স্টাফ রিপোর্টারঃ পটুয়াখালীর সাগরপাড়ের দ্বীপ চরমোন্তাজ। রাঙ্গাবালী উপজেলার এই দ্বীপ ইউনিয়নবাসীর একটি অংশ হতদরিদ্র। বাকিরা সাগরে মাছ ধরা ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বছরের এ সময়টিতে মানুষের হাতে তেমন কাজ থাকে না। তার ওপর করোনা সংক্রমণজনিত কারণে হতদরিদ্ররা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বহু পরিবারের দিন কাটছে চরম কষ্টে। ঈদ যেন হতদরিদ্র পরিবারগুলোর কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জীবন-জীবিকার এই দুঃসময়ে স্হানীয় চার যুবক হতদরিদ্র মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এই চার যুবকের অন্যতম এ কে আজাদ খান সাথী। যিনি চরবাসীদের কাছে আরও অনেক আগেই সুখ-দুঃখের সঙ্গী হিসেবে ‘সাথী ভাই’ নামে অধিক পরিচিতি লাভ করেছেন । অপর তিন যুবক আইয়ুব খান, রাকিব হোসাইন ও সাইমুন ইসলাম ফরিদও ইতোমধ্যে চরবাসীদের কাছে স্ব স্ব কাজের মাধ্যমে সমাজকর্মী হিসেবে সমাদৃত হয়েছেন।
ঈদ কেন্দ্র করে হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এই চার যুবক শুরু থেকেই কিছুটা ব্যতিক্রমী কাজ শুরু করেন। আইয়ুব খান বলেন, আমরা প্রথমে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে দু’ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করি। তারা দ্রুততম সময়ে প্রতিটি মানুষের বাড়ি যান এবং প্রকৃত হতদরিদ্র চিহ্নিত করেন। তারা একই সঙ্গে মানুষের চাহিদা নিরুপন করেন। এ তথ্য যাছাই বাছাই শেষে আমরা একত্রে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সে সিদ্ধান্তের আলোকে এলাকার বাসিন্দা অথচ কর্মসূত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে আছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা প্রায় সকলেই আমাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
উদ্যোক্তা আজাদ খান সাথী বলেন, শুরুতে ‘চ্যারিটি ফর চরমোন্তাজ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলি। প্রথমে ৯০ টি পরিবারকে সহায়তার সিদ্ধান্ত হলেও পরে আর্থিক সহযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় ১৩২ টি পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গত ২০ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত প্রতিটি বাড়ি গিয়ে পরিবারগুলোর হাতে সহায়তা তুলে দেয়া হয়। উপহার সামগ্রী হিসেবে প্রতিটি পরিবারকে একখানা শাড়ি অথবা লুঙ্গি, ৫ কেজি পোলাও চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি সোয়াবিন তেল, ১ কেজি চিনি,১ কেজি সেমাই, গুঁড়ো দুধ ২০০ গ্রাম, ট্যাং ১ বক্স, সাবান ২ টি, লবণ ১ কেজি ও ডাল ৫০০ গ্রাম দেয়া হয়। পরিবারপিছু ঈদ উপহার সামগ্রীতে এক হাজার তিন শ’ টাকা ব্যয় হয়। সামগ্রী বিতরণ কাজে ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবীরা সহায়তা করেন।
আজাদ খান সাথী আরও বলেন, কোভিড/উনিশের এ পরিস্থিতি যখন কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবারগুলো হিমশিম খাচ্ছিল, নতুন একখানা পরনের কাপড় কিনতে পারছিল না। সে সময়ে অসহায় পরিবারগুলোর সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি  করার জন্য আমাদের এ প্রচেষ্টা ছিল খুবই ক্ষুদ্র। তবুও মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি, এটাই আমাদের সান্ত্বনা।
উদ্যোক্তারা সকলেই বলেন, অসহায় পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর এ প্রচেষ্টা আগামিতেও অব্যাহত থাকবে। এ উদ্যোগে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন বিশেষ করে বরিশালের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. টুটুল মিয়া, মো. তারিক বিরু মিয়া, ঠিকাদার মো. শামিম প্যাদা সহ অন্যদের প্রতি উদ্যোক্তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
কর্মহীনের কঠিন দিনগুলোতে ঈদের উৎসব সামনে রেখে উপহার সামগ্রীতে খুশি দ্বীপের অসহায় মানুষজনও। তারা সকলেই দারুন উচ্ছ্বসিত। মাঝের চরের ৬৮ বছর বয়সী আবদুর রব হাওলাদার বলেন, সরকার সব হানে রিলিব দিছে। কিন্তু আমাগো মাঝের চর এহনো কোনো রিলিব আয় নাই। এই প্রথম আমাগো লইগ্গা ওনারা কিছু লইয়া আইছে। আমরা ব্যামালা খুশি হইছি।
চর বেস্টিনের বাসিন্দা ৪৬ বছরের নাজমা বেগম বলেন, আমরা ২৫ বছর ধরে চরে থাকি। কিন্তু এই কষ্টের সময়ে আর কেউ ত্রাণ নিয়ে আসেনি। এই ত্রাণ পেলাম বলে ঈদের দিনে ছেলেমেয়েদের নিয়ে পেট ভরে খেতে পারবো। ঈদের দিন নামাজ পড়ে আমি ওনাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছি।
উপহার সামগ্রী পেয়ে এভাবে আরও কয়েকজন তাদের আবেগ অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তারা সকলেই এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, এভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রকৃত মানুষ চিহ্নিত করা, প্রয়োজনীয়তা জানা, আবার সঠিক ভাবে তা পৌঁছে দেয়ার এ পরিকল্পনা এবং তার সফল বাস্তবায়নের এ উদ্যোগ, সকল মহলের প্রশংসা অর্জন করেছে। এলাকাবাসীর অনেকেই এটিকে অনন্য ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বলছেন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here