হিলি : মাদক দ্রব্যের কড়াল গ্রাসে আক্রান্ত হিলি সীমান্তের যুব সমাজ। প্রতিদিন সীমান্ত পেড়িয়ে আসছে কোটি কেটি টাকার মাদকের চালান। মাদকের সহজলভ্যতার কারনে মরণ নেশার ছোবলে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক যুবকের উজ্জল জীবন, ধ্বংস হচ্ছে অনেক পরিবার।
প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য ব্যবহারের দুলভ দৃশ্য দেশের হিলি সীমান্তের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। হিলি সীমান্ত শহর হওয়ার সুবাদে মাদকের সহজলভ্যতার কারনে এখানে প্রতিনিয়ত এ রকম দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। প্রকাশ্যে কিংবা একটু আড়ালে মাদক গ্রহন করে ধ্বংশের দিকে ধাবিত হচ্ছে যুব সমাজ। এতে অনেক পরিবার নিঃশেষ হয়েছে এবং হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার তাদের মাদকাসক্ত সনত্মানকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ পাঠিয়েছে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে। এদের অনেকেই মাদকাসক্তের অন্ধকার জীবন থেকে ফিরে এসে হাতের কাছে সহজেই মাদক পেয়ে আবার ফিরে গেছে অন্ধকার সেই জগতে।
হিলি শহরের চুড়িপট্রি, দক্ষিনপাড়া, মাঠপাড়া, রাজধানীমোড়, প্রফেসরপাড়া, মাস্টারপাড়া, রেল স্টেশন পট্রি, সিপিরোড, চারমাথা মোড়, ধরন্দা, চন্ডিপুর, ডাঙ্গাপাড়া, জালালপুর, নওপাড়া, হাড়িপুকুর, সাতকুড়ি, মংলা, নওনাপাড়া, রায়ভাগ, নন্দিপুর, ঘাসুরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বেচা-কেনা হয় মাদকের। বিক্রেতারা নির্বিঘ্নে এসব এলাকায় মাদক বিক্রি করছেন। এসব এলাকায় প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার মাদক দ্রব্য খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় হয়ে থাকে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানায়, মাদকাসক্ত অনেক যুবক ভালো হওয়ার ইচ্ছা এবং উদ্যোগ নিলেও আবার মাদক জগতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছেন। তারা আরও জানায়, ভারত থেকে চোরাচালানীর মাধ্যেমে যখন দেশে মাদক চালান প্রবেশ করে তখন কতিপয় বিজিবি সদস্য অর্থের বিনিময়ে ওই সব চালান প্রবেশ করান। তারা মাদক চালান বন্ধের জন্য জোড়ালো উদ্যোগ নিতে তা হলে হয়তো মাদক প্রবেশ করতো না। বিজিবি মদকের চালান যে পরিমানের দলে তার দশগুন থাকে ধরা ছোয়ার বাইরে। প্রশাসন প্রকাশ্যে মাদক বেচা-কেনায় সহযোগতি না করে বরং বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহন করলেই তাদের মতো অনেক যুবক মাদকের এই অভিশপ্ত জগৎ হতে মুক্ত হতে পারতো। কেউ কেউ আবার মাদকের এই অভিশপ্ত জগতে আসার কাহিনী বর্ণনা করে এই অন্ধকার জীবনের করুন পরিনতির কথা ব্যক্ত করেন। তবে তারা সুস্থ্য জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রকাশ্যে মাদক বেচা-কেনার এসব জায়গায় মরণনেশা ব্যবহারের সুবিধার্থে কয়েকটি বেসরকারী সংস্থা প্রতিদিন বিনামূল্যে বিতরন করছেন ইনজেকশনের সিরিঞ্জ। বিনামুল্যে এই সিরিঞ্জ বিতরনের মাধ্যমে মাদক ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে । তবে ওই বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, মাদক নিয়ন্ত্রন তাদের কাজ নয়। এইচআইভি এইডস প্রতিরোধেই তারা এই সিরিঞ্জ বিনামুল্যে বিতরন করছেন মাদকাসক্ত যুবকদের কাছে। তারা জানান, শুধুমাত্র একটি স্থানেই তারা প্রতিদিন ৫০ থেকে ১শ মাদক গ্রহিতাকে এই সিরিঞ্জ দিয়ে থাকেন।
মাদকাসক্তের মরণ ছোবল যুব সমাজকে ধ্বংশের দিকে ধাবিত করছে। নষ্ঠ করে ফেলছে অনেক মুল্যবান জীবন, ধ্বংশ হচ্ছে অনেক পরিবার। তাই প্রশাসনিক কড়াকড়ি ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রন করে যুব সমাজকে এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের সকলে এগিয়ে আসার আহবান জানান হিলিবাসী।
গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন/