নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে মাঠে ঢুঁকে মাশরাফির বুকে ঠাঁই পাওয়া সেই ভক্ত ও তার বন্ধুরা মুক্তি পেয়েছেন। অসৎ কোনো উদ্দেশ্যের প্রমাণ না পাওয়ায় প্রায় ২৪ ঘণ্টা থানায় আটক থাকার পর রোববার রাত ৯টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছে মিরপুর থানা সূত্র।  

 
1475434882ছাড়া পেয়েই ভুল স্বীকার করেছেন মাশরাফির ভক্ত মেহেদী হাসান সৈকত। সেই সঙ্গে এ ধরনের ভুল অন্য কাউকে না করার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া দুঃখ প্রকাশ করেছেন নিজের ভুলের জন্য তিন বন্ধু আটক হওয়ায়। রবিবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে নিজের এই অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।
 
ওই স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তুজা, আরাফাত সানি, বিসিবি, মিরপুর মডেল থানার পুলিশ, মিডিয়াকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মেহেদী।
 
রাত ১১টার প্রথম স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সুস্থ এবং নিরাপদে বাসায় ফিরে আসতে পারছি। আমাকে বাসায় ফিরে আসতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাশরাফি ভাই, আরাফাত সানি ভাই, বিসিবি, মিরপুর মডেল থানা, সাভার মডেল থানা, ডিএসইউ গ্রুপসহ আরও অনেক গ্রুপ, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ফেসবুক ফ্রেন্ডস, আরও যারা ফেসবুক ইউজার আছেন, যারা বিভিন্নভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন, তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা আমি।’
 
এরপর রাত ১২টার দিকে দ্বিতীয় স্যাটাস মেহেদী। সেখানে তিনি তার সঙ্গে আটক হওয়া তিন বন্ধু-মারুফ, রাফি ও আবিরের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে লেখেন, ‘সরি ব্রাদার্স… আমার জন্য তোরা আমার সাথে সাথেও
 
 
থানায় আটক ছিলি। তোদের না বলেই আমি মাঠে চলে গিয়াছিলাম। আমার জন্য অনেক কষ্ট করলি তোরা। আমাকে মাফ করে দে প্লিজ।’
 
এরপর রাত একটার দিকে আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমি জানি আমার গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে গিয়ে আমার বস মাশরাফি ভাইকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরায় মাঠের আইন ভঙ্গ হয়েছে। আর এই ঘটনাটি আমার অতিরিক্ত আবেগবশত ঘটেছে। আমার এই কাজটা করার পর যে বিসিবি আর পুলিশ ভাইদের এমন চরম ভোগান্তি হবে, তা আমার জানা ছিলো না। আমি বিসিবি আর পুলিশ ভাইদের আছে অনেক দুঃখিত। আমার জন্য আপনাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। তারা দিনরাত কষ্ট করার পর, আমাকে থানা থেকে বের করতে সাহায্য করেছেন। আমি শুনেছি যে, আমার এই ঘটনার জন্য মাঠের মধ্যে থাকা কয়েকজন পুলিশ বরখাস্ত হয়েছেন।
 
তিনি আরো লেখেন, আমার গ্যালারির সামনের পুলিশ ভাইরা সারাক্ষণ খুবই সতর্ক ছিলেন, আমি সারাক্ষণই তাদের ফলো করতে ছিলাম। আর একজন পুলিশ ভাই যখন অন্য দিকে তাকায়, ঠিক তখনই আমি গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে এক দৌড়ে মাঠে চলে যাই। আমার এই অবেগবশত ভুলের জন্য বরখাস্ত হওয়া পুলিশ ভাইদের আবার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি। মিরপুর মডেল থানার সকল পুলিশ ভাইরা খুবই হেল্পফুল ছিলেন। তারা আমাকে আর আমার সাথে আটক হওয়া আমার তিন বন্ধুদের কোনওভাবেই আঘাত করেননি। আমি তাদের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। তাছাড়া মিডিয়া ভাইরা আমাকে আর আমার তিন বন্ধুকে থানা থেকে বের হতে খুবই সাহায্য করেছেন। মিডিয়া ভাইদের অনেক ধন্যবাদ। আমার মতো এমন ভুল আর কেউ করবেন না প্লিজ। একটু আবেগী হওয়ার কারণেই আমার দ্বারা এই ভুলটি হয়েছে।’
 
উল্লেখ্য, গতপরশু মিরপুর শেরে- বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ  ওয়ানডে ম্যাচ চলাকালীন মাঠে প্রবেশ করে মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরার অপরাধে আটক হয় মেহেদীসহ তার তিন বন্ধুকে। জানা গেছে একটি শর্ত নিয়ে থানা থেকে তাদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। রোবাবার রাত পৌনে নয়টার মিরপুর মডেল থানা থেকে ছাড়া পান তারা। মুচলেকার বিনিময়ে এই চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাহাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ কখনও না করে তারা।
 
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভূঁইয়া মাহবুব হাসান এই খবরটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, মুচলেকার বিনিময়ে ওদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ কখনও করবে না বলে জানিয়েছে তারা।
 
এর আগে গতকাল শনিবার রাতে খেলাশেষে সংবাদ সম্মেলনে মাঠে ঢুকে পড়া ছেলেটির যেন কিছু না হয় সে অনুরোধ জানান মাশরাফি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এ ধরণের ঘটনা ঘটে, হয়তো আমাদের দেশে প্রথম বা আমার সঙ্গে প্রথম। ও যখন এসে বলেছে, আমি আপনার ফ্যান, তখন আমি এটা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি। আর এ ধরণের ঘটনা ঘটেই। আশা করছি ওর কোনও সমস্যা হবে না।’
 
শনিবার রাতে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান তৃতীয় একদিনের ম্যাচ চলাকালে হঠাৎ করেই মাঠে ঢুকে মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরে মেহেদী হাসান সৈকত নামের এক যুবক। মেহেদী জানায় সে মাশরাফির ভক্ত। এরপর তাকেসহ তার তিনি বন্ধু আহমেদ মারুফ, আয়মান আসিফ রাফি ও আবির হোসেনকে খেলা শেষে মিরপুর মডেল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here