স্টাফ রিপোর্টার :: ব্যবসা ও মুনাফার চিন্তা ত্যাগ করে লাগামহীন ভর্তি ও টিউশন ফি আদায়কারী বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন দেশের বাস্তবতা ও জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে ভর্তি ও টিউশন ফিসহ সকল প্রকার ব্যয় একটি সীমা পর্যন্ত নির্ধারিত রাখতে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) গ্রিন ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তৃতাকালে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সমাবর্তনে বিভিন্ন বিভাগের ১৪৬১জন শিক্ষার্থীকে সনদ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৬জন চ্যাঞ্চেলর ও ১০জন শিক্ষার্থী ভাইস-চ্যাঞ্চেলর স্বর্ণপদক লাভ করেন।
অনুষ্ঠানে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সমাবর্তন বক্তা অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফৈয়াজ খান বক্তৃতা করেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কিছু বেসরকারি বিশ^বিদালয় এখনও তাদের নূন্যতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এভাবে তারা বেশিদিন চলতে পারবে না। যারা মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে চলতে চান, যারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখনো যাননি এবং একাধিক ক্যাম্পাসে পাঠদান পরিচালনা করছেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া তারা আর কোন পথ খোলা রাখেননি। এ সময় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ অনেকটাই এগিয়ে ফেলায় গ্রিন ইউনিভার্সিটির প্রশংসা করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, সমাবর্তনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাজীবন শেষ হলেও কর্মজীবন এখানেই শুরু হলো। এখন থেকেই অর্জিত শিক্ষা ও জ্ঞান বাস্তব কর্মজীবনে প্রয়োগ করতে হবে। তিনি গ্রাজুয়েট উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করেন। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে সারাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট পর্যায়ের যে তিনটি বিশ^বিদ্যালয়ে ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণ’ দেয়া হয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি তার একটি হওয়ায় ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুধু পাঠ্য পুস্তকের মধ্যে আবিষ্ঠ থাকলে চলবে না, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি বিশ^ রাজনীতি নিয়েও ভাবতে হবে। কারণ, সুশিক্ষার সঙ্গে দক্ষ ও যোগ্য জনবলই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সফলতা বয়ে আনতে পারে।
সমাবর্তন বক্তা ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সমাবর্তনের মাধ্যমে তোমরা গ্রাজুয়েশন শেষ করছ মাত্র, ছাত্রজীবন বা শিক্ষাজীবন নয়; বরং এর মাধ্যমে শিক্ষাজীবনের নতুন আরেকটি অধ্যায়ে পা রাখতে যাচ্ছ। যেখানে বইয়ের পাশাপাশি কর্মজীবন-কর্মস্থল ও প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেবে।
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, মানসম্মত শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতন গ্রিন ইউনিভার্সিটি। এজন্য ইউএস-বাংলার গ্রুপের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তি অনুযায়ী গ্রুপটিতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে চাকরি পাচ্ছেন গ্রিনের শিক্ষার্থীরা।
তিনি জানান, নির্মিতব্য স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে; শিঘ্রই তা পূর্ণতা পাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র নির্দেশনার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনার সমন্বয় করে গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তোরত্তর সাফল্য বয়ে আনছে বলেও জানান তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির বলেন, বৈষয়িক দক্ষতা, নৈতিক মুল্যবোধ ও সমাজের প্রতি শিক্ষার্থীদের দায়বদ্ধ করে গড়ে তোলাই গ্রিন ইউনিভার্সিটি। তিনি আশা করেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রি গ্রাজুয়েটদের দৃষ্টি, চিন্তা ও মননকে এমনভাবে এমনভাবে বদলে দেবে, যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই আপন স্বজাতির স্বরূপ হয়ে উঠতে পারে। শিক্ষার্থীদেরকে দেহ-মন-আত্মিক ও বৈষয়িক বিকাশের সমন্বয় রেখে জীবনকে সফল ও সার্থক করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফৈয়াজ খান বলেন, উচ্চমানের শিক্ষা, গবেষণা ও সামাজিক প্রভাব প্রবণতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে গ্রিন ইউনিভার্সিটি। এজন্য বেশ কিছু বিদেশি বিশ^বিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক রয়েছে, যার মাধ্যমে শিক্ষক বিনিময় ও যৌথ গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার দ্বার অবারিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রিন ইউনিভার্সিটি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ইতোমধ্যেই চৌদ্দ বছর পার করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে রেখেছে সাফল্যের পরিচয়। ইউজিসি’র তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ২২৩শিক্ষক পাঠদান করছেন গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ে; যেখানে ২৮জন অধ্যাপক, ৯জন সহযোগী অধ্যাপক, ২৩জন সহকারী এবং ১২৬জন লেকচারার রয়েছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মিরপুর শেওড়াপাড়াস্থ দুটি ভবন ও আংশিকভাবে পূর্বাচল আমেরিকান সিটিস্থ স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হচ্ছে।