এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :: কাতারে নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে ৪৮ জনের কাছ থেকে এক প্রতারক ১০ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নামে মাত্র টাকায় বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার সহজ সরল এসব লোকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০/২৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে প্রতারক নূর ইসলাম। এলাকায় তার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে স্থানীয় এক মেয়েকে চলতি মাসে বিয়ে করলেও স্ত্রীর স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিদেশ প্রত্যাশী এসব লোকগুলো। গত এক সপ্তাহেও তার কোন খোঁজ পায়নি এলাকাবাসী।
এলাকাবাসি জানিয়েছে, নূর ইসলাম নামে এক প্রতারক সিদ্ধিরগঞ্জের আজিবপুর বাগান বাড়ি এলাকার সাইফুলের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। একসময় নূর ইসলাম স্থানীয় কয়েক জনের সাথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার বিষয়টি আলোচনা করে। সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের বিষয়টি গনমাধ্যমে প্রচারিত হলে সুচতুর নুর ইসলাম মালয়েশিয়া বাদ দিয়ে কাতার নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবগত করায়।
এরপর নূর ইসলাম জনপ্রতি সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কাতার নিয়ে একটি এসি কোম্পানীতে ভালো বেতনে চাকুরি দেয়ার স্বপ্ন দেখায়। কোন প্রকার খরচ ছাড়াই বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে অভাবী ও সহজ সরল লোকগুলোকে নূর ইসলামের ফাঁদে পা দেয়। প্রতারক নুর ইসলাম তার মেডিকেল ফিট কার্ড দেখিয়ে জনপ্রতি এক হাজার টাকার স্থলে সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে নিয়ে প্রত্যেকের মেডিকেল সম্পন্ন করতে থাকে। এভাবে ৪৮ জনের মেডিকেল ফিটনেস সম্পন্ন করে প্রতারক নূর ইসলাম।
এলাকায় তার গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে গত ৫ জুন প্রতারক নূর ইসলাম স্থানীয় কলমিস্ত্রী আব্দুর রশিদের মেয়ে নাসরিনকে ২ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে করে। এরপর থেকে তার প্রতারনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। মেডিকেল সম্পন্ন করা লোকদের কাছ থেকে ভিসা প্রসেসিং ফি এর কথা বলে জনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রায় ১০/১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক নূর ইসলাম। গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় নূর ইসলামকে না দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তার বাসায় খোঁজ নেয় প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা।
এসময় তার স্ত্রী নাসরিন জানায়, নূর ইসলাম ভিসা আনতে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এরপর সোমবার পর্যন্ত সে বাসায় ফিরে আসেনি। যাওয়ার সময় স্ত্রীর স্বর্ণালংকারও নিয়ে গেছে বলে জানায় স্ত্রী নাসরিন। এরপর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে নূর ইসলামের জন্ম নিবন্ধন ও মেডিকেল ফিট কার্ড পাওয়া যায়। জন্ম নিবন্ধনে তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার উইলসন রোডে এবং পিতা ইয়ারবক্স আকন ও মাতা ছামসুন নাহার উল্লেখ রয়েছে।
সোমবার সিদ্ধিরগঞ্জের আজিবপুর বাগানবাড়ি এলাকায় গেলে কথা হয় প্রতারণার শিকার নাসির, সিদ্দিক, রব সিকদার, হান্নান, মোক্তার, মোহসিন, মনতাজ, আলমগীর, মিজান, খোকন, শ্রী সজল, রাসেল শেখ, জসিম, হাসান মোল্লা, সোহেলসহ আরো কয়েক জনের সাথে। তাদের কাছে থাকা মেডিকেল ফিট কার্ডে এজেন্সী নামের স্থলে রক্তের গ্রুপ এবং সব কার্ডেই প্রায় একই তথ্য লেখা রয়েছে। আলমগীরের কোন পাসপোর্ট না থাকলেও তারও মেডিকেল ফিটনেস করা হয়েছে। এলাকার সহজ সরল লোকগুলো বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে প্রতারণা বুঝতে পারেনি। ঢাকার এত কাছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ অবসি’ত হলেও প্রচার ও সচেতনতার অভাবে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সকেলই প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
প্রতারনার শিকার সিদ্দিক (পাসপোর্ট নং- এই-০০৩৫৩০৩) জানায়, কম টাকায় বিদেশ যাওয়ার জন্য নূর ইসলামের হাতে ২৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছি। গত এক সপ্তাহ যাবৎ তার কোন খোঁজ নেই। ঠিকানা অনুযায়ী তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিল। প্রতারক নুর ইসলামকে গ্রেফাতের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।