স্টাফ রিপোর্টার :: করোনাকালে বেড়েছে নারী উন্নয়নে বড় বাঁধা বাল্যবিবাহ, যা নারী নেতৃত্বের পথেও অন্তরায়। করোনাকালে স্কুলগুলো বন্ধ, কাজ না থাকা, যৌন সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়েছে বাল্যবিবাহের মাত্রা। বাল্যবিবাহ দূর করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার দায়বব্ধ। তাই বাল্যবিবাহ বন্ধে সবাইকে একসাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক রীতি-নীতির পরিবর্তন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। পটুয়াখালীতে এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা জানিয়েছেন।

 আন্তর্জাাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পটুয়াখালীতে যুব প্রচারাভিযানের আয়োজন করে প্রতীকি যুব সংসদ ও কেয়ার বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সকাল ১০ টায় শহরের সবুজবাগস্থ এসডিএ মিলনায়তনে ‘করোনা কালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনের রেখে পরিচালিত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
মধ্যে যুব সংলাপ এবং আলোচনা সভা। প্রতিকী যুব সংসদের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেয় পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আক্তার মোর্শেদ, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হেমায়েত উদ্দিন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বদরুল আমিন শামীম, পটুয়াখালী সদর থানার উপ পরিদর্শক রুনা লায়লা, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন, প্রতীকি যুব সংসদের চেয়ারপার্সন মো: আমিনুল ইসলাম ফিরোজ মোস্তফা, সাব্বির হাসান সহ পটুয়াখালীর বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা ।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এসডিএর নির্বাহী প্রধান কে এম এনায়েত হোসেন । অনুষ্ঠানে ৮০ জন যুব এবং তাদের অভিভাবকগণ অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে সামাজিকভাবে নারী-পুরুষের প্রকট বৈষম্য থাকার কারণেও নারীরা তাদের অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দারিদ্র্য ও অশিক্ষার জন্য পরিবারগুলো বাল্যবিবাহ দেয়। তাই পরিবারের দারিদ্র্য দূর করে যেন বাল্যবিবাহ রোধ করা যায় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। তরুণ সমাজকে এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজ চাইলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পারে। এ সময় বক্তারা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের আহবান জানান।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ-এর সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে বাল্যবিবাহের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থতম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বিয়ে হচ্ছে ১৫ বছরের আগেই। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ ছেলেদের সমান বা কিছু বেশি হলেও উচ্চশিক্ষা এবং চাকরিতে অনেক পিছিয়ে মেয়েরা। বর্তমানে সরকারি চাকুরেদের মধ্যে নারী মাত্র ২৭ শতাংশ। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

মেয়েদের এই পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ বাল্যবিবাহ। শিশু মেয়ে হয় শিশু মা। ফলে বাড়ে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার। বাল্যবিবাহ বন্ধে এখনই উদ্যোগ না নিলে চ্যালেঞ্জ হবে এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে। বিশ্বজুড়ে ১৮ বছরের বেশি বয়সে বিবাহিত মেয়েদের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ১৫ বছরের কম বয়সি বিবাহিত মেয়েরা।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে বিশ্বনেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড গার্লস সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচের বাল্যবিবাহকে শূন্য করা, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী নারীর বাল্যবিবাহের হার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি নির্মূল করার অঙ্গীকার করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here