নির্বাচনে উন্মুখ বিএনপিরবীন্দ্র নাথ পাল ::

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর খুব দ্রুতই সংসদভেঁঙ্গে দিয়ে আরেকটি নির্বাচনের আশা করেছিলেন বিএনপি তথা ২০দলীয় জোট। ২০দলীয় জোটের আশার সে পথ মারায়নি মহাজোট। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে জনমনে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, তাতে ২০ দলীয় জোটকে আস্থায় নিতে পারেনি সাধারন মানুষ।

জনমনে সেই অনাস্থাই মহাজোটকে নির্বিঘ্নে প্রায় বিনা চ্যালেঞ্জে এক বৎসর ক্ষমতায় টিকে রেখেছে। দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ২০দলীয় জোট ভুল করেছিল, না সঠিক করেছিল তা ভবিষ্যতই বলে দিবে।

তবে বর্তমান রাজনৈতিক পেক্ষাপটে ২০ দলীয় জোটের নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে তেমন সুখকর কোন সুসংবাদ নেই। বিএনপি’র রাজনীতি যদি জামায়াত নির্ভর না হতো তবে নির্বাচনের বর্জনের এতবড় একটি সিদ্ধান্ত বিএনপি নিতো কি না সন্দেহ।

বিগত দিনে বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে ১৫ দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ২০ দলীয় জোটের ধারনা ছিল মহাজোট ও বেশিদিন ক্ষমতায় টিকবে না।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একদলীয় নির্বাচন। সে নির্বাচনে  বিএনপিকে নির্বাচনে না যেতে জামায়াত কতটুকু প্রভাব বিস্তার করেছিল-সেটা সময়েই বলে দিবে। তবে বিএনপি যদি মহাজোটের একতরফা নির্বাচনে অংশ নিতো, তাহলে মহাজোটের পক্ষে এত সহজেই নির্বাচনের বৈতরনী পাড় হবার সম্ভাবনা ছিল না।

নির্বাচন বর্জনের ফলে সংসদে নেই বিএনপি। রাজপথেও থাকতে পারছে না সরকারের শ্যান দৃষ্টির কারনে। হামলা মামলায় বিপর্যস্ত বিএনপি’র নেতা কর্মীরা হয় আদালত পাড়ায়, না হয় পুলিশের ধাওয়ায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

আসলে ২০ দলীয় জোট বলতে মুলত বিএনপি ও জামায়াতই মুখ্য দল। বাকীগুলো প্যাড সর্বস্ব । এদের বেশীর ভা্‌গই জেলা উপজেলায় শাখা নেই। নেই একনিষ্ঠ কর্মী। এমন ২০ দল নিয়ে বর্তমান মহাজোটকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে বড় ধরনের ফায়দা লুটতে পারবে বলে মনে হয়না।

জেলা উপজেলায় বিএনপি’র নেতা কর্মীরা যেমন মামলায় জর্জরিত, তেমনি জামায়াত পালিয়ে বেড়াচ্ছে একস্থান থেকে অন্যস্থানে। মাঝে মাঝে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসুচীতে তাদের দেখা গেলেও তারপর অধিকাংশের আর পাত্তা মেলে না।

এমন জটিল সমিকরনের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিএনপি দলীয় জোট নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন জোরদার করার কর্মসুচী ঘোষনা করেছে। নির্বাচনে আসার জন্য মহাজোট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ সহ বেশ কিছু পদ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। যে কারনেই হোক মহাজোটের সে আশ্বাস ২০ দলীয় জোট আস্থায় নিতে পারেনি।

সুযোগ বুঝে জামায়াত বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পেরেছিল তাদের স্বার্থে। কারন তাদের দলীয় বড় বড় নেতা তখন মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের সম্নুখিন। যদি বিএনপি নির্বাচনে না যায়, তবে দলীয় নেতাদের মুক্ত করতে আন্দোলনে বিএনপিকে পাশে পাবে। জোরদার আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটিয়ে দলীয় নেতাদের মুক্ত করতে পারবে। এমন ধারনাতেই বিএনপিকে কৌশলে নির্বাচন থেকে দুরে সরিয়ে

ফায়দা হাসিল করবে জামায়াত। কিন্তু  বিগত ১১ মাসেও বিএনপি ও তার মিত্রদের সে আশা পুরন না হওয়ায় এখন তারা যেন তেন একটি নির্বাচন দিলেই তারা সে নির্বাচনে অংশ নিবে। বিএনপি এখন আর তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। তারা একটি নির্বাচন চায়। সেজন্যই মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে ৫ জানুয়ারির একদলীয় নির্বাচনের ইতিহাস তুলে ধরে একটি নির্বাচন চায় যাতে সব দলের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করবে।

বিএনপি জামায়াতের নির্বাচন বর্জনের রাজনীতি বুঝে নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের শাস্তির ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজী নয়। সেজন্যই গোলাম আযমের ছেলে তার পিতার মৃত্যুর পর বিএনপি’র উপর প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সামনে এমন দিন আসতে পারে জামায়াত অন্যান্য ইসলামী দল নিয়ে আলাদা নির্বাচনে অংশ নিলে আর্শ্চয্য হবার কিছুই থাকবে না। কারন রাজনীতিতে আজ যে মিত্র,কাল সে শত্রু এবং শেষ কথা বলে কিছু নেই। দু-দুবার আন্দোলনের হুমকী দিয়েও বিএনপি কর্মীদের মাঠে নামাতে পারেনি। এতাবস্থায় মহাজোটের অধীনে নির্বাচন হলেও সে নির্বাচনে যাবার জন্য তারা উন্মুখ হয়ে আছেন-এখন এটাই সত্য।

 

লেখক : বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, মোবা: ০১৭১৩৮১৯২৯৪ ইমেইল: azkerbangladesh@gmail.com

২৯/১১/১৪

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here