কিষেণজির মৃত্যুর প্রতিবাদে ডাকা দুদিনের ভারত বনধ বা হরতালে মাওবাদী প্রভাবিত ৬০ জেলায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। হরতালের দ্বিতীয় দিনে বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কয়েক জায়গায় হামলা চালায় মাওবাদীরা। ঝাড়খণ্ড-বিহারের সীমানায় গয়া থেকে প্রায় সত্তর কিলোমিটার দূরে কোবরা ক্যাম্পে হামলা চালায় মাওবাদীরা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার টিলভিটা স্টেশনের প্যানেল বোর্ডে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধানবাদ শাখার মাতারি ও গোমোর মাঝখানে রেলওয়ে ট্র্যাক উড়িয়ে দিয়েছে মাওবাদীরা। ঝাড়খণ্ডের দুমকায় কেন্দুয়া অরণ্যের কাছে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায়।
বোকারোর গোমিয়া এবং ডুমরির মাঝে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেললাইন উড়িয়ে দেয়। লাতেহার জেলার হেহেগারা এবং ছিপোদোহার স্টেশনের মাঝেও রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। ওড়িশার মালকানগিরিতে মাওবাদী হামলায় একটি স্কুলবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।৪৮ ঘণ্টা হরতালের মধ্যেই মাওবাদীদের হামলায় ঝাড়খন্ডে ৮নিরাপত্তারক্ষীসহ ১৪জন নিহত হয়।
কিষেণজির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশজুড়ে ডাকা মাওবাদীদের বনধের  দ্বিতীয় দিনে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল এলাকায় ভালই প্রভাব পড়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, বাঁকুড়ার সারেঙ্গা, রানিবাঁধ, বারিকুল, পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বলরামপুর, বড়াবাজার, অযোধ্যা পাহাড় এবং ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বেশ কিছু এলাকায় বনধের অনেকটাই প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। তবে এই তিন জেলার অন্যান্য অংশে জনজীবন ছিল প্রায়স্বাভাবিক। বনধ ঘিরে সতর্ক ছিল প্রশাসন।

হরতালের মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনিতে জনসভা করে তৃণমূল কংগ্রেস।
যুব তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এই সভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় মাওবাদী ও সিপিএমের হামলার কথা  বলেন।। কিষেণজীর মৃত্যুর প্রতিবাদে মাওবাদীদের ডাকা বনধের দ্বিতীয় দিনে এই সভাকে ঘিরে নিরাপত্তার কড়া ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর তথা মাও-বিশেষ্যজ্ঞ এম কে নারায়ণন বলেছেন,কিষেণজির মৃত্যুতে মাওবাদী আন্দোলন ধাক্কা খেলেও সেই আন্দোলন থামে নি এখনও চলেছে । হত্যায় মাওবাদী আন্দোলন  সমস্যার সমাধান হবেনা তিনি বলে মত প্রকাশ করেন ।ভারত সরকারের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন একটি অনুষ্ঠানে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।

এদিকে  পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা সীমানার নয়াগ্রাম-গোপীবল্লভপুরের জঙ্গল এলাকায় ফের অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী। মাওবাদী নেত্রী সুচিত্রা মাহাতোর খোঁজেই এই অভিযান বলে অনুমান। গত চব্বিশে নভেম্বর  কিষেণজির মৃত্যুর পর বুড়িশোল থেকে পালিয়ে যায় সুচিত্রা মাহাতো। শেষ তাকে দেখা গিয়েছিল চিল্কি গ্রামে। সেখান থেকে সে চলে যায় রাখালমাড়ার জঙ্গলে। রাখালমাড়ার জঙ্গল ঝাড়খণ্ড সীমানার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে। অনুমান, ঝাড়খণ্ডে গিয়ে চিকিত্‍সা করিয়েছিল সুচিত্রা মাহাতো। যৌথবাহিনীর বলছে, এখন রঞ্জন মুন্ডা স্কোয়াডের সঙ্গে রয়েছে সুচিত্রা। সপ্তাহের শুরুতেই রঞ্জন মুন্ডার খোঁজে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশার সীমানায় গঙ্গাশোলের জঙ্গলে অভিযান চালিয়েছিল যৌথবাহিনী।

২-৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পিএলজি সপ্তাহ পালন করছে মাওবাদীরা।

উল্লেখ্য, ভারতের মাওবাদী গেরিলারা চীনের বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দরিদ্র ও শ্রমিকদের ভূমি অধিকার আদায়ে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শফিকুল ইসলাম/কলকাতা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here