ভারত-পাকিস্তান 'প্রত্যাঘাতের' প্রস্তুতি %e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a4-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%98ডেস্ক নিউজ:: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে ‘প্রত্যাঘাতের’ প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এই লক্ষ্যে ৭৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ নজরে এসেছে। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে গোলাবারুদও মজুদ করা হচ্ছে। সেখানে বোফর্স কামান, রকেট এবং ব্রহ্মস মিসাইল মোতায়েন করা হয়েছে বলেও পাক মিডিয়ার দাবি। এদিকে, পাকিস্তানও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দেশটির পেশোয়ার ও রাওয়ালপিন্ডির মহাসড়কে যুদ্ধবিমান ওঠানামা শুরু করে দিয়েছে, যদিও বলা হচ্ছে, এটি তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী ইসলামাবাদের আকাশে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান উড়িয়েছে পাকিস্তান। ফলে অনেকেই ধারণা করছেন, সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর যুদ্ধও বেধে যেতে পারে দেশ দুটির মধ্যে। তবে কিছু সংখ্যক বিশ্লেষক বলছেন, আসলে যেটা হচ্ছে, তা নিতান্তই লোক দেখানো।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে দিলি্লতে ‘ওয়ার রুমে’ সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে বিস্তারিতভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী ম্যাপের সাহায্যে মোদিকে দেখায়, কিভাবে হামলা চালানো যাবে পাকিস্তানের মাটিতে। ওই বৈঠক ছাড়াও গত দুই দিনে আরো দুটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সূত্রের দাবি, সেখানে নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে কিভাবে সেনা অপারেশন চালানো যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া কিভাবে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহার করা যায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, সেই প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।

সরকারি বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এই মুহূর্তে যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা করে ছক কষে এগোচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালানো হলেও মূলত গোপনেই হচ্ছে সেসব অপারেশন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় সরকারের একজন প্রবীণ কর্মকর্তার দাবি, কূটনৈতিক পর্যায়ে যদি পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সমঝোতা না হয়, তাহলে অন্যভাবে হামলা চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যে কোনো ধরনের সেনা হামলায়ই পাল্টা ঝুঁকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকেই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে, তারা কোন পরিকল্পনাকে কাজে লাগাতে চায় পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করতে। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের মুখোমুখি যুদ্ধের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই বলে দাবি সরকারি একটি সূত্রের।

পাকিস্তানও প্রস্তুত হচ্ছে, উঠছে-নামছে বিমান এদিকে, পাকিস্তানও সীমান্তে তাদের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়েছে, মজুদ করছে বিভিন্ন সামরিক অস্ত্র। জানা গেছে, দেশটির পেশোয়ার ও রাওয়ালপিন্ডির মহাসড়কে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের ওঠানামা শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই ঘটনা পাকিস্তানজুড়ে আলোচিত হয়েছে। আর যুদ্ধের আশঙ্কা এতটাই ছড়িয়েছে যে, পাকিস্তানের শেয়ারবাজারেও তার প্রভাব পড়েছে।

সেনাবাহিনীর তৎপরতায় পাকিস্তানে যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি হলেও দেশটির বিমানবাহিনীর মিডিয়া বিভাগ মুখে তালা মেরেছে। সরকারি পর্যায়ে এই নীরবতা জল্পনার আগুনে ঘি ঢেলেছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো মন্তব্য করেছে। তবে একজন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে সতর্কতার মাত্রা বাড়ানোর কোনো খবর নেই। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ভারতের সাম্প্রতিক হুশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে ‘চূড়ান্ত নজরদারি’ চলছে।

ইসলামাবাদে রাতের আকাশে এফ-১৬ বিমান শুধু মহাসড়কেই নয়, রাজধানী ইসলামাবাদে রাতের আকাশে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও উড়িয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীর এক টুইটে দাবি করেছেন, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ২০ মিনিট থেকে ইসলামাবাদের আকাশে উড়তে দেখা গেছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। এ সময় চারটি বিমানকে উড়তে দেখা যায় বলে দাবি জিও নিউজের সম্পাদক মীরের। এরই কারণে আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েন।

টুইটবার্তায় হামিদ মীর জানান, ইসলামাবাদের কাছে মোটরওয়ে সড়কে দুপুরে যুদ্ধবিমান অবতরণের খবর পাওয়া গিয়েছিল। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে তিনি আকাশে চারটি যুদ্ধবিমান উড়তে দেখেছেন। যুদ্ধবিমানগুলো তীব্র আওয়াজ করে উড়ছিল। সেগুলো প্রায় চার-পাঁচবার চক্কর দিয়েছে।

এরপরই তিনি পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেনা কর্মকর্তারা জানান, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি নিয়মিত মহড়া মাত্র। পাকিস্তানের অন্য একটি চ্যানেল ‘অজন নিউজ’-এর দাবি, এটি রুটিন মহড়া ছিল। কারণ, ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট হাউস, পার্লামেন্ট ভবন এবং সুপ্রিমকোর্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন রয়েছে। তাই আকাশপথে এফ-১৬ মোতায়েন করে পাকিস্তানের এই প্রস্তুতি নেয়া হতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে আমেরিকা পাকিস্তানকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়েছে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের হাতে ৭৬টি এফ-১৬ বিমান রয়েছে। পাকিস্তানের অত্যাধুনিক এফ-১৬ বিমান মোকাবেলায় ভারতের হাতে আছে সুখোই, মিরেজ, মিগ-২৯ এবং দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস। কার্গিল যুদ্ধেও মিরেজ বিমান ব্যবহার করেছিল ভারত।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here