মাদকের বিস্তার বাড়ছে...জহিরুল ইসলাম শিবলু লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: মাদকের শহরে পরিণত হয়েছে লক্ষ্মীপুর। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মাদকের বিস্তার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, আফজালুর রহমান ও ১কনষ্টেবল গত ৫মাস থেকে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় কান্ট্রি স্পিরিটের সপে বসে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মদসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করেন কথিত ৩সোর্সের মাধ্যমে। প্রতিদিন এ মদের কেন্টিনের ভিতরে ও বাইরে ৫০ গ্যালন মদ বিক্রি করেন আফজালুর রহমান। উক্ত দুই অফিসার জেলার বিভিন্ন স্পট থেকে সোর্সের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০হাজার টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি হাজিলের বাপের গোজার খোরশেদ নামে এক মাদক ব্যবসায়ী সময়মত টাকা দিতে না পারায় তাকে ধরে এনে নগদ ১৫ হাজার টাকা ২টি মোবাইল সেট রেখে দিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করেন। উক্ত কান্ট্রি স্পিরিটের দোকানের মালিক ছিল সামছুল হক পাটওয়ারী ওরপে সামু পাটওয়ারী। এ কর্মকর্তাদের অত্যাচারে তারা দোকান বিক্রি করেন থানা রোডের কিশোর নামে এক লোকের কাছে। কিশোরের কাছে দোকান বিক্রি করার পর থেকে পারমিট না থাকার অজুহাত দেখিয়ে এখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ও আফজালুর রহমান গত ৫মাস থেকে এ মদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের কর্মকর্তা আফজালুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা দেখাশুনা করছি যাতে কেউ মদ খেয়ে কোন মারপিট বা গোলযোগ না করে। তাদের মাধ্যমে মাদকের বিস্তার হচ্ছে এমন অভিযোগের কথা তিনি অস্বীকার করেন।

লক্ষ্মীপুরের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে মাদক দ্রব্য বিক্রি হয়না। হাত বাড়ালে চলে আসে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাজাঁ।

সদর উপজেলার কলেজিয়েট হাই স্কুল ও কলেজ আঙ্গিনা, জেবি রোড, শাখারি পাড়া, সমসেরাবাদ, ঝুমুর সিনেমা হল সংলগ্ন, মেঘনা রোড, বাগবাড়ী, পৌর শিশু পার্ক, কালু হাজি রোড, বাঞ্চানগর এলাকার মেঘনা রোড ও নিখিলের বাড়ীর রাস্তা, সাহাপুর, বেড়ির মাথা, কোর্ট আঙ্গিনা, স্টেডিয়াম এলাকা, উত্তর ও দক্ষিন তেমুহনী বাস স্ট্যান্ড, বিসিক মাঠ, নতুন বাস স্ট্যান্ড এলাকাসহ সব খানে চলছে মাদক দ্রব্য বিক্রয় ও মাদক সেবীদের জমজমাট আড্ডা।

পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে আন্তরিক ও ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান থাকা সত্বেও গ্রেফতারের কয়েকদিনের মাথায় আইনি দূর্বলতার কারনে জামিনে বের হয়ে এসে আবার এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে অভিযোগ রয়েছে জেলা মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চত্র চায়ায় মাদক দ্রব্য বিক্রয়কারীরা বেপোরোয়া হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়াও জেলার কতিপয় রাজনৈতিক নেতাদের চত্র চায়ায় চলছে মাদক ব্যবসা। স্কুল কলেজগামী কোমলমতি ছাত্ররা অসৎ সঙ্গে পড়ে এ ভয়াবহ মাদকের নীল ছোবলে দিন দিন ধ্বংসের পথে পা বাড়াচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের অবাধ বিচরনে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। হতাশ অভিভাবক, তাদের স্কুল ও কলেজ পড়-য়া সন্তানদের নিয়ে।

সরেজমিনে জানাযায়, জেলার ৫টি উপজেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসা। এই মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সম্পর্কে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারনে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করছেনা।

পুলিশর একটি সূত্র জানায়, শহরের মসজিদ বাড়ির হাসু, বাগবাড়ির শাহীন, শাঁখারী পাড়ার সুমি, পৌর আইডিয়াল কলেজ এলাকায় মৃত আবদুল্যার ছেলে বিল্লু ও তার মা, হ্যাপী রোডের সওদাগর বাড়ীর রিপন, ফারভেজ, রুবেল ও নুজরুল ইসলাম, জেবি রোডের আরজ, ব্যাপারী বাড়ীর জসিম, গাইন বাড়ীর মঞ্জু (বাংলা মদ মঞ্জু) সাহাপুর এলাকার হারুন, জসিম, রাজিবপুর এলাকায় মানিক ও বাসু, আদিলপুর এলাকায় জামাল, কালু হাজি রোডে রনি, আলমগীর, রাকিব, অপু, মানিক, আরিফ, রাশেদ, রেহান উদ্দিন ভূঁঞাসড়কে গাজার পাইকারী ব্যবসায়ী দেলু, ফায়ার সার্ভিসের পাশে কবির, মজুপুর রিকসা ড্রাইভার বেলাল, বাঞ্চানগর ২নং ওয়ার্ডের নিখিলের বাড়ীর রাস্তায় মাদক বিক্রি করেন সাহাপুর এলাকার জাকিরের মা জাহেরা ও গাজা খালেকের স্ত্রী, কলেজ রোডে মোহাম্মদ আলী, আনু বাড়ী মসজিদ এলাকায় বাদশা মিয়া, ডায়বেটিস হসপিটালের পাশে মো. স্বপন, টুকা মিয়া ব্রিজের পাশে মো. মানিক ।

সদর উপজেলার রসুলগঞ্জ এলাকার আনারুল হকের ছেলে টেক্টর খোকন, কালা বাচ্চু, ফুলির রাস্তা এলাকায় সাদ্দাম হোসেন, সাদ্দার পোলের গোড়ার আরজু, গোসের পুকুর পাড়ের কালা জাহাঙ্গীর, রানীর হাটের আবুল কালামের ছেলে বাহার, ভবানীগঞ্জের কামাল, চৌধুরী কাছারী এলাকায় দেলু, পালের হাট এলাকায় নানা মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও বিভিন্ন স্থানে মাদকের আসর বসায় দক্ষিণ হামছাদী গ্রামের নজরুল ইসলাম জসিম, গোপিনাথপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে ভূট্টো ও আবদুল হান্নান, কাদিরের গোঁজা এলাকাকায় কামাল, হাজিরপাড়া ইউনিয়নের বড়বল্লভপুর গ্রামে খোরশেদ আলম সুমন, পাখি সুমন, মুরাদ, বনমালি, মনির, হাজিরপাড়ায় জাহাঙ্গীর, চন্দ্রগঞ্জের বসুদোহিতা গ্রামে পাটোয়ারী বাড়ির সাগর, চরচামিতায় রিয়াজ, মাটির ব্যবসায়ী সাইদ মেম্বারের ছেলে সুমন, বাজার ও বাঁধের গোড়ায় মিন্টু, আলাইয়ারপুরের সাজু, সেলিম, লতিফপুরে হারুন, বিসমিল্লাহ রোডে রাসেল, আক্তার, দেওপাড়ায় মোবারক, নিজাম ডাকাত, বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নে বেলায়েত

রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া ও ফতেহপুরে সাকায়েতের ছেলে মোরশেদ, কালা হাজি বাড়ির বাবু, কমরদিয়ার আবুল কাশেমের ছেলে তফু, আবুল কাশেমের ছেলে রাশেদ মনু, সোনাপুর বাগের বাড়ির সোবহান, আবুল বাশারের ছেলে নুর হোসেন, কালি ডাঙ্গার বতু বিল্লাল, বাসষ্ট্যান্ডে খোকা মিয়ার ছেলে শাকিল, বাঁশঘর গড়ই মামুন ও আমির হোসেনের ছেলে লাভলু, আগুনখিল ও রতনপুরে ইবায়া মনা, ডোমনদি এলাকায় ইয়াবা হারুন, আলীপুরে সেকান্তরের ছেলে রহিম, সিরাজের ছেলে ফয়েজ, ইছাপুরে মৃত মোবরক হাজীর ছেলে সুজন, হাজী ইয়াবা হোসেন, লিটন হাজারী, নয়নপুরের মৃত মন্নান মোস্তানের ছেলে আহছান উল্যা, শেখপুরার মৃত ছেরাগ আলীর ছেলে গাঁজা জামাল, কছুয়া বাজারে বাচ্ছু মিয়ার ছেলে বাবলু, হোসেনের ছেলে ফয়েজ, কাটাখালির জাহাঙ্গিরের ছেলে মিনহাজ, সাধের খিলের শাহাজানের ছেলে ফিরোজ এরা দীর্ঘদিন থেকে মাদক ব্যবসা করে আসছে।

রায়পুর উপজেলার মহিলা কলেজ সংলগ্ন আনোয়ার ও জুয়েল, পীর ফয়েজ উল্যা সড়কে সর্দার বাড়ীর মিষ্টার ও রহিম, মিরগঞ্জ রোডে মিরাজ, ডাইল হারুন, লেংড়া বাজার এলাকায় সুমন, সোহেল, বাশুরী সিনেমাহল এলাকায় আক্তার কসাই, বামনী ভূঁঞার হাট এলাকায় মিঠু, চৌধুরী বাজার এলাকায় সোহেল।

রামগতি ও কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজারে আরিফ হোসেন, বুড়াকর্তার আশ্রম এলাকা আবদুল হান্নান, অনিল চন্দ্র, লঞ্চঘাট এলাকায় শামীম হোসেন ওরপে সুমন, হাজিরহাট ও করইতলা এলাকায় আবু মেম্বারের ছেলে সবুজ, আলেকজান্ডার বাজারের ছিদ্দিকুর রহমান ওরপে হাফেজ এসব এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ীদের জমজমাট বেচা-বিক্রি চলে। ।

গত ১ বছরে পুলিশ ৩৫০জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে এবং ৫১.৭০০ কেজি গাঁজা, ১৩১৭৫ পিচ ইয়াবা, ৭৮২ বোতল বিয়ার ও ক্যান, ১০৬ বোতল ফেনসিডিল এবং আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ২৯৩ টি মামলা দায়ের করেন।

লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানান, মাদকের ব্যাপারে আমাদের সকল থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমরা মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স। কোথাও মাদকের সন্ধান পেলে সাথে সাথে অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করার জন্য বলা হয়েছে। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে, থাকবে। এ বিষয়ে পুলিশের কোন গাফিলতি নেই।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here