বোস্টন থেকে: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে এখন ঠকিদের শাসনকাল চলছে। বর্তমানে দেশের মানুষ কঠিন দুঃসময় অতিক্রম করছে।

প্রতিদিন গুম হচ্ছে, মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে, নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে। ঘর থেকে বেরিয়ে কেউ আর ঘরে ফিরে যাবার নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা।

উনবিংশ শতাব্দিতে ভারতের ঠকিরা রাস্তা থেকে ধরে ধরে মানুষ গুম করতো। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার দেশে একই ধরনের কাজ করছে।

শুক্রবার বোস্টনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) নিউইংল্যান্ড শাখা আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষনে তিনি এসব কথা বলেন।

শুক্রবার বোস্টনের উপশহর সাউথ বোস্টনের হলিডে ইন হোটেলের মিলনায়তনে  নিউইংল্যান্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম সাইফুলের সভাপতিত্বে এবং উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, আজকের যিনি সাংস্কৃতিক মন্ত্রী বাংলাদেশের একজন পরিচিত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নুরের গাড়িতে কেবা কারা হামলা করেছিল।
আর এ কারনে বিএনপির নেতা কর্মিদেরকে হয়রানি করে তাদের উপর দেয়া হল মামলা। এরপর কথিত সেই আসামীদের কারও লাশ পাওয়া যাচ্ছে বগুড়ায় করতোয়া নদীর তীরে আবার কারও লাশ পাওয়া যাচ্ছে পুনর্ভবা নদীর ধারে। দেশে আইন আছে, আদালত আছে তবুও দিনের পর দিন বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড চলছেই। অদ্ভুত এক দেশে আমরা বাস করছি।
এরকম এক দুর্বিসহ সময় অতিক্রম করছে দেশের মানুষ। এর কারনটা হচ্ছে বিএনপি চেয়েছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন। হাসিনা যে ধরনের ব্যক্তি তাঁর দ্বারা কখনই ভালো, অবাধ ও শান্তিপুর্ণ নির্বাচন  হবে না।
যেমন শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেছিল যে বিএনপির অধীনে নির্বাচন বিশ্বাযোগ্য হবে না। তাই তিনি আন্দোলন করেছেন, বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়েছেন,একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি দেখে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের শান্তির জন্য, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার জন্য তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি মেনে নিয়েছিলেন।
এ ব্যবস্থার নির্বাচনে একটি দল বারবার ক্ষমতায় যাবার কোন সুযোগ ছিল না। একবার যে দল ক্ষমতায় গেছে পরে অন্য আরেকটি দল ক্ষমতায় গেছে। কারন তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে ভোট কারচুপি, জালিয়াতির কোন সুযোগ ছিল না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অনেকদিন ক্ষমতায় থাকতে চায় বলেই দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সংবিধান থেকে তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন। নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ তাদের নির্বাচনী মেনুফেষ্টে বলেননি তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠা পেলে বা ক্ষমতায় গেলে সংবিধান থেকে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করবেন।
ক্ষমতায় গিয়ে তাঁরা দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের দাবি তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জনগণের সাথে চরমভাবে বেঈমানি করেছেন। এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। শেখ হাসিনা এ কাজটি করেছেন এজন্যই যে, তিনি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চান।
কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা হতে দেবে না। দেশের মানুষ আর আওয়ামীলীগকে বিশ্বাস করে না। এই বিশ্বাসঘাতক ও জালিম সরকারকে উৎখাত করার জন্য অচিরেই বাংলার মানুষ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। তখন আপনাদের আর কোন পথ থাকবে না। তাই এখনও সময় আছে ৫ জানুয়ারি পাতানো নির্বাচন বাতিল করে দেশের মানুষের মৌলিক যে অধিকার, তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন। অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি এবং বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সহ তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ, নিউইংল্যান্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম সাইফুল, সাধারন সম্পাদক সোহরাব খান, নিউইংল্যান্ড বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা কাজী নুরুজ্জামান, ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, ড. করিম খন্দকার,  মোহাম্মদ হক, এটর্নি স্টীভ বর্ন ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউইংল্যান্ড (বেইন) এর সভাপতি তামান্না করিম প্রমুখ। সভার শুরুতে কোরান তেলাওয়াত করেন আইয়ুবুর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকলেই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা রোকেয়া জামান এলিজার নেতৃত্বে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন রোকেয়া জামান এলিজা। দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মিল্টন, শিল্পী,প্রিয়া ইসলাম, জুনকো ও অতিথি শিল্পী কৌশলী ইমা। শেষে নৈশ্যভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here