‘বিয়ে’ সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী প্রজন্মের ধারা অব্যাহত রাখতে বড় ভূমিকা রাখে বিয়ে। সমাজের অন্য নিয়মের মতো বিয়েকেও একটা নিয়মের মধ্যেই ধরা হয়। এটা ধর্মীয় ব্যাপারও বটে। বিয়ে না করলে অনেক সময় সমাজচ্যুত করা হয় বা হতে হয়।
কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের অনেক নারী বিয়ের কথা শুনলেই নাক সিটকান। তাঁরা থাকতে চান একাকী। এ ব্যাপারে তাঁদের ভাবনা হলো, বিয়ে পেশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, থাকতে হয় অনুগত ও ঘরকুনো হয়ে এবং সর্বোপরি ব্যাহত হয় স্বাধীনতা।
আবার উল্টো চিত্রও কিন্তু আছে। কোনো কোনো নারী কিন্তু আবার বিয়ের জন্য পাগলও।
কেন বিয়ে করবেন করছেন না, এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক নারী বলেছেন—বিয়ে করলে সংসারে পুরুষের অনুগত হয়ে থাকতে হয়। তাই স্বাধীনচেতা নারীর জন্য বিয়ে নয়। এই নারীরা বাইরের জগতে যেতে চান এবং নতুন নতুন কাজের সুযোগ খুঁজে নিতে চান। তাঁরা ঘরকুনো হয়ে থাকতে চান না। তাই তাঁরা বিয়েও করতে চান না।
কিন্তু নববধূ মল্লিকা জেইন বিয়ের ব্যাপারে কখনই নার্ভাস ছিলেন না এবং এ নিয়ে কখনই দ্বিধার মধ্যেও ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার শুরুতে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু আবার নতুন জীবনে প্রবেশের জন্য আগ্রহীও ছিলাম।’ তাঁর অনেক বন্ধু বিয়ের বিরোধী এবং স্বাধীনভাবে থাকতে চান। বন্ধুদের উদ্দেশে মল্লিকা বলেন, ‘বিয়ে করলেই যে পরাধীন হবে, সব সময় তা হয়তো নয়। কিন্তু তারা বিয়ের কথা শুনতে একেবারেই নারাজ।’
মা-বাবার মধ্যকার খারাপ সম্পর্ক নারীদের বিয়ে না করতে উত্সাহী করে। নিজেদের দাম্পত্য জীবনেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে ভেবে অনেকে শঙ্কিত। এ প্রসঙ্গে কারও কারও বক্তব্য, ‘আমার মা-বাবার সম্পর্ক যদি এই হয়, তবে আমার বিয়ের দরকার কী?’
এ প্রসঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক গবেষক নিরাল শাহ বলেন, চারপাশে অহরহ বিয়ে বিচ্ছেদ দেখে অনেক নারী বিয়েতে অনাগ্রহ দেখান। আবার কোনো কোনো নারী সংসার বা সন্তানের দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘তবে প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে নারীদের বিয়ের প্রয়োজন আছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি।’
২৩ বছর বয়সী অঞ্চনা দামোধরন কাজ করেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। তিনি তাঁর কাজ ও পেশাকে ভালোবাসেন এবং সৃজনশীলতা দিয়ে তিনি এগিয়ে যেতে চান। বিয়ের ব্যাপারে অঞ্চনার মতো হলো, ‘এটা সময়, শক্তি ও অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।’ তিনি আরও বলেন, যদি বিয়ে করতে গিয়ে পেশাকে বিদায় জানাতে হয়, তবে কোনো দিনই বিয়ে নয়।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here