জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ইমন (১৭) ও আসমা আক্তার আয়েশা (১৭) নামে দুই তরুণ-তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল দির্ঘদিন থেকে। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তাদের কাছে পালিয়ে বিয়ে করার মতো টাকা ছিলনা। তাদের বাড়ির মাহফুজা খাতুন (৫৫) স্বর্ণালংকার পড়া অবস্থায় প্রতিদিন বিকেল বেলায় হাঁটতে বরে হতেন। টাকার জন্য ওই মাহফুজাকে টারর্গেট করেন আয়েশা। টার্গেট অনুযায়ী আয়েশা তার প্রেমিক ইমনকে মাহফুজাকে হত্যা করে র্স্বণালংকার লুট করতে বলেন। যে কথা সেই কাজ !

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বৃদ্ধা মাহফুজাকে হত্যা করে র্স্বণালংকার লুটে নিয়ে যায় ইমন। আর লাশ বস্তাবন্দি করে ফেলে দেয় পার্শ্ববর্তী খালে। ১৭ অক্টোবর পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত মাহফুজা ও প্রেমিক যুগলের বাড়ি উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামে।

পিবিআই নোয়াখালী সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর উপজেলার দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের বৃদ্ধা মাহফুজার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ১৬ অক্টোবর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ দিকে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বৃহস্পতিবার সন্দেহভাজন ইমন ও আজিজ নামে দুই কিশোরকে আটক করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্য মতে আয়েশাকেও গ্রেফতার করা হয়। পরে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা হলেন আয়েশা, আয়েশার প্রেমিক ইমন ও আজিজ (১২)। আজিজ আয়েশা ও ইমনের প্রেমের বার্তা বাহক।

আজ শুক্রবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. জহিরুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পিবিআই পরিদর্শক মো. জহিরুল হক জানান, ইমন ও আয়েশার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আজিজ তাদের প্রেমের চিঠি আদান প্রদানে সহযোগীতা করতো। একদিন আয়েশা ও ইমন পালিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ইমনের কাছে টাকা ছিল না। ইমন বিষয়টি আয়েশাকে জানায়। বিষয়টি শুনে আয়েশা বৃদ্ধ মাহফুজাকে হত্যা করে তার স্বর্ণালংকার লুটে নেওয়ার জন্য ইমনকে বলে। লুট করা স্বর্ণালংকার বিক্রি করে, সেই টাকা দিয়ে পরে তারা দুইজনই পালিয়ে বিয়ে করবে। এই পরকিল্পনার দুইদিন পর ইমন ও আজিজ বৃদ্ধা মাহফুজার বাড়ির পাশে ওৎ পেতে থাকে। প্রতিদিন বিকেলে স্বর্ণালংকার পড়া অবস্থায় মাহফুজা হাঁটতে বের হন। ঘটনার দিন হাঁটতে বরে হলে ইমন মাহফুজাকে তাদের ঘরে ডেকে নেয়। একপর্যায়ে ইমন ও আজিজ তার গলায় গামছা পেঁছিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে বস্তাবন্দি করে বৃদ্ধার লাশ ইমন তার বাড়ির রান্না ঘরের পেছনের বাগানে পেলে দেয়। বৃদ্ধার ছেলেরা তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করলে এ সব দেখে ইমন ও আজিজ পরিকল্পিতভাবে বস্তাবন্দি লাশ টেনে নিয়ে পার্শ¦বর্তী খালে পেলে দেয়। পরে পুলিশ বস্তা টেনে নেওয়ার চিহ্ন দেখে খাল থেকে বৃদ্ধা লাশ উদ্ধার করে।

নিহত বৃদ্ধার ছেলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মো. আবদুল ওয়াদুদ শিপন বলেন, আমার মায়ের হত্যাকান্ডে কোন অগ্রগতি না পেয়ে আমি মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার জন্য পুলিশ হেডকোয়াটার্স এ আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা তদন্তের জন্য পিবিআই নোয়াখালীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পিবিআই এর সহযোগিতায় আমার মায়ের হত্যার রহস্য উদঘাটন হলো। আমি পিবিআইকে ধন্যবাদ জানাই এবং পরিকল্পিত এ হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করি।

পিবিআই নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বসু দত্ত চাকমা বলেন, আসামীরা আমাদের নজরধারীতে ছিল। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলাটির রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে নিরাপদ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here