মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি :: নোয়াখালী হাতিয়ার ভাষাণচরে রোহিঙ্গাদের পুর্নবাসনে শংকিত হাতিয়া, সুবর্ণচরসহ উপকূলবাসী। উপকূলীয় অঞ্চলের লোকেরা মনে করেন রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতার কারণে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়েছে তারা এদেশে আসলে একই ধরণের অপরাধের সাথে যুক্ত হবে।
সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়া থানার এক এসআইকে পিটিয়ে মাথায় জখম করার এবং একাধিক অপরাধের সংবাদ প্রকাশের পর শংকার মাত্রা আরো বাড়তে থাকে।
নোয়াখালীর স্থানীয়রা বলেন, এই শরণার্থীরা মাদক, চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তা ছাড়া বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রেও তারা ঝুঁকিপূর্ণ।
রাহিঙ্গাদের পুর্নবাসনে শংকিত হাতিয়ার বাসিন্দা গোলাম রহমান দূর্জয়। তিনি বলেন,অপরাধ কবলিত রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে শংকিত হয়ে উঠেছে সাধারণ জনগণ। আর এর মাধ্যমে নোয়াখালীকে অসি’র করে তুলবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। বর্তমানে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের সর্বাধিক সহিংসতা ও অপরাধের নায়ক। এরা বেশীরভাগই নানা অপরাধের সাথে জড়িত। বেশীরভাগ রোহিঙ্গাদের অপরাধ সংগঠিত করেই পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। এছাড়াও সমপ্রতি ঘটে যাওয়া বিশ্ব তোলপাড় করা মানবপাচারের নৈপথ্য নায়কও এই রোহিঙ্গারা।
এরাই সর্বপ্রথম মানবপাচারের রুট আবিষ্কার করে। এরপর অর্থের বিনিময়ে শ্রমিকদের উত্থাল সাগরে ভাসিয়ে দেয়। এই রোহিঙ্গাদের হাতেই মুক্তিপণ না দিতে পারায় জীবন দিতে হয়েছে অসংখ্য শ্রমিকদের। নৌকা থেকে জোর করে ফেলে দিয়ে সাগরে ডুবিয়ে মারা, পিটিয়ে হত্যা করা, না খাইয়ে অভুক্ত রেখে হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও অন্য যারা আছে তাদের মধ্যেই সবাই নিন্মমাানের জীবন চর্চা করে। তাদের অনেকেরই পেশা ভবঘুরে জীবিকা।
অন্যরা কেউ রিক্সা চালায়, কেউ গাছের গুঁড়ি টানে, কেউ মাছ ধরে, কেউ জুতা সেলাইয়ের কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগও বিস্তর। মিয়ানমার থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে আসে এরা অভুক্ত ও আধমরা হয়ে। সাগরে ভাসতে ভাসতে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে মেনে নিয়ে তারা আশ্রয় খোঁজে। মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসতে পারলেই এরা আরো ভয়ংকর হয়ে উঠে।
তারা মনে করে, মরে তো গেলামই যতদিন বাঁচি মনের জালা মিটিয়ে বাঁচবো। তাদের এই জালা মিটাতেই এতোদিন কক্সবাজার এবং এর অধিবাসীরা শংকিত ছিলো। এবার সেই জালা মেটাতে তাদের নোয়াখালীকেই জোগান দিতে হবে। হঠাৎ করেই সরকারী সিদ্ধান্ত এলো তাদেরকে নোয়াখালীর হাতিয়া নিয়ে আসা হবে।
অনেকের ধারণা, নোয়াখালীতে সরকার বিরোধী মানুষের সংখ্যা বেশী তাই এই জনমতকে আরো তীর্ব্র করতেই সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভুল বুঝিয়ে এই কাজটি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের ভুল তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গা দিয়ে নোয়াখালীকে অসি’র করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কেননা এরা এখানে এসেই পুরো নোয়াখালীতে ছড়িয়ে যাবে এবং নানা অপরাধে লিপ্ত হয়ে নোয়াখালীকে বিষিয়ে তুলবে। মানুষকে অশান্ত করে তুলবে। আইনশৃঙ্খলার অবনিত ঘটবে চরমভাবে। তাই নোয়াখালী বাসীর দাবী অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক। এছাড়াও নোয়াখালীর এই অঞ্চলে বিশাল চরে বিভিন্ন শিল্পপতিরা কল কারখারার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সরকারও এখানে চারবাহিনীর বাসভবন ও সরকারী নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মানের উদ্যোগ নিতে পারবে। রোহিঙ্গাদের আনলে এর কিছুই হবে না।
এই বিষয়ে ধানশালিক গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। এখানেই এমনিতেই গরিব মানুষের বাস তাই নতুন করে মানুষ আনা হলে এখানে অশান্তি সৃষ্টি হবে।
এদিকে সুবর্ণচরের বাসিন্দা মঞ্জু জানান, আমি তিন বার ঠেঙ্গারচরে গিয়েছি এটি বসতি স্থাপনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দিলে এলাকা অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠবে যার প্রভাব পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।
স্থানীয় পত্রিকার এক সম্পাদকের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের সময়গুলোতে এই সব দ্বীপের লোকজনকে নিয়মিত উপকূলের কাছে নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্ষাকালে জোয়ারের পানিতে দিনে দু’বার হাটু পানিতে তলিয়ে থাকে চরটি। তার মতে, এখানে পুণবাসনের পরিকল্পনাটি বাস্তবসম্মত ছিল না। ওই সাংবাদিক আরও বলেন, এই এলাকায় এ রকম আরও দ্বীপ রয়েছে। সেগুলোর উন্নয়নে ৪০ বছর সময় লেগেছে। তাও এখন পর্যন্ত তা মৌলিক পর্যায়েই রয়ে গেছে।
আবু সালাম নামে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর বক্তব্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা ঠেঙ্গারচরে যেতে চান না। মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের পর আবু সালাম গত ডিসেম্বরে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
ঠেঙ্গারচর থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি এক গ্রাম নলের চরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান (৪৮) বলেছেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শুধু খারাপ কথাই শুনি। যদি তারা জলদস্যুদের সঙ্গে কাজ করে এবং অপরাধে জড়িত হয়, তাহলে আমরা তাদের এখানে চাই না। তবে যদি তারা ভালো মানুষ হয়ে থাকে, তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের সাহায্য করা উচিত।”
স্থানীয় আলম নামের এক রাখাল জানান,ঠেঙ্গারচরে তারা গরু মহিষ পালত সেটি তারা আর পারছেন না।আর এই চর বর্ষার পুরো মৌসুমে কর্দমাক্ত থাকে এখানে রোহিঙ্গাদের জায়গা দেয়া হবে বলে শুনেছেন। তিনি বলেন রোহিঙ্গারা এখানে থাকবেন না জেলা শহরের দিকে চলে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত হবে।