ঢাকা: রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রায় ১০০ দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে ছয় থেকে সাতটি দোকান সবচেয়ে বেশিক্ষতিগ্রস্থহয়েছে।

1892রোববার বেলা সোয়া ১১টায় মলের ষষ্ঠ তলায় একটি জুতার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট একযোগে প্রায় ১০ ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে এ ভবনটিতে চতুর্থ দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।

এ দিকে আগুনের সময় শপিংমলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপুল পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল দেয়। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা জানিয়েছেন, শপিংমলের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। তা ছাড়া ভবনটি কাচ দিয়ে ঘেরা থাকায় ধোঁয়া বের হতে পারেনি, যার কারণে অক্সিজেন মাক্স পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে করেছেন তারা। এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ এ শপিং কমপ্লেক্সে লাগোয়া দু’টি ভবন রয়েছে। এর পান্থপথ সড়কমুখী আট তলা ভবন এবং পেছনের ১৯ তলা ভবন। গতকাল রোববার সকালে শপিংমলের দোকানগুলো একে একে খুলতে শুরু করে। তখনো ক্রেতাদের ভিড় জমতে শুরু করেনি।

আগুনের সূত্রপাত হওয়া লেভেল-৬-এর ৬০ নম্বর দোকানের পাশের ৫৯ নম্বর দোকানের মালিক তানভির জানান, বেলা সোয়া ১১টায় তিনি ব্যাংকে যাবেন বলে ক্যাশ থেকে টাকা বের করে গুনছিলেন। এ সময় তার পাশের দোকানের গোডাউনে (মূল দোকানের সাথে লাগানো বোর্ড দিয়ে পার্টিশন করা) একটি শব্দ হয়। তিনি সেলসম্যানকে বলেন, ‘কী হয়েছে দেখো তো, ভূমিকম্প শুরু হলো কি না’। সেলসম্যান দোকান থেকে বের হয়েই চিৎকার দিয়ে বলে ‘বস পাশের দোকানে আগুন লাগছে’। আমি তাড়াতাড়ি ওই দোকানে গিয়ে চিৎকার করে বললাম, চাচা আপনার দোকানে আগুন লাগছে। এরপর নাইট্রোজেন গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে নিজের দোকান সেভ করতে ছিটাতে শুরু করলাম। কিছু সময়ের মধ্যে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের লোকজন এসে বলল, ‘আপনারা চলে যান আমরা দেখছি’। তারপরও নিজের দোকান ছেড়ে যেতে চাইছিলাম না। কিন্তু প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে সেখানে দাঁড়াতে পারিনি। তানভির বলেন, তার দোকানে জুতা ও ব্যাগসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার মাল রয়েছে। মূল্যবান কাগজপত্র, গাড়ির চাবি, নগদটাকাসহ কিছুই বের করতে পারিনি। তার মতে, যে গোডাউনে আগুন লেগেছে সেটি ৬০ নম্বর স্মার্ট নামক দোকান।

ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে প্রাথমে আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের ভয়াবহতার কারণে সর্বশেষ ২৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। মাঝপথে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো থেকে পানি শেষ হয়ে গেলেও পরে নতুন করে কাজ শুরু করে তারা। আগুনের কারণে শপিংমলের দোকানব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বের হতে পারলেও ১১ জন বের হতে পারেননি। তারা কেউ কেউ ভবনের ছাদে চলে যান। পরে ফায়ার সার্ভিস এসকেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) ব্যবহার করে তাদের নামিয়ে আনে। বেলা ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান সাংবাদিকদের জানান, আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ভেতরে অনেক দাহ্যপদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে।

সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের আগুন আয়ত্তে আনা হয়েছে। তবে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরো সময় লাগবে। আগুনে প্রায় ১০০ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ছয় থেকে সাতটি দোকান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থহয়েছে। আগামী বুধবারের আগে বসুন্ধরা সিটি খোলা সম্ভব হবে না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here