প্রতিনিধি :: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামে বিয়ের কনে কনেযাত্রী নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে বিয়ে করে বর নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এতদিন ধরে চলে আসা বিয়ের যে প্রথা চলে আসছে সেই প্রথা ভেঙে কনে বরের বাড়ি বিয়ে করতে যাওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনাটি ভাইরাল হয়েছে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি তার পরিবারসহ কনেযাত্রী নিয়ে বিয়ে করতে যান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামের কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে বর তরিকুল ইসলাম জয়ের বাড়িতে।

ঘটনা শুনে বরের বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমতে থাকে। সাতটি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল সহকারে ৬০ জন কনেযাত্রী নিয়ে কনে খুশি হাজির হন বরের বাড়িতে।

বিয়ের নিয়মে কোনো ঘাটতি ছিল না। প্রথা অনুয়ায়ী প্যান্ডেল, গেটসহ ভুরিভোজের সব আয়োজন করেছে বরপক্ষ। গেটে ফিতা কেটে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন কনে। সেই সময় বরের মত করে কনেকে মিষ্টিমুখও করানো হয়।

বরযাত্রীর স্থলে সাজানো প্যান্ডেলে ভুরিভোজ করেছেন কনেযাত্রীরা। বিয়ে সম্পন্ন হলে বরকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন বিয়ের কনে।

এ বিষয়ে কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, আমাদের উভয়ের পরিবারের সম্মতিতে এ বিয়ে হয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িতে বিয়ের অনান্য আনুষ্ঠানিকতা সেরে বরের বাড়িতেই ফিরে যাব। ঘটনাটি প্রথম বিধায় অনেকেই সমালোচনা করছেন। তবে নারী-পুরুষের সমান অধিকার বিষয়টি মানলে সবাই আর সমালোচনা করবেন না।

বর তরিকুল ইসলাম জয় বলেন, বিয়েতে সবাই কনের বাড়িতে যায় আমার বিয়েতে কনে এসেছে বিয়ে করতে। আমিতো বেশ ভালই উপভোগ করেছি। কনেকে দেনমোহর আমিই দিয়েছি। আমি ঘর জামাই থাকতে নয় কনেকে আমার বাড়ি নিয়েই সংসার করব। আমার বাবা ও কনে পক্ষের লোকজন মিলে আমাদের বিয়েতে ব্যতিক্রম কিছু করার জন্য এ আয়োজন। এ বিয়েতে উভয়পক্ষের লোকজন খুবই খুশি হয়েছে। কারণ বিয়ে উপলক্ষে বরের বাড়ি বৌভাত ও কনের বাড়ি বরযাত্রী ভোজ অনুষ্ঠান হয়। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের সব অনুষ্ঠানই হচ্ছে।

বরের পিতা কমরেড আব্দুল মাবুদ বলেন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে। মুখে আমরা বললেও তা বাস্তবায়ন করছি কতটুকু? তাই আমি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি সামনে আনতে চেয়েছি। এটা সবে মাত্র শুরু। আস্তে আস্তে দেখবেন এমন আয়োজন অনেকেই করছে। তখন আর মানুষে কিছু বলবে না।

নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী নার্গিস পারভীন বলেন, প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে কনে বরের বাড়ি বিয়ে করতে যাওয়ার ঘটনা আমাদের খুবই আনন্দ দিয়েছে। এখানে অধিকার-অনধিকারের কোনো বিষয় নয়। অন্যায়তো কিছু হয়নি। এ বিয়ের ঘটনায় উভয় পরিবারসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা খুশিই হয়েছে। আমরা এখন দোয়া করব তারা যেন সুখি হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here