ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন বন্ধ থাকায় তার বাড়িভাড়া দিতে কষ্ট হচ্ছে।

এনিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতারা মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক ও জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অপ্রাসঙ্গিক, কুরুচিপূর্ণ ও নোংরা বলে অভিহিত করেছে বিএনপি।

অবিলম্বে খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়ার দাবিও জানায় দলটি।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাড়িভাড়া পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে করা অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের অনুরোধ এনবিআর-এ এখনো অনুমোদিত না হওয়া ষড়যন্ত্রমূলক।

খালেদা জিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখাকে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সরকারি আদেশে দীর্ঘ প্রায় সাতবছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

এনিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দীর্ঘদিন ধরে দেশের একজন বিশিষ্ট নাগরিককে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করার পরিবর্তে সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতা-নেত্রীরা মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক এবং জাতীয় সংসদে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে ষড়যন্ত্র খোঁজার পাশাপাশি অত্যন্ত অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ রাখার অন্যায় সরকারি কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন নিয়ে সরকার ও সরকারি দলের প্রতিক্রিয়া থেকে প্রমাণিত হয়- এই সরকার অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।

তিনি বলেন, সংসদে অনুপস্থিত ব্যক্তি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা নিয়ে সংসদে সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যেসব মিথ্যা, অপ্রাসঙ্গিক, কুরুচিপূর্ণ ও নোংরা মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা জানানোর কোনো শোভন ভাষা আমাদের জানা নেই। গতকাল সংসদে দেয়া বক্তৃতার জন্য ওইসব ব্যক্তি জনগণের ঘৃণা ও সমালোচনা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করেন নি।

তিনি বলেন, সংসদে প্রতিনিয়ত শুধু মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে অশোভন ভাষায় খিস্তিখেউর করা হয়। তারা বলেন, বিএনপি নাকি নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাই যদি সত্য হয়-তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই প্রতিদিন সংসদের ভেতরে-বাইরে বিএনপি এবং এর নেতাদের সম্পর্কে কথা বলে সময় নষ্ট করছেন কেন ?  আসলে জনগণ এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আস্থাভাজন দল বিএনপিকে তারা ভয় পায় এবং সেই ভীতি থেকেই প্রতিনিয়ত তারা প্রলাপ বকে, আর জনগণের ঘৃণা কুড়ায়। অনুগত প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অন্যায় সহযোগিতায় জোর করে নিজেদের নির্বাচিত দেখিয়ে তারা আজ যে ক্ষমতার দম্ভ করছে তা ক্ষণস্থায়ী হতে বাধ্য। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।

খালেদা জিয়ার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এক-এগারোরর সময় খালেদা জিয়ার মতো শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সেই সরকার খুলে দিলেও এনবিআর এর কোনো মামলা না থাক সত্ত্বেও দেশনেত্রীর জব্দ করা কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অদ্যাবধি খুলে দেয়া হয়নি। এটা যে কোনো নাগরিকের প্রাপ্য সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। গত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকার এই অন্যায় আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে অবিলম্বে অ্যাকাউন্ট জব্দ করার অন্যায় আদেশ প্রত্যাহার না করার পরিবর্তে এ সম্পর্কে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক, অন্যায় এবং নিন্দনীয়।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নামে যে ৮টি ব্যাংক একাউন্টের কথা বলা হয়েছে তার ছয়টিতে তেমন কোনো অর্থ জমা নেই এবং বহুবছর ধরে কোনো লেনদেনও হয় না। এর মধ্যে শহীদ জিয়ার আমলের অ্যাকাউন্ট ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রচলিত নির্বাচনী আইন অনুযায়ী এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। মাত্র দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয় এবং সেখানে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য খাতে অর্জিত টাকা নিয়ামানুযায়ী জমা হয়। এক্ষেত্রে সবকিছু স্বচ্ছ ও আইনানুগভাবে পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা অহেতুক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে নিজেরাই নিন্দার পাত্র হয়েছেন। এটা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহিন, মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নিবার্হী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here