মোনাসিফ ফরাজী সজীব, মাদারীপুর প্রতিনিধি :: মাদারীপুর শহরের মধ্যখাগদি এলাকায় সালিস মীমাংসার নামে এক কিশোরীকে জুতা পেটা করার অভিযোগ উঠেছে এক পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি মঙ্গলবার বিকালে ঘটলেও বিষয়টি বুধবার জানাজানি হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের পাশাপাশি চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে শহরের মধ্যখাগদি এলাকার এক কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় একই এলাকার কুদ্দুস শরীফের ছেলে হাসান শরীফ। এর পরে মেয়েটিকে তামান্না নামে এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দেয় হাসান। বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবার জানতে পেরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগছাড়ার করম বাজার থেকে গত শুক্রবার মেয়েটিকে উদ্ধার করে।
পরে কিশোরীর পরিবার স্থানীয়দের জানালে মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি নিয়ে সালিস মীমাংসায় বসে তারা। সালিসে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর পৌরসভার এক কাউন্সিলর, এক আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক এক কাউন্সিলর স্থানীয় প্রভাবশালীসহ শতাধিক লোক। সালিসে তারা ওই কিশোরীকে দোষি সাব্যস্ত করে ১০ ঘা জুতাপেটার নির্দেশ দেয়। একই সাথে হাসান শরীফকে ১০হাজার টাকা জরিমানা এবং ১০ ঘা জুতাপেটা প্রদানের নির্দেশ দেয়।
নির্দেশ পেয়ে সালিসে উপস্থিত আকলিমা বেগম নামে এক নারী কিশোরীকে জুতাপেটা করে। এ ঘটনার পর থেকে নির্যাতিত ওই কিশোরীর পরিবার নিরাপত্তাহীন এবং লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না।
লাঞ্ছিতা ওই কিশোরীর ভাই জসিম ফকির বলেন, ‘আমার বোনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় হাসান। এরপর আমরা বোনকে উদ্ধার করি। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার নামে আমার বোনকে জুতাপেটা করেছে।’
লাঞ্ছিতা ওই কিশোরী বলেন, ‘আমরা কোন দেশে বসবাস করি। আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে ওরা। এর বিচার তো পাইনি; উল্টো সালিসের নামে আমাকে জুতা পেটা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’
লাঞ্ছিতা কিশোরীর ফুফু আকিমন বেগম বলেন, ‘আমার ভাই গরীব মানুষ, ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। আমরা গরীব বলে আমাদের সাথে ওরা অবিচার করেছে। আমরা ওদের বিচার চাই।’ সালিসদার ও আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, ‘মেয়ের চরিত্র খারাপ। সালিসে দোষি প্রমাণিত হওয়ায় আমরা জুতাপেটা করেছি।’
এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিফ করেননি। তবে স্থানীয় সালিসদার আকলিমা বেগম বলেন, ‘সালিসে সিদ্ধান্ত হয় জুতাপেটা করার। সালিসীরা জুতাপেটার নির্দেশ দিলে আমি নির্দেশ পালন করেছি। আমি জোরে জোরে না পিটিয়ে আস্তে আস্তে পিটিয়েছি। আমি কাউন্সিলর ও সালিসদারদের নির্দেশ পালন করেছি।’
মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ বলেন, এ ধরণের ঘটনা সালিসযোগ্য নয়। এরপর সালিসে জুটার পেতার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। যদি ওই কিশোরীর পরিবার থেকে অভিযোগ দেয়া হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে অবহিত করেছি। দোষিদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। এ ধরণের ঘটনা সালিস মীমাংসা যোগ্য নয়। সালিস মীমাংসার নামে যারা কিশোরীকে জুতা পেতা করেছে; তারা গর্হিত অন্যায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’