এনামুল হক কাশেমী, বান্দরবান : বান্দরবান জেলার ২টি পৌর এলাকায় মাত্র ৩৫দিনের মধ্যে পর পর তিন দফা ভয়াবহ বন্যায় রাস্তাঘাট, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পানি সরবরাহ প্রকল্প,ড্রেনেজ এবং বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে নাগরিক সুবিধা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ ২টি পৌর এলাকার এক লাখেরও বেশি বাসিন্দা। বান্দরবান পৌর এলাকায় প্রায় ২০কোটি টাকা এবং লামা পৌর এলাকায় প্রায় ৭কোটি টাকার সম্পদ বিধস্ত ও বিনষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়ররা। বান্দরবান পৌর এলাকায় বন্যাউত্তর জরুরি নির্মাণ কাঠামোর পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্যে প্রয়োজন ১০কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। লামা পৌর কর্তৃপক্ষও বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে সরকারের কাছে।
বান্দরবান পৌর মেয়র মো.জাবেদ রেজা জানান, গত ২৪ জুন থেকে ১ আগষ্ট পর্যন্ত পর পর তিন দফায় প্রবল বর্ষণজনিত কারণে পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় জেলার অন্যান্য এলাকার মত জেলা শহরের নিচু এলাকাসমুহ তলিয়ে যায়। ৪/৫দিন ধরে বানের পানি ‘স্থিতি’ থাকায় পৌর শহরের পুরাতন বাসষ্টেশন থেকে নতুন বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কপথ,মধ্যমপাড়া,উজানিপাড়া,বালাঘাটা,কালাঘাটা,কলেজ রোড,রাজগুরু ক্যাংমোড়,হাইস্কুল রোড,প্রধান বাজার এলাকা,সার্কিট হাউসের নিচু সড়ক এলাকা,উজানিপাড়া,হাফেজঘোনা,হাসপাতাল রোড,ষ্টেডিয়াম থেকে বনরুপা পর্যন্ত সড়ক, ক্যচিংঘাটা,নতুুনব্রিজ থেকে শিশু পরিবার হয়ে বড়ুয়ার টেক পর্যন্ত, ক্যচিংঘাটা-নতুনপাড়া,মেম্বারপাড়া ও আর্মীপাড়া, লালমিয়ার চর এবং লাংগিপাড়া পর্যন্ত বড় বড় সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জোড়া-তালিয়ে কোথাও বাঁশের সাকো তৈরি করে নাগরিকরা যাতায়াত করছেন,তাও জীবনের অতিঝূঁকিতেই। বালাঘাটার লালমিয়ার চর সড়কের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কজেলের উত্তরে বানের পানির স্রোতে কালভার্টসহ সড়কের একাংশ ভেংগে গেছে, এখানে নির্মিত স্কুলের প্রাচিরেও ফাঁটল ধরেছে। ফলে মানুষের যাতায়াত অতিঝূঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শহরের রাজারমাঠের মোড়ে সড়কপথ ও কালভার্ট ধসে পড়তে পারে যে কোন সময়। এ সড়কের ভেতরে সুড়ংগ সৃষ্টি হয়েছে বানের পানি ঢুকে। কালাঘাটার সরকারি শিশু পরিবার আবাসনের সামনে থেকে প্রায় কোয়াটার কিমি এলাকা পর্যন্ত জলাবদ্ধতায় সয়লাব হয়ে পড়েছে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি নেমে যাবার ৭দিন পরও ওই এলাকা এখনও বানের পানিতে নিমজ্জিত থাকায় যানবাহন চলাচল এবং স্থানীয়দের যাতায়াত মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান পৌর কউন্সিলর অজিত দাশ ও দীলিপ বড়ুয়া।
পৌর সভার সচিব মো.তৌহিদুল ইসলাম জানান, বন্যায় পৌর শহরে প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিতরণসহ সরকারের উচ্চ মহলে জরুরি তহবিল হিসেবে বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে পৌর শহরের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত মেরামত ও সংস্কার কাজ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সরকারি নিয়মিত ও বিশেষ তহবিল বরাদ্দ না পেলে জরুরি মেরামত ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। কতারণ পৌরসভার নিজস্ব আয়ের অর্থদিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোগত মেরামত ও সংস্কার সম্ভব নয়। ফলে জনদুর্ভোগ বাড়বে।
পৌর মেয়ার মো.জাবেদ রেজা বলেন,বান্দরবান পৌর এলাকার বিধস্ত রাস্তাঘাটসমুহের জরুরি অবকাঠামোগত কাজের পুনর্বাসন করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ১০কোটি টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপির মাধ্যমে এ বিশেষ বরাদ্দ তহবিল চাওয়া হয়।
লামা পৌর মেয়র মো.আমির হোসেন আমু জানান, মাত্র ৩৫দিনের মধ্যে পর পর তিনদফা পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় লামা পৌর শহরের ৯টি ওয়ার্ডেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পানি সরবরাহ প্রকল্প, ক্ষেতের ফসল এবং বসতঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাসপাতাল এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনায় ৫টি বসতঘর বিধস্ত হয় এবং এতে নারী-শিশুসহ ৬জন নিহত হন মাটি চাপায়। গুরুতর আহত হয় ৫জন। পৌর মেয়র জানান, লামা শহরে বন্যায় প্রায় ৭কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় বিশেষ তহবিল বরাদ্দ পাওয়া না গেলে লামা পৌরবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে।