মোঃ শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটে হত দরিদ্রদেও কাছ থেকে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, সরকারি ঘর প্রদানের নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুণের বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার হত দরিদ্ররা।

এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা সুলতানা বুশরাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শাহনাজ পারভীন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, মোস্তফা কামাল হারুণ ইউপি সদস্য হওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাবে টাকা গ্রহন ও আত্মসাত করছেন। জন্মনিবন্ধনের জন্যও টাকা গ্রহন করেন তিনি। গরীব ও অশিক্ষিত মানুষরা এক ধরণের বাধ্য হয়েই টাকা দেয় তাকে।

পিলজংগ গ্রামের দুই সন্তানের জনক জন্মান্ধ ফরহাদ সরদার বলেন, জন্মের পর থেকে চোখে দেখতে পাই না। হারুণ মেম্বরকে বলেছিলাম আমাকে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড দেন। সে আমার আইডি কার্ড ও ছবি নিয়েছে। এ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলে দুইশ টাকা নিয়েছেন। কিন’ অনেক দিন হয়ে গেলেও আমাকে কোন কার্ড দেয়নি। দুইটা বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে খূব কষ্টে আছি। যদি আমাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়া যায় তাহলে আমার খুব উপকার হবে।

দিন মজুর কুদ্দুস মোড়ল ও মোঃ খলিল শেখ বলে, ভাঙ্গা ঘরে থাকি। ঘর থেকে পানি পরে। মেম্বর সরকারি ঘর দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করেন। ৭-৮ মাস আগে ৩ হাজার টাকা করে দিয়েছি। কিন’ ঘর পাইনি। এখন ঘরের কথা বললে বলে সরকার যেদিন দিবে সেদিন পাবেন। ভ্যান চালক শাহজাহান শেখ, দিন মজুর ফারুকসহ এলাকার অনেকের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন হারুণ মেম্বর।

বিধোবা শাহিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পরে মেম্বরের কাছে ঘুরেছি বিধোবা কার্ডের জন্য। কার্ড পাওয়ার জন্য মেম্বরকে ৩‘শ টাকা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে ঝড়ে আমার ঘর পরে গেলে ঘর দেওয়ার জন্য এক হাজার টাকা চেয়েছিল। টাকা দিতে পারিনি, তাই ঘরও পাইনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুণকে ফোন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বলেন যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদের সাথে কথা বলেন আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন। যারা অভিযোগ দিয়েছে আমি তাদেরকে চিনি। আমার সাথে আপনাদের কথা বলার দরকার নেই। অভিযোগ দিয়েছে তদন্তে যা হয় হবে।

ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ শাহনাজ পারভীন বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুণের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিমা সুলতানা বুশরাকে আহবায়ক, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন গত ব্যবস’া গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাস বলেন, কারও ব্যক্তিগত কাজের জন্য গোটা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস’ ও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এটা আমার উপজেলা পরিষদ চায় না। পিলজংগ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সত্যতা পেলে শাস্তি হবে। ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে সচ্ছল ও অসচ্ছল মিলে ৮১৯ টি খানা ও তিন হাজার জনসংখ্যা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here