি তাকে ঢাকায় চিকিৎসা করাই। সব সময়ই দুলালের সাথে ছিলাম। দুলাল মারা গেলে একই গাড়িতে লাশের সাথে ঢাকা থেকে আসি। আসামীরা জোর করে আমার স্বামী দুলালকে শ্মশানে উঠিয়ে মৃতদেহ পোড়ায়। আমি স্থনীয় লোকদের মাধ্যমে বিচার চাই। এতে আসামীগণ আমাকে ১লাখ টাকা দিতে চায়। আমি রাজি হই নাই। স্থনীয় মুরব্বিরা বলে পৌর নির্বাচন শেষ হলে বসে বিষয়টি মিমাংশা করে দিবে। নির্বাচন শেষ হতেই আসামীরা ১০ লাখ টাকা চাদার ঘটনা সাজিয়ে থানায় জিডি করে। মুরব্বিদের দিকে তাকিয়ে আমার সময় চলে যায়। তাই ঘটনার আড়াই মাস পরে আদালতে মামলা করি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আমার দীর্ঘ ওকালতি জীবনে এ ধরনের মামলা আর শুনিনি। আমার ধারণা দেশে এ ধরনের মামলা এটাই প্রথম। আমি আদালতে মামলা উপস্থপন করলে বিচারকও বলেন উকিল সাহেব এ আইনের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেন। আমি দন্ড বিধির ২৯৫(ক) ও ২৯৭ ধারার ব্যাখ্যা বিচারককে বুঝিয়েছি তাই আদালত বাদীর আর্জি এফআইআর হিসেবে গণ্য করতে পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ প্রদান করেছে।