রাকিবুল হাসান,মনপুরা(ভোলা)প্রতিনিধি ::

মাশরুম চাষ করে অল্প বয়সেই সফলতা পেয়েছেন স্বামী হারা নারী জান্নাত বেগম ।প্রথমবারের মতো উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করেছেন তিনি।জান্নাত এর বাড়ী ভোলার মনপুরা উপজেলা হাজিরহাট ইউনিয়নে চরফয়েজদ্দিন গ্রামে । নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি অন্যদেরও আকৃষ্ট করছেন মাশরুম চাষের প্রতি।

সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে,পলিথিন দিয়ে বানানো একটি ঘরে সাদা পলিথিনের প্যাকেটগুলো একটার পাশে আরেকটা থরে থরে সাজানো। পলিথিন ফুঁড়ে বেরিয়েছে মাশরুম। মাশরুম পরিচর্যায় ব্যস্ত জান্নাত বেগম। এ সময় মাশরুম চাষে উৎসাহিত হওয়ার পেছনের গল্প শোনান অসহায় এই নারী ।

মাশরুম চাষী জান্নাত বেগম জানান,সাড়ে ৩ বছর আগে স্বামী মারা যান ঢাকায় বিদ্যুস্পট হয়ে।স্বামীর মৃত্যুর সময় রেখে যান দুই কন্যা সন্তান।স্বামী মারা যাওয়ার খুর দুচিন্তাই দিনানিপাত করছি।সংসারের খরচ ও মেয়েদের পড়াশোনার খরচ বহন করাটা তার জন্য অনেক কষ্টের ।এরপর মনপুরা উপজেলা যুব উন্নয়নে যোগাযোগ করি। তাদের মাধ্যমে সাভারে মাশরুম উন্নয়ন কেন্দ্রে
দুইবার প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর বাণিজ্যিকভাবে নিজের বাড়িতে মাশরুমের চাষ শুরু করেন তিনি।নিজের তীব্র ইচ্ছা বাবা মা আর পরিবারের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতার কারণেই কোনো ধরণের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।

শুরুতে ৩০টি স্পন(স্পন হচ্ছে মাশরুমের খড়ের ওপর জন্মানো ছত্রাক)দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করলেও বর্তমানে তাঁর ঘরে স্পন রয়েছে ১ হাজার। প্রতিটি স্পন তৈরিতে গড়ে ৩০ টাকা খরচ হয়েছে। মাশরুম খামারে প্রতিমাসে গড়ে ৮-১০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন তিনি। জান্নাত এ উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি সব ধরণের সহযোগিতা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।
জান্নাত বেগম প্রথমবারের মতো মনপুরা উপজেলা বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করেছেন বলে জানান উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, আনোয়ার হোসেন।

কীভাবে শুরু, কত টাকা পুঁজি ছিল?

মাত্র এক হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করি । বাড়িতে বসত ঘরের পাশে প্রায় ৪ শতাংশ জায়গা একটি রান্না ঘর নির্বাচন করি ।সেই জায়গায় কাঠের গুঁড়া, ধানের তুষ দিয়ে স্বল্প পরিসরে চাষ শুরু করি।

সাধারণ মানুষ কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন?

মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ খাবার। পুষ্টি ও ঔষধিগুণ থাকায় ইতোমধ্যেই এটি সারাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।মাশরুম চাষে বেকার সমস্যার সমাধান ও বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মাশরুম চাষে কোন আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জমি না থাকলেও বসত ঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। মাশরুম বীজ উৎপাদনের জন্য যেসব কাঁচামালের প্রয়োজন হয়ে থাকে যেমন, খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভূসি ইত্যাদি এসকল জিনিস আমাদের দেশে সহজলভ্য ও সস্তা।

মাশরুম চাষাবাদ করতে গিয়ে কী কী সমস্যায় পড়েছেন?

প্রধান সমস্যা জীবাণু সংক্রমণ। আমাদের উপজেলা বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন সময়ে জীবাণু সংক্রমণ হয় বেশি। ফলে মাশরুম চাষাবাদের বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে আমাদের উপজেলা এখনও সেইভাবে  বাজার গড়ে ওঠেনি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মানুষের ভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। মাশরুম বিক্রির জন্য প্রচার-প্রচারণার অভাব রয়েছে। উৎপাদিত মাশরুম বিক্রয় করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।মাশরুম একসময় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বিষয় হলেও এখন মনপুরার মানুষ কিছুটা সচেতন, অনেকেই এখন মাশরুম
খাচ্ছেন।তবে পানি সংকটে আছি আমি।পানি সেচ এর অনেক সমস্যা পরতে হচ্ছে ।বিদ্যু ও টিউবয়েল না থাকায় সেচ প্রদান করতে কষ্ট হচ্ছে ।একটি টিউবয়েল হলে এই সমস্যা টা সমাধান হবে ।

মাশরুমের নতুন কী কী জাত যুক্ত হয়েছে?

চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির নানা ব্যবহার হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা ও পুষ্টিজ্ঞানের বিষয় তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে।মাশরুম নিয়ে প্রতিদিন ইউটিউবে গুগলে চার্জ করে নতুন নতুন জাত সংগ্রহ করার চেষ্টা করি ।এখন আমার কাছে ওয়েস্টার,W ইত্যাদি মাশরুমের জাতে আছে ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ভবিষ্যতে বড় পরিসরে মাশরুমের চাষাবাদ করার ইচ্ছা রয়েছে। একই সঙ্গে মাশরুমের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে জ্ঞান চালিয়ে যাবো।সরকারী পূষ্ঠপোষকতা পেলে উপজেলা একটি ট্রেনিং সেন্টার খুলবো। যেখান থেকে তরুণ –তরুণীরা প্রশিক্ষন গ্রহন করে উদ্দ্যোক্তা হতে পারবে।এছাড়াও কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাশরুম পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহন করছি ।

মনপুরা উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়র হোসেন বলেন, মাশরুম ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদ পুষ্টিগুণে ভরা।জান্নাতের চাষ করা মাশরুমের ক্রেতা আমি নিজেও।মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি ও ঔষধিগুণে ভরপুর একটি দ্রব্যের সহজ সরল নাম মাশরুম। মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবারের পাশাপাশি মাশরুম চাষ অনেক লাভজনক। মাশরুম একটি সম্ভবনাময় ফসল। এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের উপযোগী।জান্নাত কে আমরা কৃষি অফিস থেকে সকল
প্রকাশ সহযোগীতা করবো ।

জান্নাত বেগম তার উৎপাদিত মাশরুম পাইকারি কেজি প্রতি ৩০০ ও খুচরা ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন তার বাসায় এসে ক্রেতারা মাশরুম কিনে নিয়ে যান।উৎপাদিত মাশরুম দেশের বাহিরে ও বিক্রয় করতে চান জান্নাত । সরকারি সহযোগীতা পেলে আরো বড় ভাবে মাশরুম চাষের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানজান্নাত ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here