মোঃ শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের চিতলমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চুরির অপবাদ দিয়ে দুটি বসত বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও বাড়িতে নারীদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বসতঘরের সকল মালামাল শুধু ভাংচুর ও মারপিট করে খ্যান্ত হয়নি, ঘরের মধ্যে থেকে পোশাক এনে বাড়ির আঙ্গিনায় পুড়িয়ে ফেলেছে স্থানীয় প্রতিপক্ষরা। লুটপাট ও ভাংচুরকারিরা ওই বাড়ি থেকে ৮টি গরু, ১০ টি ছাগল, শতাধিক কবুতরসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক মালামাল লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।

সোমবার দুপুরে প্রকাশ্যে এমন বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটেছে মোল্লাহাট উপজেলার কুনিয়া গ্রামের সদর আলী মীরের বাড়িতে। ঘটনার একদিন অতিবাহিত হলেও থানায় কোন মামলা হয়নি।

মঙ্গলবার বিকেলেও ওই বাড়ির কোন পুরুষ লোক বাড়িতে আসেনি। তাদের কয়েকজন নিকট আত্মীয়, এক গৃহবধু ও একটি ছেলে ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন। রান্না ঘরে রান্না করার মতও ব্যবস্থা নেই। আত্মীয়দের বাড়ি থেকে দেওয়া খাবারে চলছে তাদের দিন।

সদর আলী মীরের পুত্রবধু মারধরের শিকার ইতি বেগম বলেন, দুপুরে হঠাৎ করে ইকবাল, সফিক ও ফেরদৌস আলমের নেতৃত্বে এলাকার ২৫-৩০ জন যুবক আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে থাকা সকলকে এলোপাথারি মারপিট শুরু করে সকলকে। আমার দুই ভাসুর মিজানুর ইসলাম ও আমিনুর ইসলাম প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়। তারা আমাদের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে সবকিছু ভাংচুর শুরু করে। আমরা চিৎকার শুরু করলে আমার জা সানজিদা বেগমের গলায় ছুরি ধরে তার কোল থেকে ১৮ মাসের বাচ্চা নিয়ে যায়। বাচ্চার গলায়ও ছুঢ়ি ধরে বলে চিৎকার করলে মেরে ফেলব। প্রায় দুই ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে তারা লোহার সিন্দুকে রাখা ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকাসহ সব কিছু নিয়ে চলে যায়। এতে আমাদের প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সদর আলী মীরের নাতি শিশু সাগর ইসলাম বলেন, হঠাৎ করে অনেক লোকজন ঢুকে আমাদের মারপিট শুরু করে। আমার বাবা ও চাচা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়। আমাদের দুটি ঘর ভাংচুর করে। সন্ত্রাসীরা আমাদের ঘরের ফ্রিজ, টেলিভিশন, আলমিরা, খাট, রান্নাঘর, সবকিছু ভাংচুর করে। ঘরের মধ্য থেকে জামাকাপড় নিয়ে পুড়িয়ে ফেলায়। যাওয়ার সময় গরু, ছাগল ও কবুতর নিয়ে যায় তারা। তাদের তান্ডব দেখে আমরা ভয়ে চুপ করেছিলাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি গ্রুপ সদর আলী মীরকে সায়েস্তা করার চেষ্টা করছিল। এর অংশ হিসেবে সাগর বিশ^াস নামের এক ব্যক্তিকে চুরির অপবাদ দিয়ে মারপিট করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সদর আলী ও তার ছেলেরা সাগরের সাথে চুরি করে এমন স্বীকারোক্তি নেয় তারা। তাদের বাড়িতে হামলা করার জন্য রবিবার স্থানীয় একটি বাড়িতে স্থানীয় মেশকাত আহমেদ, রেজ্জাক, ইউপি সদস্য এমদাদুল হক, ফেরদাউস আলম, শাহা মীর, সমীরসহ স্থানীয়রা সভা করে এই হামলা পরিকল্পনা করে। সোমবার দুপুরে ওই বাড়িতে হামলা হয়।

বাড়িতে থাকা নিকট আত্মীয় সাগরিকা ও মোঃ সোলায়মান ফকির বলেন, এমনভাবে হামলা করা হয়েছে যা বর্ণনাতীত। এই বাড়িতে এখন রান্না করে খাওয়ারও ব্যবস্থা নেই। থাকার খাটও ভাঙ্গা। প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাড়ির লোকরা। আমরা এসে থাকছি।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজচন্দ্র রায় বলেন, যে পরিবারটির ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তাদের নামে চুরি-ডাকাতির মামলা থাকায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here