মধ্যপ্রাচ্যে সড়ক দূর্ঘটনায় বাংলাদেশী নিহত   মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল প্রতিনিধি :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল সদরের আলীনগর সৈয়দ বাড়ির মৃত সৈয়দ আবুল বাশারের ছেলে সৈয়দ ইউনুছ মিয়া (২৬)। পরিবারের সুখ শান্তির কথা চিন্তা করে বার বছর আগে পাড়ি দিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদী আরবে। বসবাস করতেন তাবুকে।

গত শুক্রবার রাতে মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘনায় দোবা নামক স্থানে ইউনুছ নিহত হন।

মৃত্যুর ৫-৬ ঘন্টা আগে মুঠোফোনে বড় ভাই ও স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন তার দুটি ইচ্ছার কথা। কিন্তু তা আর পূরন হয়নি। রাত ১১টায় বড় ভাই সাংবাদিক সৈয়দ কামরুজ্জামান ইউসুফের মুঠোফোনে আসে তার মৃত্যুর খবর।

বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ মাতা সৈয়দা কামরুন্নাহার (৬৩)। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী মুক্তা বেগম (২২)। নিঃসন্তান ইউনুছের গোটা পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম।

ইউনুছের পারিবারিক সূত্র জানায়, পরিবারের তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে ইউনুছ ছিলেন ৬ষ্ট। পড়ালেখা করেছিলেন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কথা চিন্তা করে অল্প বয়সেই পাড়ি দিয়েছিলেন সৌদী আরবে। ভালই কাটছিল ইউনুছের দিনকাল। তার ছিল একটি পিকআপ ভ্যান। সেটি চালিয়েই তিনি আয় রোজগার করতেন।

প্রতিবছর একবার আসতেন বাড়িতে। সাত বছর আগে ইউনুছ শাহবাজপুরের দিঘীর পাড় এলাকার আন্নু মিয়ার মেয়ে মুক্তা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটছিল।

কিন্তু একটি সন্তানের জন্য ইউনুছের ছিল আকুলতা। তা আর হয়ে উঠেনি। সর্ব শেষ ছুটি কাটিয়ে গত এপ্রিলে ইউনুছ গিয়েছিলেন কর্মস্থলে। গত শুক্রবার রাত তখন ১১টা। ইউনুছের বড় ভাই দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সরাইল প্রতিনিধি কামরুজ্জামান ইউসুফের মুঠোফোনটি বেজে উঠে। ঘুমের ঘোরেই তিনি ফোনটি রিসিভ করেন।

সরাইল সৈয়দটুলা গ্রামের প্রবাসী রকিব নামের এক লোক জানান ইউনুছ সড়ক দূর্ঘনায় গুরুতর আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ছটফট করতে থাকেন তিনি। হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। পরে পরিবারের সকলেই বিষয়টি জেনে যান। রাত ৩ টায় সৌদী থেকে ইউনুছের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন রকিব। সারারাত ওই পরিবারের কেউ আর ঘুমায়নি।

সন্তানের মৃত্যুর খবর কানে আসা মাত্র চিৎকার দিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন গর্ভধারনী মা কামরুন্নাহার। স্বামীর অকাল মর্মানি-ক মৃত্যুর খবরে বারবার জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন স্ত্রী মুক্তা বেগম।

অন্যান্য দিনের মত শুক্রবার গাড়ী নিয়ে বের হয় ইউনুছ। তাবুক থেকে চারজন আরোহী নিয়ে তিনি রওয়ানা দেন দোবা শহরের উদ্যেশ্যে।

দোবার কাছাকাছি যাওয়ার পরই ঘটে যায় দূর্ঘটনা। চার আরোহী বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলেই নিহত হন ইউনুছ। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। ইউনুছের লাশ বাংলাদেশে আনার পক্রিয়া চলার খবর জানিয়েছেন তার পরিবার।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here