নাজমুল হক

বাংলাদেশী সামান্তে ভারতীয় সামান্ত রক্ষি রাহিনী বিএসএফের হিংস্র হয়ে উঠেছে। কোন বিধি নিষেধ বা প্রতিবাদকে তোয়াক্কা না করে সীমান্ত বর্তী মানুষের উপর হিংস্র পশুর মত আচরণ করছে। বাংলাদেশীদের আটক করে চোখ তুলে নিচ্ছে। ভারতীয় রক্ষি বাহিনী বিএসএফ একের পর এক সীমান্তে পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে মানুষদের। জিরো পয়েন্ট থেকে মানুষ অপহরণ করে নিচ্ছে। তাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো ও মানবধিকার সংগঠনগুলো এর বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ থেকেও বিজিবিসহ সরকার প্রতিবাদ করছে। ভারত সরকার বিভিন্ন সময় সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও বিএসএফ প্রধান হত্যা বন্ধ করা হবে না বলে বক্তব্য রেখে সীমান্তের যোয়ানদের লেলিয়ে দিচ্ছেন। এতকিছুর পরেও সঙ্গত কারনে প্রশ্র উঠেছে বিএসএফের শক্তির উৎস কোথায়? তারা কি ভারত সরকারের থেকেও শক্তিশালী? না সীমান্তে বাংলাদেশী মানুষের হত্যা করার জন্য ভিতর থেকে ভারত সরকার উষ্কে দিচ্ছে ?

ভারত বাংলাদেশের বন্ধু ও প্রতিবেশি রাষ্ট্র। বাংলাদেশের ৩০টি সীমান্তবর্তী জেলা ভারতের সাথে রয়েছে। এ সব জেলা দিয়ে দুই দেশের অনেক মানুষের বিনা পাসপোর্টে যাতয়াত রয়েছে। প্রতিদিন দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে পরিবার পরিজন বা নিকট আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ সীমান্তে যে নির্যাতনের হলি খেলায় মেতে উঠেছে তাতে সে দেশের সচেতন মহল, মানবধিকার সংগঠন, বুদ্ধিজীবিদেরও হতবাগ করেছে। তারা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে জিরো পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর সীমান্তে মিজানুর রহমানের চোখ উপড়ে হত্যা করে। যা পৃথিবীর জঘন্য ও ঘৃন্য হত্যার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। তাদের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে সীমান্তে মানুষ পরিবার নিয়ে নিরাপদ মনে করছে না। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা সীমান্তে ৩ জন বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যায়। ব্যাটলিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে আটককৃতদের হাজির করা হয়্‌। কিন্তু তারপরও আটককৃতদের ফেরত না দিয়ে ভারতীয় থানায় হস্তান্তর করে। আখাউড়া সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্ত পিলার নির্মান করতে চেষ্টা করে। ৩ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন করে হত্যা করে বিএসএফ। এ আগে বাংলাদেশের কুমিল্লার একটি সীমান্তে বিনা উষ্কানিতে এক বাংলাদেশীকে যে ভাবে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে তাদের দেশীয় টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজ হতবাক হয়েছে সারা বিশ্ব। সভ্য সমাজের মানবতা যেন ভূলুণ্ঠিত হয়। সভ্যতার পিঠে চরম ছুরিকাঘাত করে বিএসএফ যে উল্লম্ফন করে। বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিককে বিবস্ত্র করে যে ভাবে পিঠিয়েছে, সেই ঘটনা গত ৯ ডিসেম্বর ২০১১ ঘটনা, অথচ আমাদের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কিংবা কোন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে কখনো এর কোন ইঙ্গিত দেওয়া হয় নি। ঐ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হলে যতটা ভারতে তোড়পাড় হয়েছে বাংলাদেশে তা হয় নি। বাংলাদেশ সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী এটা নিয়ে সরকার ভাবছে না বলে দায় এড়িয়ে যায়। উন্টো চুরি, চোরাচালানের অভিযোগ করা হয়। তাহলে প্রশ্ন হল দায়টা আসলে কার? তাদের বক্তব্য কি উষ্কে দিচ্ছে না বিএসএফকে? পরদিন বেনাপোল সীমান্তে আবারো নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয় এক বাংলাদেশীকে। কিন্তু তথাকথিত গরু চুরির ঘটনায়, সন্দেহ বশত অত্যন্ত অমানবিক  পৈশাচিকভাবে হাত-পা বেধে বিবস্ত্র করে  গোপনাঙ্গে পেট্রল ঢেলে  অতি আদিম কায়দায় পেঠানোর ভিডিও প্রকাশের নিমিত্তে হতবাক হয়ে যাই, ভেবে অবাক হই বিএসএফ এর মতো একটি সুশৃংখল আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা কি করে এতো জঘন্য জন্তু-জানোয়ারের মতো আচরণ করতে পারলো ?

সীমান্ত চোরাচালান হয় এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। দুই দেশের মানুষ চেরাচালানের সাথে জাড়িত। তবে এর সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের বড় বড় মাপের মানুষ জড়িত। তাদের কিছু হয় না। বাংলাদেশী সীমান্তেতবে বাংলাদেশের নীরিহ মানুষ যারা দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য গরু আনতে ভারতে যায়। এ যাবৎকাল গরুর রাখাল ছাড়া বিএসএফ আর কারোর উপর নির্যাতন করতে পারি নি। কারণ বিএসএফের দাবীকৃত টাকা গরু রাখালরা দিতে পারে না। বাংলাদেশকে মাদকের আখড়ায় পরিণত করতে বাংলাদেশী সীমান্তে ১৫০ এর অধিক ফেন্সিডিনসহ কারখানা, দুই শতাধিক মদের কারখানা স্থাপন করেছে। যেখান দিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বড় বড় চালানের মাধ্যমে ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীরা ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের দেশের মন্ত্রীরদের বক্তব্য অনুযায়ি যদি চোরাকারবারি জড়িতদের নির্যাতন করা হয় তবে শুধু গরু রাখালদের কেন? মাদক চোরাকারবারিরা কেন পার পেয়ে যাচ্ছে? অসল কথা হল ভারতের ঘুষখোর বিএসএফরা ঘুষের টাকা হাতে না পেলে মরিয়া হয়ে উঠেন। বাংলাদেশে মাদক পাচারের কোন বাধা দেয় না। কারণ সেখান থেকে মোটা অর্থিক সুবিধা ভোগ করে। সীমান্তে যে ভাবে কাটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে তাতে বিএসএফের চোখ ফাকি দিয়ে কোন মানুষ ভারতে প্রবেশ করতে পারে না। রাতে সীমান্তে বাংলাদেশের দিকে তাক করা সার্চ লাইট গুলো জ্বালানো থাকে। যার আলো যেন সূর্যের আলোকেও হার মানায়। প্রতিটি সার্চ লাইটে অন্তত দুই কিলোমিটার বাংলাদেশ আলোকিত থাকে। ফলে ভারতে কোন প্রাণী ঢুকতে গেলেও বিএসএফের নজরে আসে। তাহলে প্রশ্ন ভারতে প্রবেশের সময় বিএসএফ কেন বাধা দেয় না ? কেন তাদের তখন আটক করে না? কেন বাংলাদেশীদের নিরাপদে যেতে সাহয্য করে? কারণ একটাই মাল নিয়ে আসলে অর্থ পাওয়া যাবে। সীমান্তের বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি গরু নিয়ে আসলে গরুর রাখালকে ১৫০০ থেকে ১৮০০ ঠাকা দেওয়া হয়। কিন্তু বিএসএফ প্রতিটি গরুর জন্য দাবী করে প্রায় সমপরিমান টাকা। ফলে হতদরিদ্র গরু রাখালরা দিতে পারে না। এ কারণে নির্যাতন নেমে আনে তাদের উপর।

ভারতীয় সরকার বিভিন্ন সময় বাংলাদেশীদের হত্যা করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বিএসএফ বার বার সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নির্মম ভাবে হত্যা করছে নিরহী বাংলাদেশীদের। বার-বার প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিনা উস্কানীতে নিরীহ জনগণকে এই রকম নির্মমভাবে হত্যা করবে, নির্যাতন করবে, ধরে নিয়ে যাবে, যা ইচ্ছে তাই করবে তবে আমাদের পররাষ্ঠ্র মন্ত্রণালয় আছে কি জন্য? চোরাচালানের জন্য আইন আছে, আদালত আছে। আদালত আছে সেখানে তাদের বিচার করা হয়। ভারতীয় আইনে তো চোরাচালানের শাস্তি মৃত্যুদন্ড নয়। আদালত তাদের বিচার করবে। বিএসএফ তো আদালত নয়। তাহলে তারা কিভাবে মানুষ হত্যা করছে? তারা নিজেরা আইন তুলে নিয়ে ভারতীয় আইন ভঙ্গ করছে। সরকার তাদের তো মানুষ হত্যা করার দায়িত্ব দেয় নি? এটা মানবধিকার লঙ্ঘন। আমাদের মাননীয় মানবধিকারের চেয়াম্যান জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল কবে, যখন সীমান্তে আর কেই থাকবে না তখন ব্যবস্থা নিবেন? সীমান্তে হত্যা বন্ধের জন্য রাষ্ট্র এখনও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি? শুধু মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়া পর্যন্তই। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা খোজ খবর নেন মৃত বাংলাদেশীর লাশ কোথায় আছে। যে দিন তারা মিডিয়ায় বক্তব্য দিচ্ছেন ঠিক সেই দিন পুনরায় হত্যা করা হচ্ছে। মাননীয় পররাষ্ট্র সচিব এবং মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় বলবেন কি, কি হচ্ছে আমাদের বর্ডারগুলোতে? নাকি আমাদের অতি নম্‌্র ও দুর্বল পররাষ্ট্র নীতির কারণে বাংরাদশীরা বার বার মার খেয়ে যাবে ? নাকি অপনাদের নিশ্চুপতা বিএসএফকে আরো হিংস্র থেকে হিংস্রতর করে তুলবে। সীমান্তের কথা ভাবুন। অতীত ইতিহাস চিন্তুা করুন। ভাবুন তারাও মানুষ। সীমান্ত বাসী আপনাদের দিকে চেয়ে আছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here