ইনসাইটের সফল অবতরণ

ডেস্ক নিউজ :: মঙ্গলের মাটিতে এখন পর্যন্ত রোবট নামানোর অর্ধ ডজন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বেশিরভাগই সফলভাবে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ২৬ নভেম্বর সাফল্যের সাথে মঙ্গলের ইলিসিয়াম প্ল্যানিশিয়ায় অবতরণ করেছে রোবট ‘ইনসাইট’।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হয়ে জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি এই রোবটটির তত্ত্বাবধান করছে। এ বছরের ৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ বিমান ঘাঁটি থেকে যাত্রা শুরু করে রোবট ইনসাইট। ৪৮.৫ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ২৬ নভেম্বর সফলভাবে মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।

মঙ্গলপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, অনুরণন, কম্পনের মতো অত্যাবশ্যক লক্ষ্মণসমূহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ করবে রোবট ইনসাইট। মঙ্গলপৃষ্ঠের কম্পন জানতে এটিতে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির সিসমোমার। মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং ঘূর্ণন সম্পর্কে তথ্য জানতে ধারাবাহিকভাবে তরঙ্গ বিজ্ঞান পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে রোবটটিতে।

নাসা জানায়, গ্রিনিচ মান সময় সোমবার রাত ৭টা ৫৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৫৩ মিনিটে) ইনসাইটের এ রোবটটি মঙ্গলে নামে। রোবট ইনসাইটের সফল অবতরণ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে যে শঙ্কা ছিল তা কেটে যায়। অবতরণের পরপরই মিশনটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ক্যালিফোর্নিয়ার জেট প্রোপালশান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) বিজ্ঞানীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

নাসার প্রধান প্রশাসক জেমস ব্রিডেনস্টাইন ইনসাইটের সফল ‘ল্যান্ডিংয়ের’ এ দিনটিকে ‘অভূতপূর্ব’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। ফোনে বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

লাল গ্রহ হিসেবে পরিচিত মঙ্গলের প্রাণকেন্দ্রে পাঠানো এই রোবটটি সেখানে অবতরণের পরই সেলফি তুলে পাঠায়। ছবিতে মঙ্গলের ধুলাময় বিস্তীর্ণ অঞ্চল দেখা গেছে। ইনসাইটের প্রধান কর্মকর্তা ব্রুস বানারডট বলেন, ইনসাইটের পাঠানো ছবিটা খুবই সুন্দর এবং ধুলাময়, আমার বেশ ভালো লেগেছে। ধুলাময় ছবিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এর ক্যামেরার চারপাশে প্রচুর ধুলা রয়েছে। নি:সন্দেহে এটি ভালো পছন্দ ছিল।

মঙ্গলের বিষুবরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে মাটিতে অবতরণ করে প্রথম ছবিটা তুলেই পাঠিয়ে দেয় ইনসাইট। ছবি পাঠানোর পর রোবট ইনসাইটের দ্বিতীয় মুখ্য কাজ হবে এটিতে থাকা সোলার প্যানেলটিকে সক্রিয় করা, যার সিগন্যাল পেতে হয়তো আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে। মঙ্গলে সফল অবতরণ এবং ছবি পাঠানোর মধ্য দিয়ে এলিট ক্লাবের সদস্যের খাতায় নাম লেখালো রোবট ইনসাইট।

রোবট ইনসাইট প্রজেক্টের ম্যানেজার জেপিএল টম হফম্যান বলেন, পাঠানোর আগেই আমরা ঠিক করেছিলাম যে পাথুরে অঞ্চলের বদলে ধুলাময় এলাকায় এটিকে অবতরণ করাতে। সেখানে নামানোর পর অনেকটাই প্রত্যাশিত অঞ্চল আমরা পেয়েছি। যদিও ছবিতে এক টুকরো পাথর খণ্ড দেখা গেছে, সেটি নিয়ে আলোচনা হবে।

ঘন্টায় ১২ হাজার ৩০০ মাইল বেগে চলা এই রোবটটি নামার আগে অস্বাভাবিকহারে এর গতি কমিয়ে আনে। নামার কয়েক মিনিট আগে এটি গতি ঘন্টায় ১৩৪ মাইলে নামিয়ে নিয়ে আসে। ৩২৮০ ফুট উপর থেকে এটি নিজের কাছে থাকা প্যারাস্যুটটি খুলে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। একেবারে শেষ পর্যায়ে এর গতি ঘন্টায় ৫ মাইলে নেমে আসে। সবশেষে রোবটটির পা গুলো এসে মাটি স্পর্শ করে। নামার এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৬ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড সময় লাগে রোবটটির।- ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here