ডেস্ক নিউজ :: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সার্বক্ষণিক হিসাব রাখা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১০ মিনিট নাগাদ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ১৭৭ জন। মারা গেছেন ৫১ হাজার ৩৫৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে দুই লাখ ১০ হাজার ১৯৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৩৭ হাজারের (মোট আক্রান্তের ৫ শতাংশ) অবস্থা গুরুতর বা সংকটাপন্ন।

এর আগে বুধবার এক দিনে একাধিক রেকর্ড গড়েছে এ রোগটি, ভেঙেছে আগের রেকর্ড। এদিন সারাবিশ্বে এক লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ছয় হাজারের বেশি। তিন মাস আগে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এর আগে এক দিনে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হননি কিংবা মারা যাননি। যুক্তরাষ্ট্রে এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজার মানুষ আর মারা গেছেন এক হাজার ৪৯ জন। এ রোগে এর আগে অন্য কোনো দেশে এক দিনে এত মানুষের আক্রান্ত হওয়া কিংবা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এর আগে ইতালিতে এক দিনে মারা গিয়েছিলেন ৯৭৯ জন। স্পেনে গতকাল সর্বোচ্চ ৯৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাজ্যেও মারা গেছেন রেকর্ডসংখ্যক ৫৬৯ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, করোনায় মার্চের শেষ সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন সংক্রমিত হয়েছেন ৫০ থেকে ৫৫ হাজার মানুষ। গড়ে প্রতিদিন মারা গেছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ। গত এক সপ্তাহের করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে, কোনো সংস্থাই এ নিয়ে পূর্বাভাস দিতে পারছে না। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা শুধু ভবিতব্যই জানে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা দিনদিনই খারাপ হচ্ছে। দেশটির একটি গবেষণা সংস্থা এর আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, মধ্য এপ্রিল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক দুই হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। হোয়াইট হাউসও বলেছে, করোনায় দেশটিতে এক লাখ থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতালির পথেই অগ্রসর হচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি বিভাগ মরদেহের জন্য এক লাখ ব্যাগ চেয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহে ৬৬ লাখ মানুষ বেকার সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন। এর আগের সপ্তাহে চেয়েছিলেন আরও ৩৩ লাখ মানুষ। মাত্র দুই সপ্তাহে প্রায় এক কোটি মানুষ বেকার ভাতার আবেদন করেছেন। ১৯৮২ সালের পর এ সংখ্যা সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হোয়াইট হাউসে এক গোপন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীন সরকার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা গোপন করেছে। এর পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সরকারি সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বেইজিং সেখানকার অবস্থা বাস্তব পরিস্থিতির চেয়ে ‘ভালো দেখাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। একই ব্রিফিংয়ে তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, চীনের দেওয়া আক্রান্ত ও মৃতের হিসাব ঠিক কিনা, তা জানার কোনো উপায় নেই।

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রই এখন সবার ওপরে। দেশটিতে দুই লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৭ জনের দেহে কভিড-১৯ ধরা পড়েছে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে পাঁচ হাজার ৬২০ জনে। করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এখনও ইতালিতে। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার ২৪২ জন, আর প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ হাজার ৯১৫ জন। করোনাভাইরাস সংক্রমণে এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক লোকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্পেনে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ২৩৮ জনে।

ফ্রান্সে গতকাল ৪৭১ জন মারা গেছেন। দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৫০৩ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ১০৫ জন। ইরানে গতকাল আরও ১২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন তিন হাজার ১৩৬ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৪৬৮ জন। তবে এর মধ্যে ১৬ হাজার ৭১১ জন সুস্থ হয়েছেন। ইরানের সংসদের স্পিকার আলী লারিজানি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে বুধবার পর্যন্ত দুই হাজার ৯২১ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৭১৮ জন। দেশের পরিস্থিতি দেখে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘দুঃখজনক, খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’ জনসন নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ তাদের ৩৬ হাজার কর্মীর চাকরি সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করতে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে কোম্পানিটি তাদের কেবিন ক্রু, গ্রাউন্ড স্টাফ, প্রকৌশলী ও সদর দপ্তরে কাজ করা কর্মীদের ৮০ শতাংশের চাকরি সাময়িক স্থগিতের কথা বলেছে; কাউকে পুরোপুরি ছাঁটাই করা হবে না। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে ৪৫ হাজার কর্মী রয়েছেন।

হু-হু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জার্মানিতেও। গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ হাজার ২৬৪ জন আর মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৭৪ জনের। আক্রান্তের সংখ্যায় গতকাল চীনকেও ছাড়িয়েছে জার্মানি। এক কোটি ১৪ লাখ জনসংখ্যার বেলজিয়ামে গতকাল করোনায় মৃত্যু এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৪৮ জন। রাশিয়ায় এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক ৭৭১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৫৪৮ জন আর মারা গেছেন ৩০ জন। রাশিয়ায় সবেতনে ছুটির মেয়াদ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময় অজরুরি কাজে নিয়োজিত সবাইকে বাসায় থাকতে হবে। মস্কোয় আংশিক লকডাউনের মেয়াদ ১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

তুরস্কে বুধবার ৬৩ জন মারা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৭৭ জনে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ১৪৮ জন। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ পবিত্র মক্কা ও মদিনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে। কানাডায় এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ১১৫ জন বেড়ে পৌঁছেছে ১০ হাজার ১৩২ জনে। মৃতের সংখ্যা ২২ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৭-এ।

বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিমপ্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ায় বৃহস্পতিবার আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৭০ জনের। ফলে এশিয়ায় এখন চীনের পরেই করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ দেশটিতে। ১৬৯ জনের মৃত্যু নিয়ে এর পরেই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ইন্দোনেশিয়ায় মোট আক্রান্ত এক হাজার ৭৯০ আর দক্ষিণ কোরিয়ায় নয় হাজার ৯৭৬ জন। ভারতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ জনে। গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২৩৫ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে দুই হাজার ৬৯ জনে।

থাইল্যান্ডে শুক্রবার থেকে কারফিউ জারি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মালয়েশিয়ায় মধ্য এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ হবে। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ১১৬ জন, আর মারা গেছেন ৫০ জন। ফিলিপাইনে গতকাল মারা গেছেন আরও ১১ জন। দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ১০৭ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬৩৩ জন।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here