দারুণ শুরু করার পর দ্রুত কয়েকটি হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে গেছে সফরকারী বাংলাদেশ। জয়ের এখনও অর্ধেক পথ বাকী।
হাতে আছে পর্যাপ্ত ওভার। কিন্তু ইমরুল-সাব্বিরের জুটির পর আর কোনো বড় জুটি দাঁড়াচ্ছে না। ১ উইকেটে ১০৫ রান থেকে ১৩৪ রানে নেই ৬ উইকেট! ফিরে গেছেন রিয়াদ, সাকিব, মোসাদ্দেক।
নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৫২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩০ রানেই ওপেনার তামিম ইকবাল বিদায় নেন। ২৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৬ রানের ইনিংসটি শেষ হয় টিম সাউদির বলে ল্যাথামের হাতে ধরা পড়ে। কম রানের মধ্যে উইকেট পতন হলে এমনিতেই চাপে পড়ে যায় দল। বাংলাদেশও সেই চাপে পড়েছিল। তবে ইমরুল কায়েস এবং সাব্বির রহমানের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটিংয়ে বিপদ এড়ায় বাংলাদেশ। দুজন মিলে গড়েন ৭৫ রানের জুটি। এরপর ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেকটা দৃষ্টিকটুভাবেই রান আউট হয়ে ফিরে যান সাব্বির রহমান (৩৮)।
সেই সময় টাইগারদের দরকার ছিল একটি বড় জুটি। ইমরুল কায়েসের সঙ্গে জুটি বাঁধতে ক্রিজে আসেন মহাবিপদে যার ব্যাট জ্বলে উঠে সেই মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে মাত্র ১ রান করে ফার্গুসনের বলে বোল্ড হয়ে যান ঠাণ্ডা মাথার এই ক্রিকেটার। এরপরই ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমরুল কায়েস। তার সঙ্গী হিসেবে আসা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৭ রানে উইলিয়ামসনের বলে নেইল ব্রুমের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এরপর ইমরুলের সঙ্গী হন প্রথম ম্যাচে চাপের মাঝেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করা তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন। কিন্তু বাজে শট খেলে উইলিয়ামসনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি।
এর আগে নেলসনের মেঘলা আবহাওয়ায় সিরিজে ফেরার ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ভালোভাবেই চেপে ধরে বাংলাদেশ। গ্যালারি থেকে ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ আওয়াজের সাথে সাথে জ্বলে উঠল টাইগাররা। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এ দিন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন বোলিংয়েও। ২৮০-২৯০ রানকে যখন ‘নিরাপদ’ স্কোর ভাবা হচ্ছিল সেখানে ২৫১ রান তো সহজ লক্ষ্য! বোলাররা তাদের কঠিন কাজটা সহজে করে দেখালেন। এবার পালা ব্যটসম্যানদের।
সেক্সটন ওভালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে জিতে স্বাগতিকদের ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশ। কিউইদের স্কোর বোর্ডে কোনো রান যোগ না হতেই মাশরাফি বিন মুর্তজার শিকার হন মারকুটে ওপেনার মার্টিন গাপটিল (০)। দলীয় ৩৭ রানে তাসকিনের বলে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন কেন উইলিয়ামসন (১৪)। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারাতে থাকে নিউজিল্যান্ড। একসময় ১০৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। টিম সাউদি (৩) এবং আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ল্যাথামকে (২২) ফেরত পাঠান সাকিব। তাসকিনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন লুক রঞ্চি (৩৫)।
এ দিন মোসাদ্দেক হোসেন এবং অভিষিক্ত তানভীর হায়দার ছাড়া সবাই কৃপণ বোলিং করেছেন। মোসাদ্দেক ২ ওভারে ১২ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নেন। এরপর অবশ্য মাশরাফি তাকে আর বল দেননি। অন্যদিকে তানভীর ৮ ওভার বল করে ৪৭ রান দেন। মাশরাফি ৩টি, সাকিব-তাসকিন ২টি করে এবং শুভাশিস রায় ১টি উইকেট নেন। সাকিব, তাসকিন, শুভাশিসের ইকোনোমি রেট ছিল সমান, ৪.৫০। আর মাশরাফির সামান্য বেশি, ৪.৯০।
এই বোলিং তোপের মুখেও উইকেটের একপ্রান্ত কামড়ে ধরে ছিলেন কিউই দলে ফেরা নেইল ব্রুম। দলের সবার বিপরীতে ব্যাট চালিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ১০১ বলে ৭ বাউন্ডারি এবং ৩ ওভার বাউন্ডারিতে তিনি ৩ অংকে পৌঁছান। শেষ পর্যন্ত ১৭ বলে ১০৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার ইনিংসে যুক্ত হয় আরও একটি বাউন্ডারি। নিউজিল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন লুক রঞ্চি। তিনি ৩৮ বলে ৪ বাউন্ডারি এবং ১ ওভার বাউন্ডারিতে ৩৫ রান করেন। এ ছাড়া নিশাম করেন ২৮ রান।
কিন্তু এতসব ‘ভালো’র মাঝে কিছু খারাপ থাকবে না সে কি হয়? তাই বরাবরের মতো দেখা গেল মিসফিল্ডিং। এর মধ্যেই অভিষিক্ত নুরুল হাসান ৩টি ক্যাচ নিলেন, শেষ বলে রান আউট করে অল আউট করলেন কিউইদের। তবে মিসফিল্ডিংগুলো না হলে রান হয়ত আরও কম হতো। কিন্ত নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং স্বর্গে যা হয়েছে সেটাই বা খারাপ কীসের?