বাংলা প্রেস, বোস্টন থেকে :: যথাযথ মর্যদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে বোস্টনে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। গত রবিবার সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় বোস্টনের ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন কমিটি স্থানীয় রক্সবুরী ইসলামিক সোসাইটি অব বোস্টন কালচারাল সেন্টারে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এখবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা বাংলা প্রেস। এ মিলাদ মাহফিলে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন ও আদর্শ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন মুফতি ইকরাম উল হক, হাফিদ ন্যাইল কাজী, সিষ্টার সিলিন ইব্রাহিম, ড. সৈয়দ ইরশাদ আল বুখারি, ইমাম খালিদ নাসর, ড.আনোয়ারুল হাসান ও আইয়ুবুর রহমান। বক্তাগন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী ব্যাখ্যা করে বলেন ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মানবজাতির শিরোমণি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। পৃথিবীবাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহানবী (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। আইয়ামে জাহেলিয়াতের সেই যুগে মানুষকে আলোর পথ দেখিয়ে ৬৩ বছর বয়সে একই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। দিনটি মুসলিম উম্মাহ বিশেষ তাৎপর্যসহকারে পালন করে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী উল্লেখ করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, এক সময় গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল। এ যুগকে বলা হতো ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকূলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতেই মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহকে (সা.) প্রেরণ করেন এই ধরাধামে। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেম অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে তিনি মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করেন। নবুয়ত লাভের পর থেকে অসভ্য বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে মহানবী তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামিনের তাওহিদের বাণী। কিন্তু অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তার দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসুলের (সা.) ওপর নির্যাতন শুরু করে। বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তার সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি একপর্যায়ে তারা রাসুলকে (সা.) হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসুল (সা.) তখন আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদিনায় হিযরত করেন। মদিনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদিনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসাবে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সার্বজনীন ঘোষণা রয়েছে এতে। ২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসুলে পাক (সা.) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজের ভাষণে মানবজাতিকে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন এভাবে- ‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হিসাবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে’। মহান আল্লাহ সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে হযরত মুহাম্মদকে (সা.) এ জগতে প্রেরণ করেন। সর্বশেষ মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআন তার কাছে অবতীর্ণ করে জগতে তাওহিদ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পণ করেন। নিজ যোগ্যতা, মহানুভবতা, সহনশীলতা, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন দুঃখ কষ্টের বিনিময়ে তিনি এ মহান দায়িত্ব পালনে সফল হন। রোববার বোস্টনে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা জমায়েত হয়ে নবীজীর জীবন ও জীবনী আলোচনা করেন এবং কাসিদা পড়েন। মিষ্টি-খাবার তৈরি করে বিতরণ করেন। রাসুল প্রেমিকরা ভক্তিভরে দরুদ পাঠে মশগুল থাকবেন। প্রাণের আবেগ মেখে পড়েন: ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি/কাশাফাত দুজা বিজামালিহি/হাসুনাত জামিঊ খিসালিহি/সাল্লু আলাইহি ওয়ালিহি…’।
চলতি বছর গত ৪ জানুয়ারি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়।