এলিজা খাতুন :: বিজয় ; একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ; আমাদের শ্রেষ্ঠতম অর্জন। কিছু সংখ্যক বিভ্রান্ত মানুষ ছাড়া সবাই এজন্য সংগ্রাম করেছেন, সহ্য করেছেন সীমাহীন যন্ত্রনা। এমন বৃহৎ অর্জনকে অক্ষুন্ন রাখতে বা আরও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে দেশের নাগরিক হিসাবে মূল্যবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে আমাদের দায়িত্ব অনেক। একটা ইতিহাস, একটা আনন্দ, একটা চরম ত্যাগের স্মৃতিচারণ। সেই ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে হারিয়ে গেল স্বাধীনতা। দু’শো বছরের গোলামীর পর ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ তারপর আরেক অধ্যায়। শুরু হয় বৈষম্যের কলংকময় ইতিহাস। ভাষার অধিকারে প্রাণ দিয়ে বাংলাকে আদায় করে নিল এই দেশেরই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর আরও অনেকে। এরপর ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানীদের ঘৃণ্য, জঘন্য হত্যাযজ্ঞ…… দেশের জন্য প্রাণ দিতে ঝাঁপিয়ে পড়া মহান মানুষদের আত্মত্যাগ এবং লক্ষ্য শহীদের রক্তের বদলে আজ আমরা এত্ত স্বাধীন ! আমরা পেয়েছি বিজয় শব্দটি, কিন্তু প্রকৃত বিজয়ী কারা ? শত বছরের পুরোনো মুক্তি মিলেছে বৈকি, কিন্তু প্রাণের মুক্তি কি প্রকৃতই মিলেছে ? আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কাঙ্খিতভাবে সফল হয়েছে কি ? লক্ষ শহীদের রক্তস্নাত বাংলার মাটি আজও দেখেই চলেছে রক্ত-দলাদলি, অন্যায়-অনাচার, খুনাখুনি, সাম্প্রদায়িক হানাহানি।

মানুষের মনোজগতকে নিয়ন্ত্রণ করে নৈতিকতা, আর তার আচার আচরণকে পরিমাপ করে মূল্যবোধ। যুগ ও সভ্যতার পরর্বিতনে সমাজের মানুষের মূল্যবোধেরও পরির্বতন হয় ; কিন্তু সহনশীলতা, আইনের শাসন ও সুশৃংঙ্খল পরিবেশের অভাবে বাঙালী জাতির মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে ।আবার এভাবেও বলা যায়- মূল্যবোধের অভাবে সহনশীলতা, আইনরে শাসন, ও সুশৃংঙ্খল পরিবেশ দিন দিন হারাতে বসছে । একটা সমাজের মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাস, আচরণ, এর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকে সুস্থ্য দেশের মেরুদন্ড। অথচ আজকের দিনে বিষের মত সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে- অন্যায়-অনাচার, দলাদলি, রক্তপাত ইত্যাদি জঘন্য কাh©কলাপ ; আর এ সমস্ত নোংরা রাজনীতিতে ছাত্রদের তারুণ্যকে লুফে নিয়ে তার অপব্যবহার করছে কতপিয় র্স্বাথান্বেসী নষ্ট প্রবৃত্তরি ব্যক্তি । সম্প্রতি যার শিকার হয়েছে আবরারের মতো অতন্ত্য মেধাবী ছাএ, এবং অতীতের আরও অনেকে ।

কতপিয় আরো কিছু নতুন ইস্যুর কথা উল্লখে করতে চাই ; যা জনমনে ক্ষোভ জন্ম দিয়েছে ; দাম না পেয়ে টাঙ্গাইলের কৃষক পাকা ধানের খেতে মনের দুঃখে আগুন দিয়েছিলেন, অন্যদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে আবাসিক ভবনের বালিশ, চাদর ইত্যাদির দাম দেখানো হয়েছে ৫ হাজার এর র্উদ্ধে । ইদানিং চাহদিা-যোগানের ভারসাম্যহীনতার কারণে ব্যবসায়ী ও মধ্যসত্ত্বভোগীরা পেঁয়াজের আর্টিফিসিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করেছে । এবং লাগামহীন দাম বাড়ানোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রতি সেটা জুলুমের র্পযায়ে চলে গেছে । আর খাদ্যে ভেজাল, বিষাক্ত ঔষধ ব্যবহার করে সংরক্ষণ ও গুদামজাত করা তো একটা স্থায়ী সমস্যায় দাঁড়িয়েছে । এইসব ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির মূলে কারা এবং কেন এই বির্পযয় ? এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতা ধারণ ও প্রয়োগ করার বিষয়ে বোধ জাগ্রত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয় কি !

আমরা জানি বোধ শব্দটির প্রতিশব্দ- জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, মেধাশক্তি, চেতনা, অনুভূতি, উপলব্ধি ; আবার বিবেক, চিন্তা, বুদ্ধি ও ন্যায়পরায়ণতা হচ্ছে নৈতিকতার উৎস। এসবের মাধ্যমে ভালো মন্দের বিচার করার ক্ষমতা দ্বারা মানুষের সামাজিক আচার আচরণের সমষ্ঠিই মূল্যবোধ ; যা সমাজের নানা ক্ষেত্র সুন্দর ও পরিপূর্ণ হতে সাহায্য করে । সহজভাবে বলা যায় মূল্যবোধ মানুষের কাজের ভালো মন্দ বিচারের ভিত্তি ; অতঃপর ন্যায় অন্যায় বোধ থেকে প্রতিরোধ-প্রতিবাদ।

প্রায় দেড়-দুই দশক পূর্বে কিংবা তারও অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারা যেত। এবং সে সব ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি করলেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে গণ্য করা হত। আর এখন সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধমূলক ঘটনা জলের মতো সহজ প্রবাহমান, এগুলো আর বিচ্ছিন্ন বলে এড়িয়ে যাবার নয়।

ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞানের সুস্থ্য বিকাশ। এর মধ্যে দিয়েই জাতি হেঁটে চলেছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিকাশের ফলে মানুষের জীবন যাপনের পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু আত্মিক উন্নয়ন হচ্ছে কি ! মানুষের বৈশিষ্ঠ্য তো এই যে,- তারা সমাজ ও পরিবারে শান্তি বজায় রাখার জন্য সর্বদা সচেতন, এমন কি পরিচিত বা অপরিচিত যেই হোক একের দুঃখে অপরে দুঃখিত হবে, সহমর্মিতা প্রকাশ করবে। মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য করে তো ঔচিত্যবোধ ! যা সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, জোরালো ভাবেই বলা যাবে- সভ্যদেশ সমূহের মধ্যে শোষণ, নিপিড়ন, দুর্নীতি, অনাচার আমাদের দেশেই বেশি। আবার প্রতিবাদ করার নজির আমাদের দেশেই বেশি। হতাশাজনক হলেও সত্য যে- আজকাল বেশিরভাগ প্রতিবাদ রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য হাসিলেই নিবেদিত ; যা ভালো ফলের বদলে কুফল বয়ে আনে। নীতি-নৈতিকতা মূল্যবোধের অবক্ষয় ধরেছে সমাজ-রাষ্ট্রের প্রত্যেক শ্রেণিপেশার মধ্যে, বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমাজে হাজার প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে, প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে সুস্থ্য সমাজ প্রত্যাশী নাগরিক মনে।

সময়ের আবর্তে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য খন্ড-বিখন্ড হয়েছে, বিভক্তি এসেছে চেতনায়। জাতীয় লক্ষ্যও অনেক সময় ম্রীয়মান হয়েছে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সরকারী চাকুরীজীবিদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখে আমরা প্রায় অভ্যস্ত , কিন্তু শিক্ষক সমাজে অবক্ষয় ? শিক্ষকতা পেশায় থেকে অনেকেরই চারিত্রিক স্খলন নির্মমভাবে দুঃশ্চিন্তা এনে দিয়েছে অভিভাবক সমাজে। এক সময় এদেশে শিক্ষার হার খুব কম ছিল। বলা হত- অশিক্ষিত জাতি এবং বর্বর জাতির মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। অথচ বর্তমানে শিক্ষার হার যথেষ্ট হলেও মানুষের আচার আচরণের মধ্যে পাশবিকতা বিরাজ করছে। মানবিক গুনাবলি থেকে এবং পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে গোটা সমাজ। সাধারণ মানুষ অন্তর্গত ন্যায়বোধের দ্বারা নির্দেশিত পথে চলতে পারছে না। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ও জীবনধারায় ঘুষ-সুদ দুর্নীতি যেন অনিবার্য হয়ে উঠেছে ! সমাজে দুর্নীতিগ্রস্থ্য ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা নানা রকম ভীতি সৃষ্টি করে সাধারণের জীবন যাপনকে দুঃসহ ও অসুস্থ্য করে তুলেছে।

বিস্ময়ের ব্যাপার আমরাই ওদের অবস্থানকে শক্ত করার সুযোগ দিচ্ছি। ভীতি সৃষ্টিকারী গোষ্ঠির হুমকি মেনে নিচ্ছি ; অন্যের বাঁচা মরা নিয়ে টুঁ শব্দ করি না। কীভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে হবে তা জেনেও উদ্যেগী হই না। কত শিশু ও নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন তার সঠিক কোন হিসেব নেই, সব ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে আসে না। সবটার প্রতিবাদও হয় না, অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে চুপ থাকে, যে দু’একটির প্রতিবাদ হয় তার বিচার কার্য চলতে থাকে বছরের পর বছর। আমাদের সমাজে নারী ও শিশুর প্রতি যে আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি তা বেড়েই চলছে দিনের পর দিন, তা মূল্যবোধের অভাবে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেবল সরকারের উপর দায়ভার চাপিয়ে বসে থাকলে সমস্যা নিরসনে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া সমুচিত না। সমস্যার মূল জায়গাটিতে পৌঁছাতে হবে।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ অপরিহার্য। সমাজে অন্যায় অনাচারের প্রতিবাদ-আন্দোলন করতে গিয়ে বিভ্রান্তিময় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে আজকাল। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে পাওয়া যায়- একসময়ের “নারীমুক্তি আন্দোলন” আজ “নারীবাদী আন্দোলন” এ ঠেকেছে ; যা সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের। জাতীয় নানা সমস্যার প্রেক্ষিতে জাতীয় মুক্তির থেকে নারীমুক্তির বিষয়কে সম্পূর্ণ আলাদা করে নেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

নারী প্রসঙ্গে আসা এজন্য যে- নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রে বা সমাজে বিরাজমান পরিস্থিতি অনুকুলে আসা বাঞ্ঝনীয়। চেতনাগত দিক থেকে নারী পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য, প্রতিদ্বন্দ্বীতা, অস্পষ্টতা, কুসংষ্কারাচ্ছন্ন প্রচলিত ধারা …. এসবকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করার মন মানসিকতা গঠন হওয়া জরুরী। এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া দরকার সমাজের প্রত্যেককেই। অন্যের গোঁড়ামি, মূর্খতা, ধুর্ততা, কুসংস্কার, অন্ধত্ব, এসবের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ও সচেতন হওয়া বা মুখ খোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এসবই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় মানুষের সুস্থ্য সুন্দর মননের বিকাশ পথে। নেতিবাচক বিষয়গুলো মুখ বুজে দেখার এবং ভোগ করার মধ্যে মহত্ত¡ আছে কিছু !
অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে তার শাস্তির বিধান স্বরুপ পরবর্তী পদক্ষেপ প্রশাসনের উপরে একশতভাগ বর্তায়, কিন্তু অপরাধ প্রবণতা রোধ করার প্রধান উপায় শৈশবকে সুষ্ঠ-সুন্দর ও সঠিক পথে চালিত করা। এ শিক্ষা প্রদানের ভার পরিবারের। প্রত্যেক শিশুর পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা পরিবারের অভিভাবকের উপরেই ন্যাস্ত। সমাজের পথ শিশু বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের সঠিক পথ দেখানো, তাদের নষ্ট হওয়া থেকে টেনে ধরা দেশের নাগরিক তথা আমাদেরই কাজ । অথচ কতিপয় বিত্তশালী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে ওদেরকে।

নৈতিক মূল্যবোধের এই ধ্বংসাত্মক চিত্র রোধে কর্মসূচী গ্রহণ করা এখন অতীব প্রয়োজন। আলো ও অন্ধকারের বিপরীতমূখী অবস্থানে ব্যক্তির মধ্যে চিন্তা বা বোধের জন্ম হয়। মানুষের জন্যই মানসিকতা শব্দটি নির্ধারিত ; এই মানসিক পরিভ্রমণ দ্বারাই সঠিক বা ভুল নির্ণয় করা যায়। আর এই শিক্ষা ও মূল্যবোধ এর ভিত্তি প্রথমতঃ- তৈরি হয় শৈশবে পরিবার থেকে ভদ্রতা, শিষ্টাচার, সততা, নিয়ম-নিষ্ঠা, সহনশীলতা, ন্যায়-পরায়ণতা ইত্যাদি দ্বারা। দ্বিতীয়তঃ- সূচনা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আমাদের প্রয়োজন নতুন প্রজন্মের কাছে সুন্দর ও সঠিক ভাবনা তুলে ধরা। অথচ আমরা খোঁজ রাখছি না আমাদের চারপাশেই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা কিভাবে ভুল পথে নীরবে হাঁটছে। তাদের হাতের নাগালে পর্ণ ছবি, অশ্লীল ভিডিও, নেশাজাত দ্রব্যের সহজলভ্যতা ; রাতে দেরি করে বাড়ি ফেরা। ওদের অনেকেরই অভিভাবকেরা দেখেও বিষয়টা তেমন আমলে নেন না। কোথায় ছিল ? কেন ছিল ? এসব প্রশ্ন তাৎক্ষণিক। এটুকু খোঁজ নিলেই বিপথে পা বাড়ানো সন্তান সুপথে ফেরে কি ?

আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়া নেশাজাত দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট ছেলেটি পরবর্তী সাংসারিক জীবনে অর্থের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করে। আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা। যা সমাজকে কলুষিত করছে ¯েøা পয়জনের মত। এই নিশ্চিত অধঃপতন ঠেকাতে শিক্ষা জীবনেই শিক্ষার্থীদের মাঝে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব সমান ভাবে দেওয়া প্রয়োজন। তা হতে হবে ব্যবহারিক কাজের মধ্যে, তাদের বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজে অন্তর্ভুক্ত করে নষ্ট চিন্তা থেকে দূরে রাখতে হবে। তাছাড়া পাঠ্য বইয়ের বাইরেও শিক্ষামূলক গল্প কাহিনী পড়ায় আগ্রহী করে তোলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ভুমিকা রাখে।

হাতে গোনা কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী তাদের উপর ছুঁড়ে দেওয়া ক্যারিয়ারের লক্ষ্যে অবিরাম পাঠ্যপুস্তকে নিমগ্ন থাকে। অধিকাংশই শ্রেণি-পাঠের পড়াশুনার বাইরে বেশিরভাগ সময়েই আড্ডা, এখানে ওখানে জোট বেঁধে হাসি তামাসা, বিদেশি চ্যানেলের অপসংস্কৃতি অনুসরণ, এমনকি মুঠোর মধ্যে ইউটিউব এ নানা আজেবাজে-অপদৃশ্য দেখা ইত্যাদিতে সময় অপচয় করে। কিংবা পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্য বই পড়া যে দু’চারজন আছে তাদেরও অধিকাংশই যৌনতা সম্বলিত নিম্নশ্রেণির গল্প-উপন্যাসের পাঠক। দেশের লক্ষ্য লক্ষ্য ছেলেমেয়েকে নৈতিকশিক্ষা সম্বলিত, শিক্ষণীয় বই ধরাতে হবে। মূল্যবোধ প্রসঙ্গ থেকে যে বই প্রসঙ্গে চলে এসেছি ; অবশ্যই তা অস্বাভাবিক মনে করছি না। সত্যি বলতে- সন্তানকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে পরিবার, সমাজ, বা রাষ্ট্রে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজন তার নৈতিক ও মানসিক সমৃদ্ধি। প্রয়োজন মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা। আমি ভালোবাসি আমার দেশকে, আমি প্রত্যেকদিন দেখতে চাই সুন্দর বাংলাদেশকে, আর এ জন্য শিশু থেকেই তাকে স্থিরতা ও অধ্যাবসায় এর মধ্যে অভ্যস্ত করে তোলা জরুরী।
মূল্যবোধ ব্যক্তি জীবনের আচরণগত বৈপরীত্য দূর করতে সক্ষম। সমাজে যে সব সংঘাত ঘটছে একমাত্র মূল্যবোধ অবক্ষয়ের কারণে, নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ করে এসব সংঘাত এড়ানো সম্ভব। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সহজ ; সমাজ রাষ্ট্রের নিশ্চিত অধঃপতন ঠেকাতে তাই- নৈতিক মূল্যবোধ এর অবক্ষয় রোধ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তাই সমাজে বা ব্যক্তি জীবনে নৈতিক মূল্যবোধের সর্বগ্রাসী অবক্ষয় থামাতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারকে বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। বিজয়ের মাস স্মরণে এটাই হোক আমাদের সবার সর্বোচ্চ অঙ্গিকার।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here