কলকাতা : বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, পুলিশ কর্মীর মৃত্যু সব মিলিয়ে ভারতে ষোড়শতম লোকসভার নয় দফা ভোটের ষষ্ট পর্বের ভোট সম্পন্ন হল বৃহস্পতিবার। এদফায় ভোট হল ১০ রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১১৭ টি আসনে। এরমধ্যে আছে তামিলনাড়ুর ৩৯ টি, মহারাষ্ট্রের ১৯টি, উত্তরপ্রদেশের ১২টি, মধ্যপ্রদেশের ১০টি, বিহার ও ছত্রিশগড়ের ৭টি করে আসন, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের ৬টি করে আসন, রাজস্থানের ৫টি, ঝাড়খন্ডের ৪টি, কাশ্মীরের ১টি এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুদুচেরির ১টি মাত্র আসন।

এদিন সকাল ৭ টায় শুরু হয় ভোট চলে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত। যদিও মাওবাদী অধ্যুষিত কিছু কিছু জায়গায় বিকেল চারটায় শেষ হবে ভোটদান প্রক্রিয়া। শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকলেও হিংসা এড়ানো যায়নি।

অসমের কোকড়াঝাড় লোকসভা কেন্দ্রের একটি বুথে হঠাৎ ৪০ জনের একটি দল এসে বুথ দখলের চেষ্টা করে। নিরাপত্তা রক্ষী ও ভোটকর্মীরা একযোগে বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় উত্তেজিত ভোটাররা। নিরাপত্তারক্ষীদের লক্ষ্য করে উন্মত্ত জনতা ইট,পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় এক পুলিশ কর্মীর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে গুরুতর জখম হন আরও দুই কর্মী। এদফায় গুয়াহাটি, নগাঁও, মঙ্গলদৈ, ধুবড়ি, বরপেতা এবং কোকরাঝাড় আসনে ভোট হয়। ছয় আসনে ৭৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ৯৪ লক্ষ ২১ হাজার ৯৭৭ জন। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন বিজেপির রমেন ডেকা, কংগ্রেসের কিরিপ চালিয়া, অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট প্রধান বদরুদ্দিন আজমল, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আর.এস.মুসাহারি।

রাজস্থানের ধৌসা লোকসভা কেন্দ্রের সাথা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ৫০ জনের এক দুবৃত্তকারীদের দল জোর করে ঢুকে পড়ে। এরপরই দুবৃত্তদের হঠাতে নিরাপত্তারক্ষীরা শূণ্যে ১৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। অন্য একটি ঘটনায় উত্তেজিত গ্রামবাসীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক ফটো সাংবাদিক সহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এদফায় রাজস্তানের আলওয়ার, বরতপুর, ধৌসা, টঙ্ক-সোয়াই, মাধোপুর এবং কারোলি-ধোলপুর এই ৫ আসনে ভোট হয়েছে। মোট ভোটার ছিলেন ৮০  লক্ষের উপর। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং এবং নমো নারায়ন মিনা, কংগ্রেসের তারকা প্রার্থী ক্রিকেটার মহম্মদ আজাহারউদ্দিন।

উত্তরপ্রদেশেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এরাজ্যে এদফায় ১২ টি আসনে ভোট হয়। মোট ভোটারের সংখ্যা দুই কোটির কাছাকাছি। মথুরা লোকসভা আসনের দলৌতপুর গ্রামে রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং বিজেপি’র কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত তিন জন। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকের যুদ্ধ চলে বলে খবর। এদফায় উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন সমাজবাদী পার্টি(এসপি)-র সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদব, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের বউ ডিম্পল যাদব, কংগ্রেস প্রার্থী রাজ বব্বর, দেশের বিদেশমন্ত্রী সলমান খুরশিদ, বিজেপি প্রার্থী হেমা মালিনী।

তামিলনাড়ুর ৩৯ টি আসনে এদফায় ভোট হয়। ৫,৫০,৪২,৮৭৬ জন ভোটার ৮৪৫ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারন করেন। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রার্থী দয়ানিধি মারান, এ.রাজা এবং টি.আর.বালু, কংগ্রেসের মনি শঙ্কর আইয়ার, পিএমকে নেতা আম্বুমনি রামাদোস। শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে আধাসামরিক বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ মিলিয়ে প্রায় ১.৪৭ লক্ষ নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।

মহারাষ্ট্রের ১৯ টি আসনেও এদিন ভোট হয়। এদফায় ৩৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এদফায় ৩১.৭ মিলিয়ান ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এদফায় ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা, সাবেক মন্ত্রী গুরুদাস কামাত, সাবেক সাংবাদিক সঞ্জয় নিরুপম, কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়া দত্ত, আম আদমি পার্টির টিকিটে দাঁড়ানো বিশিষ্ট সমাজসেবী মেধা পাটকরের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীদের। এদিন সকালেই লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন শাহরুখ খান থেকে শুরু করে আমির খান, ফারহা খান, প্রিতী জিন্টা, বিদ্যা ব্যালন, শশী কাপুর। সস্ত্রীক ভোট দিয়েছে শচীন তেন্ডুলকর।

উত্তরপ্রদেশে এদফায় ১২ টি আসনে ভোট হয়। মোট ভোটারের সংখ্যা দুই কোটির কাছাকাছি। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন সমাজবাদী পার্টি(এসপি)-র সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদব। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের স্ত্রী ডিম্পল যাদব, কংগ্রেস প্রার্থী রাজ বব্বর, বিজেপি প্রার্থী হেমা মালিনী, ফারুকাবাদ থেকে দেশের বিদেশমন্ত্রী সলমান খুরশিদ।

ষষ্ট দফায় ভোট হয়েছে মধ্যপ্রদেশের ১০ টি আসনে। এগুলি হল বিদিশা, দেওয়াস, ইন্ডোর, ধার, উজ্জয়ন, রতলম, মন্ডসৌর, খান্ডোয়া,খারগুঁয়ো এবং বেতুল। এদফায় ১১৮ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন মোট ১,৬৯,৬০,২১৩ জন ভোটার। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন বিদিশা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুষমা স্বরাজ, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংয়ের ভাই লক্ষণ সিং, কংগ্রেস প্রার্থী কান্তিলাল ভুরিয়া, রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি অরুন যাদব, আম আদপি পার্টির অলোক আগরওয়াল।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোট হয়েছে মাও অধ্যুষিত ছত্রিশগড় ও বিহারের ৭ টি করে আসনে। ছত্রিশগড়ের ৭ টি আসনে এবার ভোটারের সংখ্যা ১.১৮ কোটি। ১৫০ জন প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক মন্ত্রী বিজেপি’র রমেশ ব্যাস, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চরণদাস মহান্ত, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভাইজি করুনা শুক্লা।

অন্যদিকে বিহারের ৭টি আসনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১০৮ জন। ভোটারের সংখ্যা ১ কোটির কিছু বেশি। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা ভাগলপুর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ শাহনাজ হোসেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারিক আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতা মহম্মদ তসলিমুদ্দিন।

ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গেও। এদফায় রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, উত্তর মালদহ, দক্ষিণ মালদহ, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর এই ৬টি আসনে ভোট হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এদিন জঙ্গিপুরের শেখদিঘি হাইস্কুলের ২০,২১,২২ নম্বর বুথে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঢোকেন এই তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু বাধা দেননি প্রিসাইডিং অফিসাররা। এই ঘটনায় তিন প্রিসাইডিং অফিসারকে সরানো হয়েছে। মালদহের ৫৬ নম্বর বুথে ইভিএম খারাপ খাওয়ার থাকার কারনে সকালে দুই ঘন্টার ওপরে ভোটদানে বিঘ্ন ঘটে। ফলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয় মালদহ উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রস প্রার্থী মৌসম বেনজির নুর।

পশ্চিমবঙ্গে এদফায় ৭৮ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারন করেন ৮৩ লক্ষ ভোটার। এদফায় ভাগ্য নির্ধারণ হল রেলপ্রতিমন্ত্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরী, নগর উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি, স্বাস্থ্য ও জনকল্যান প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী, রাষ্ট্রপতির প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, বাংলা ব্যান্ড গায়ক সৌমিত্র রায়’এর মতো হেভিওয়েট প্রার্থীদের। এই দফার ছয়টি আসনই বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত। শেষবার ২০০৯ সালের নির্বাচনে ছয়টি আসনের মধ্যে একমাত্র বালুরঘাট ছাড়া প্রতিটি আসনেই জয় পেয়েছিল ১২৮ বছরের দল কংগ্রেস। বালুরঘাট আসনটি পেয়েছিল বামফ্রন্টের শরিক দল আরএসপি।

কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুডুচেরির একটি মাত্র আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৩০ জন প্রার্থী। মোট ভোটারের সংখ্যা ৯ লক্ষের ওপরে। কংগ্রেস, বিজেপি,ডিএমডিকে,এমডিএমকে, অল ইন্ডিয়া এনআর কংগ্রেস(এআইএনআরসি) সহ একাধিক দল এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ভাগ্য বাক্স বন্দী হল কংগ্রেস সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি.নারায়ানস্বামী, এআইএনআরসি নেতা আর.রাধাকৃষ্ণণর মতো হেভিওয়েট প্রার্থীদের।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here