ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়ছেল ৪৯ জন সংসদ সদস্য।

দলীয়কোন্দল, দুর্নীতির অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের অবহেলা এবং অসুস্থতাসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন বলে জানা গেছে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ আসনে আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। যেখানে ২০০৮ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৪৯ জনই বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রভাবশালী ছয় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী।

নবম জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভার যারা মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন তারা হলেন- পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা ফারুক মোহাম্মদ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার। এছাড়া পদ্মাসেতু দুর্নীতি নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনও এবার মনোনয়ন পাননি।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি নিজেই দলীয় মনোনয়ন চাননি বলে জানা যায়।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকের বিরুদ্ধে রয়েছে দলীয় কোন্দল, তৃনমূল নেতা-কর্মীদের অবহেলা করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ। ফলে তিনি ইমেজ সঙ্কটে আছেন বলেই তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি- এমনটাই বলছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাছাড়া নেত্রীর সাথে আলোচনা করিই মনোনয়ন চাইনি।

সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এলাকায় রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এর মধ্যে স্বজনপ্রীতি, জেলা কমিটিতে আত্মীয়দের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেয়াসহ এলাকার তৃণমূল নেতাদের অবমূল্যায়ন ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার মতো অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে জানতে শনিবার সন্ধ্যায় ফোন করা হলে লতিফ বিশ্বাস বলেন, আমি এখন গণভবনে আছি। আপনার সাথে পরে কথা বলবো।

একে খন্দকার অসুস্থার কারণে মনোনয়ন চাননি বলে জানা গেছে।

আলোচিতদের মধ্যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে পদ্মাসেতু কেলেঙ্কারি ও জনবিচ্ছিন্ন থাকার অভিযোগ।

বিতর্কিত এমপি গিয়াসউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে রয়েছে নিজ দলের নেতাকর্মীদের বাইরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে বলয় গড়ে তোলার অভিযোগ।

গোলাম মওলা রনির বিরুদ্ধে রয়েছে নিজ দলের সমালোচনা করা ও এলাকায় চরমপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ। এছাড়াও সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগতো রয়েছেই। তিনি পাবেন নিশ্চিত হয়েই মনোনয়নপত্র তোলেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাভারের তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের বিরুদ্ধে রয়েছে এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অভিযোগ। এছাড়াও সাভারের রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির মূল হোতা সোহেল রানা সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে ব্যাপক বিতর্কিত তিনি। তার স্থলে সেই দুর্ঘটনার সময় ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে গণমাধ্যমে সাড়া ফেলা এনাম মেডিকেলের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমান।

চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে নানা কারণে বেশ আলোচিত ছিলেন প্রায় পাঁচ বছর ধরেই। সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন আচরণ, এলাকায় নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলা, তৃণমূল নেতাদের অবমূল্যায়নের মতো অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নতুনদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, সাবেক ক্রিকেটার নাইমুর রহমান দূর্জয়, ফুটবলার আরিফ খান জয় ও বিতর্কিত শামীম ওসমান এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

৪৯ সংসদদের মধ্যে যারা বাদ পড়লেন: রংপুর-৬ আবুল কালাম আজাদ, ঠাকুরগাঁও-৩ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ মোহাম্মদ এনামুল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ জিয়াউর রহমান, রাজশাহী-৩ মেরাজউদ্দিন মোল্লা, নাটোর-২ আহাদ আলী সরকার, সিরাজগঞ্জ-১ তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-৪ শফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-৫ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সিরাজগঞ্জ-৬ চয়ন ইসলাম, পাবনা-২ এ কে খন্দকার, মেহেরপুর-১ জয়নাল আবেদীন, কুষ্টিয়া-৩ কে এইচ রশিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া-৪ সুলতানা তরুন, ঝিনাইদহ-৪ আবদুল মান্নান, যশোর-২ মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, যশোর-৩ খালেদুর রহমান টিটো, যশোর-৬ শেখ আবদুল ওহাব, নড়াইল-২ এস কে আবু বাকের, বাগেরহাট-৩ বেগম হাবিবুন্নাহার, খুলনা-১ ননী গোপাল মুল, খুলনা-৪ মোল্লা জালালউদ্দিন, খুলনা-৬ সোহরাব আলী সানা, সাতক্ষীরা-১ শেখ মুজিবুর রহমান, পটুয়াখালী-৩ গোলাম মওলা রনি, বরিশাল-২ মনিরুল ইসলাম, পিরোজপুর-২ শাহ আলম, জামালপুর-৪ মুরাদ হাসান, ময়মনসিংহ-২ হায়াতুর রহমান খান, ময়মনসিংহ-১০ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, নেত্রকোনা-১ মোসতাক আহমেদ রুহী, নেত্রকোনা-২ আশরাফ আলী খান, নেত্রকোনা-৩ মঞ্জুর কাদের কোরাইশি, কিশোরগঞ্জ-২ এম এ মান্নান, মানিকগঞ্জ-১ এ বি এম আনোয়ারুল হক, মানিকগঞ্জ-২ এস এম আবদুল মান্নান, মুন্সিগঞ্জ-৩ এম ইদ্রিস আলী, ঢাকা-১৯ তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আবদুল্লাহ আল কায়সার, নারায়ণগঞ্জ-৪ সারাহ বেগম কবরী, ফরিদুপুর-৪ নীলুফার জাফর উল্লাহ, মাদারীপুর-৩ সৈয়দ আবুল হোসেন, সুনামগঞ্জ-৪ মতিউর রহমান, সিলেট-৫ হাফিজ আহমদ মজুমদার, হবিগঞ্জ-৪ এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, চাঁদপুর-২ রফিকুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাংসদ এ বি এম আবুল কাসেম।

নতুন মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘মনোনয়ন যখন পেয়েছি। নির্বাচনেও জয় লাভ করব। জয় লাভ করে জনগণের জন্য কাজ করব। এছাড়া আর কিছু বলার নেই। বাকিটুকু কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হবে।’

আরেকজন নতুন মনোনীত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আমি আগেও এমপি ছিলাম, মাঝখানে আমার স্ত্রী এমপি ছিল। আশা করি, আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করবো। এবং  এলাকাবাসীর উন্নয়নে কাজ করবো।

মনোনয়ন পেলেও সংশয়ের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস। তিনি বলেন, ‘মানুষ রাজনীতি করে দেশ ও মানুষের জন্য। তবে দেশ ও মানুষের কাজ করার সুযোগ পাব কি না জানি না। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছি। আশা করি, জয়লাভও করবো।’

আবুল হোসেন, মুরাদ জংদের মতো বিতর্কিত লোকদের মনোনয়ন না দিয়ে তরুণ ও ক্লিন ইমেজের লোকদের অগ্রাধিকার দেয়াকে অনেকে ইতিবাচক বলে মনে করলেও শামীম ওসমানের মতো বহু বিতর্কিত লোকদেরও মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here