ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডেস্ক :: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পদতলে জনজীবন পিষ্ট হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে দৈনন্দিন পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পরিবার প্রধানদের উঠছে নাভিশ্বাস। ’সপ্তাহের ব্যবধানে আরেক দফা বাড়ল চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম।সঙ্গে ডিম, আদা, রসুন ও সবজি ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চ দাম মানুষকে ভোগাচ্ছে।… জীবন চালানোর প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। অভাব ও দারিদ্র্যের কশাঘাতে আজকের জীবনধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্যে জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পূর্ণ।

কেজিতে দুই টাকা বেড়ে সাত দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি খোলা চিনি রাজধানীর খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও এই চিনি কেজি ৭২ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর গত বছর একই সময় বিক্রি হয় ৬৫ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দামে লাগাম টানতে সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা ও প্যাকেটজাত ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দাম শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে।

বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এএইচএম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, চিনির দাম বেড়ে ৮০ টাকায় উঠে গেছে। আমরা কেজিতে পাঁচ টাকা করে দাম কমিয়েছি। এখন থেকে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হবে। শুক্রবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। আমরা আগস্টের এলসির মূল্য বিবেচনায় নিয়ে এই দামটা ঠিক করেছি। গড়ে প্রতি টন ৪১৯ ডলার ধরে কাজ করেছি। আজকে বাজারে ঢুকলে দেখা যাবে মূল্য প্রায় ৫০০ ডলারের কাছাকাছি চলে গেছে। সেজন্য পূর্বাভাস করা মুশকিল। তাই চিনির দাম প্রতি মাসে ঠিক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সফিকুজ্জামান বলেন, এই দামের ওপর ভিত্তি করে মিল গেট ও পাইকারি পর্যায়ে দাম আনুপাতিক হারে আমদানিকারকরা ঠিক করবেন। শুক্রবার থেকে দাম কার্যকরের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তদারকি করবে। এক দিনেই হয়তো নতুন দামে পৌঁছানো যাবে না। তবে নতুন করে বাজারে যে চিনি আসবে সেগুলো নতুনভাবে নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে হবে। মহামারির প্রভাবে জাহাজের ভাড়া প্রায় ৩৬০ শতাংশ বেড়েছে। ডালের দামও বেড়েছে। পশ্চিমের যেসব দেশ থেকে আমরা এসব পণ্য সংগ্রহ করি সেখানে মহামারির কারণে বাজার অস্থির হয়েছে। এসব বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

অন্যদিকে রাজধানীর বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, ডিম, ময়দা ও দেশি হলুদের দাম। বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৩৬ টাকা; যা সাত দিন আগে ১২৮ টাকায় বিক্রি হয়। বোতলজাত সয়াবিনের মধ্যে পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ৭১০ টাকা; যা সাত দিন আগে ৬৯০ টাকায় বিক্রি হয়।

সয়াবিনের পাশাপাশি পাম অয়েলের দামও বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগে ১১৮ টাকায় বিক্রি হয়। পাম অয়েল সুপার প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা; যা সাত দিন আগে ১২২ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি সাত দিনের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি হালি (৪ পিস) ফার্মের ডিম দুই টাকা বেড়ে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ময়দা তিন টাকা বেড়ে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি গলুদ সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যতালিকা টাঙানো এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য সব বাজারে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে দেশের সাধারণ মানুষের আরও একটু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here