বন্দীদশার কথা জানিয়ে উদ্ধারের জন্য শেখ হাসিনাকে চিঠি লেখা ৩৬ শিশু এখনও সেই হোমেই আটকা পড়ে আছে।
১ জুলাই তারা লিখেছিল, ‘‘ আমরা অনেকেই বিনা অপরাধে আটক হয়ে আছি। কাজের প্রলোভনে পা দিয়ে দালালের সহযোগিতায় ভারতে প্রবেশ করি। কেউ বেড়াতে এসে ধরা পড়ি। পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে আসায় বিএসএফ আমাদের শুভায়ন হোমে আটকে রেখেছে। এই অসহায় অবস্থা থেকে একমাত্র আপনিই আমাদের উদ্ধার করতে পারেন।” পরিবারে কাছে ফিরতে না পেরে এই শিশুরা ৪৮ ঘণ্টা অনশনও করে।
কলকাতা ভিত্তিক সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) অভিযোগ করেছে, এসব শিশুদের ‘বেআইনিভাবে’ আটকে রাখা হয়েছে।
সংগঠনের প্রধান কৃতি রায় এক বিবৃতিতে বলেছেন, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট এলাকায় শুভায়ন হোমে রাখা শিশুদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। ভারতীয় আইনে তাদের বিরুদ্ধে যেসব ফৌজদারি মামলা হয়েছিল, সেগুলোর নিষ্পত্তি হয়ে গেলেও ফেরত পাঠানো হয়নি।”
বিবৃতিতে এই শিশুদের মধ্যে ১৩ জনের নাম প্রকাশ করেছেন কৃতি রায়।
এরা হল- স্বপন রায়, মো. রুবেল, নুরুল ইসলাম, মো. ইলিয়াস, গৌতম রায়, অমৃতা রায়, আজিজুল ইসলাম, মো. সোহেল রানা, মিজানুরর রহমান, সুজন আলী আরিফুল ইসলাম, মো. আল আমিন ও বাদশাহ হক।
কৃতি রায় বলেন, “এই শিশুরা অনির্দিষ্টকাল ধরে ওই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আটকে আছে, যার কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
এছাড়া মো. আতিকুল, মো শরিফ, মোকিদুল ইসলাম ও মো. সুজন নামের আরও চার শিশু ওই হোমে রয়েছে, যাদের নামে মামলা রয়েছে।
মাসুম বলছে, এই শিশুদের সবাই পাচারের শিকার। অথচ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ না নিয়ে তাদের সবার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের এ ধরনের পদক্ষেপ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১২ সালের একটি নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করেন মাসুম প্রধান।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যারা পাচারের শিকার হয়ে দেশান্তরি হন, তাদের কাছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈধ কাগজপত্র বা পাসপোর্ট থাকে না। পাচারের শিকার হওয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা করা যাবে না। তদন্তে যদি দেখা যায়, সে স্বেচ্ছায় ভারতে আসেনি বা কোনো অপরাধে জড়ায়নি, তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেওয়া যাবে না।
পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দিয়ে থাকলেও সেই মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়।
কৃতি রায় জানান, রমজান হক নামে ছয় বছরের এক শিশু গত দুই বছর ধরে এবং এনামুল হক নামের দশ বছরের আরেকজন পাঁচ বছর ধরে হোমে রয়েছে।
কাগজপত্রে নিরাপত্তা প্রয়োজন উল্লেখ করে আরও ১৭ বাংলাদেশি শিশুকে কয়েক বছর ধরে রাখা হয়েছে। এরা হলও- মো. মোমেন, মো. অসীম, মো. জানারুল ইসলাম, মো. সোহেল রানা, গোলাম মুস্তফা, মো. জুবায়ের, মো. সোহান শেখ, মো. দুলাল আলী, মো. রাজু ইসলাম, শ্রীকৃষ্ণ না তপ্পো, কৃষ্ণা তপ্পো, স্বাধীন হোসেন, রবি আলম, মো. জুনায়েদ পাঠান, ইলিয়াস আলী বাদশা, রাফি শেখ ও নাজমুল হক।
বিষয়টি ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত শাখার মাধ্যমে স্বাধীনভাবে তদন্ত করে আটকে থাকা বাংলাদেশি শিশুদের দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছে মাসুম।