স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদকের তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মালদ্বীপ যাবার আগেই পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে  একটি সূত্র জানিয়েছে । প্রধানমন্ত্রী এই পদত্যাগ পত্র গ্রহণ না করলেও সৈয়দ আশরাফ তার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অটল রয়েছেন এবং সরকার ও দলের সব ধরনের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছেন। সরকার পরিচালনা ও দলের নীতি নির্ধারণের মৌলিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে মতপার্থক্য দেখা দেয়ার কারণে সৈয়দ আশরাফ পদত্যাগ করেছেন বলে তার ঘনিষ্ট সূত্র উল্লেখ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের ইমেজ বিনষ্টকারী হিসাবে চিহ্নিত শামীম ওসমানকে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন দানের ব্যাপারে একেবারেই একমত ছিলেন না। তিনি এ নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করতে না দেয়ার ব্যাপারে কঠোর থাকায় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কর্তৃক সমালোচিত হয়েছেন। এরপর নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে দল ও সরকারের পক্ষ থেকে যে ভুমিকা নেয়া হয়েছে  এব্যাপারে তার মতপার্থক্য ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাহবুবুল আলম হানিফ এ ব্যাপারে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন।
জানা গেছে,  সৈয়দ আশরাফ তত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ সরকারের সাম্প্রতিক বেশ কিছু পদক্ষেপের সাথে একমত ছিলেন না। এসব কারণে তিনি বেশ কিছুদিন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে নিষ্ক্রীয় অবস্থায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে তিনি আবার ফিরে আসেন । কিন্তু সরকারের অবস্থানে কোন পরিবর্তন না হওয়ায় তিনি বিব্রত হয়ে পড়েন। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরও তাকে বাদ দিয়ে দলের হাইব্রিড নেতা হিসাবে পরিচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ দল ও সরকারের  মুখপাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দলের কোন কোন অখ্যাত নেতাকে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে তার সমালোচনা করতে দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে,  সৈয়দ আশরাফের পদত্যাগের ইস্যুটি সরকার কঠোরভাবে গোপন রাখতে চাইছে।  এ বিষয়ে কেউ জানতে চাইলে তা নিছক গুজব বলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের সাবেক প্রভাবশালি প্রেসিডিয়াম সদস্য নিশ্চিত করে বলেছেন, সৈয়দ আশরাফ পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি কোনভাবেই তা প্রত্যাহার করবেন না বলে তাকে জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পদত্যাগকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। বর্তমান সরকারের সাথে  এক এগারোর জরুরি সরকারের সামরিক নেতাদের সাথে সমঝোতা এবং ভারত ও পশ্চিমা ক্ষমতাকেন্দ্রের সাথে বুঝাপড়ার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ কারণে দল ক্ষমতায় আসার পর সৈয়দ আশরাফকে গুরুত্বপূর্ণ এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সরকারে তাকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকলে তিনি সরকারের মূল দায়িত্ব পালন করতেন এবং বিদেশি অতিথিদের সাথে আলোচনার কাজ সম্পাদন করতেন। মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে তাকে খুব বেশি তৎপর দেখা না গেলেও সৈয়দ আশরাফ একাধারে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ভারত ও চীনা লবির সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতেন।
একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সৈয়দ আশরাফের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হবার আগেই ক্ষমতা থেকে বিদায়ের লক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সৈয়দ আশরাফের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের ব্যাপারে অনমনীয় হলে বিষয়টি অনিষ্পন্ন হিসাবে ঝুলিয়ে রাখার নীতি নেবেন। এর আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ পদত্যাগ করার পর বিষয়টিকে একইভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল । তিনি আর অবশ্য এ দায়িত্বে ফিরে আসেননি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটিইমামও তার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে গিয়েছিলেন। পরে প্রধানমনত্রীর অনুরোধে শর্তসাপেক্ষে তিনি আবার পুরণো পদে ফিরে আসেন।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here