বোস্টন : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইংল্যান্ডে অবস্থিত প্রবাসীদের সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইংল্যান্ড’ (বেইন)-এর নির্বাচনকে ঘিরে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উত্তেজনা দিন দিন বেড়েই চলছে।

প্রবাসীদের ভ্রাতৃত্ব সংকট নিরসনে কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়া হলেও ক্ষোভ আর তিক্ততার মুখে তা ভেস্তে যায়।                                                                                                                                                   

 গত ২১ অক্টোবর সোমবার বেইনের নির্বাচনে মনোনয়ন জমাদানের ব্যর্থ হয়ে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা কামাল রাজ মনোনয়ন প্রদানের সময়সূচি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। অপর দিকে নির্বাচন কমিশনও সংবিধানের ধারা ও তাদের উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে উক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বিলম্বে গ্রহনে অনীহা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে গত দুসপ্তাহে স্থানীয় প্রবাসীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। অপর দিকে নির্বাচন কমিশনার প্রাপ্ত একক প্যানেলকে বিজয়ী বলে ঘোষনা দেন। এর ফলে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের ফলে স্থানীয় প্রবাসীদের মাঝে দেখা দেয় চরম ভ্রাতৃত্ব সংকট। শেষে কমিউনিটির বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে বিজয়ী প্যানেলের তামান্না করিমসহ অন্যান্য প্রার্থীরা অভিযোগকারি রাজ এর মনোনয়ন গ্রহনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২ নভেম্বর শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার আনোয়ার কবির রুমি সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজ এর মনোনয়ন পত্র জমা নেয়ার জন্য ক্যামব্রিজের একটি রেস্টুরেন্টে আহবান জানান। উক্ত প্রার্থী তার দলবল নিয়ে আসেন। প্রথমেই  মনোনয়ন নিয়ে কথা শুরু হয়। শুরুতেই বক্তব্য দেন বেইনের সাবেক সভাপতি শাহীন খান। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহনেচ্ছুক প্রার্থী রাজ-এর উদ্দেশ্যে তার ভালোমন্দ দিক তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে আগামীতে নির্বাচন করলে রাজ অনেক বেশি লাভবান হবে বলে তিনে অভিমত প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি বিষয়টি নিয়ে রাজকে ভাবারও সময় দেন। উত্তরে রাজ বলেন, তিনি সভাপতি পদে নির্বাচন করার জন্য সম্পুর্নভাবেই প্রস্তুত। তাই তিনি এবারেই নির্বাচন করবে। এসময় তিনি তার মনোনয়ন পত্র ও মানি অর্ডার লেখা শুরু করেন। এরপর রাজ-এর সঙ্গে আসা তার শুভাকাঙ্খীরা নির্বাচন কমিশনারের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এক পর্যায়ে কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে উঠেন। সিইসি রুমি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে শুধু রাজ-এর মনোনয়ন নিয়ে কথা বলুন। গত দুসপ্তাহে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। ওসব প্রসঙ্গ টেনে অহেতুক কোন ঝামেলার সৃষ্টি করবেন না। তারপরও অনেকেই নানা প্রসঙ্গ টেনে সুষ্ঠ পরিবেশকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন। সুযোগ বুঝে সমস্ত ক্ষোভের তীর বারবার ছোঁড়া হচ্ছিল তার দিকেই। সিইসি রুমি দুদফায় চলে যাবারও উদ্যোত হন। তিনি বারবার একই কথা বলেন, কোন অপ্রাসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে আজকে এখানে আলোচনা করবেন না। শেষে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজ সিইসির কাছে মনোনয়ন উত্তোলন ও নির্বাচনের সময় পেছানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সিইসি বলেন, উত্তোলনের সময় দুদিন বাড়ানো যেতে পারে, কিন্তু নির্বাচনের তারিখ পেছানো সম্ভব নয়। উত্তরে রাজ বলেন, মাত্র সাতদিনে গণসংযোগ করা সম্ভব নয়। অন্তত আরও দুমাস সময় পেছালে রাজ পুরো প্যানেল নিয়ে আসবেন, তাতে কমিউনিটিরও উপকার হবে এবং বেইনের মোটা অংকের তহবিল জমবে বলে তিনি আশা করেন। এ ব্যাপারে সিইসি দ্বিমত পোষন করে বলেন, প্যানেল দেয়ার আর কোন সুযোগ নেই। ঘড়ির কাটায় তখন ৭টা পেরিয়ে গেছে। তারপরও সিইসি বলেন, আপনার মনোনয়ন জমা দিলে দিতে পারেন। রাজ বারবারই সময় বাড়ানোর কথা বলে নিজের সময় ক্ষেপন করেন। অবশেষে তিনি আর তার মনোনয়ন জমা দেননি। শেষ পর্যায়ে তার সাথে আসা লোকজনরাই উল্টো তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলেন, আপনি কেন আমাদেরকে এখানে ডেকে এনেছেন? আপনি জানেন এ নির্বাচন কমিশনার নিরপেক্ষ কাজ করছে না, তাহলে কেন মনোনয়ন জমা দিতে চান? সেখানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন, বেইনের বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রিন্স, মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম, আব্দুল ওয়াহিদ সিনহা সান্টু, মান্না চৌধুরী, সালাউদ্দিন চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান, শাহবুদ্দিন চৌধুরী রবি, মোহাম্মদ খান দিপুমঞ্জুরুল আলম, আব্দুর রাজ্জাক, আসিফ বাবু, ইকবাল ইউসুফ, সানি ও মিন্টো কামরুজ্জামান প্রমুখ।                                                                                                 
 উল্লেখ্য,গত ২১ অক্টোবর সোমবার ছিল বেইনের নির্বাচনের মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন। ঐদিন মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন নির্ধারন করা হলেও শেষ সময় নিয়ে নানা বাক-বিতন্ডা শুরু হয় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মাঝে। সোমবার রাত নয়টা পর্যন্ত মনোনয়ন গ্রহনের শেষ সময় বেঁধে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশন আনোয়ার কবির রুমি। নির্দিষ্ট সময়ের পুর্বে শুধু মাত্র তামান্না-আলম-শাহীন নামের একক প্যানেল জমা পড়ে। কিন্তু ৮টা ৫০ মিনিটে নির্বাচন কমিশনের উল্লেখিত স্থান নিমাহ মার্কেটে এসে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা কামাল রাজ অপর প্যানেলের শতাধিক লোকজনের ভিড়ে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করে বাংলা প্রেসকে বলেন, বাংলাদেশি স্টাইলে একটি প্যানেলের কর্মি-সমর্থকরা নির্বাচন কমিশনারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তিনি বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলে মনোনয়ন ফির জন্য মানিঅর্ডার কিনতে পাশের দোকানে যান। ততক্ষণে নির্বাচন কমিশন তাদের দেয়া ঘোষনা অনুযায়ী ৯টার পর উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে মনোনয়ন গ্রহন বন্ধ ঘোষনা করেন। এ সময় বেইনের বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রিন্স আরও দুজন সাবেক সভাপতি আবু কামাল আজাদ ও শাহীন খান উপস্থিত ছিলেন। রাজ এর অযিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আনোয়ার কবির রুমিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বাংলা প্রেসকে জানান, মনোনয়ন গ্রহন বন্ধ ঘোষনার কয়েক মিনিট পর অর্থাৎ ৯টা ৬ মিনিটে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা কামাল রাজ তাকে ফোনে প্রশ্ন করেন, তিনি মানিঅর্ডার যোগাড় করতে পারেনি, ব্যক্তিগত চেক দিয়ে মনোনয়ন জমা দেয়া যাবে কিনা? রুমি উত্তরে বলেন, আমাদের পুর্ব ঘোষনা অনুযায়ী ৯টায় মনোনয়ন পত্র গ্রহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং স্বাক্ষীরাও কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। আপনি দেরি করে ফেলেছেন। রাজ আর কথা না বাড়িয়ে ফোন রেখে দেন বলে তিনি জানান। এ ঘটনার একদিন পর অর্থাৎ বুধবার ইমেইলের মাধ্যমে রাজ সংবিধানের ধারা উল্লেখ করে অভিযোগ করে বলেন, সংবিধানে মধ্যরাত অবধি মনোনয়ন গ্রহনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাহলে কেন ৯টা ৬ মিনিটে তার মনোময়ন পত্র গ্রহনে সিইসি অনীহা প্রকাশ করেন করলেন। আর এ ঘটনা বোস্টনের সুধীমহলে শুরু হয় নানা গুঞ্জন আর উত্তেজনা।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here