সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে নতুল্লাবাদ বাসটার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক এখন ধানক্ষেতে পরিনত হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা কালকিনির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্যস্ততম এ মহাসড়কটি গত ছয়মাস ধরে বেহাল দশার পরে রয়েছে। ফলে এ মহাসড়কে প্রতিনিয়ত সড়ক দূর্ঘটনা ও শত শত যানবাহন বিকল হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও সড়কটি দেখার যেন কেউ নেই। যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে গত ঈদুল ফিতরের পূর্বে মহাসড়কটি সংস্কারের জন্য প্রায় সাত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। ঠিকাদার লোক দেখানো ভাবে জোড়াতালি দিয়ে নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে কয়েকটি গর্ত ভরাট করে পুরো টাকাই আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরি ভিত্তিতে ব্যস্ততম এ মহাসড়টি সংস্কার করা না হলে আগামি সংসদ নির্বাচনে এ মহাসড়কটিই দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দক্ষিণাঞ্চলের র্শীর্ষ স্থানীয় নেতারা এ মহাসড়কটিকে “ডিজিটাল মহাসড়ক” আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে মাঠে নেমেছেন। ভুক্তভোগীরা দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়টি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যস্ততম এ মহাসড়কের শিকারপুর ও দোয়ারিকা নদীর ওপর দুটি সেতু চালু হওয়ার পর সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা তথা দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মহাসড়কের গুরুত্ব অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ব্যস্ততম রুটে প্রতিদিন হাজার-হাজার যানবাহন চলাচল করলেও মহাসড়কের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও দীর্ঘদিনেও সড়কটি প্রশস্ত না করায় দিন দিন সড়কটি ভেঙ্গে চুরে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এরইমধ্যে গত আষাঢ়ের শুরু থেকে একটানা প্রবল বর্ষণের ফলে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টিসহ রাস্তার কার্পেটিং উঠে যায়। যে কারনে গৌরনদী থেকে বরিশাল সদরের ৩০ মিনিট দূরত্বের পথ অতিক্রম করতে এখন তিন ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে।

এ রুটের পরিবহন চালক কালু ঘরামী, শাহীন তালুকদারসহ একাধিক চালকেরা জানান, ব্যস্ততম এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার পরিবহনে অসংখ্য যাত্রীরা দেশের বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করতে গিয়ে রিতিমতো চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নজরদারী না থাকা, রিপিয়ারিং না করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার কারনে মহাসড়কটি এখন মরনফাঁদে পরিনত হয়েছে। ফলে প্রতিদিন শত শত যানবাহন বিকল হয়ে মালিকদের পথে বসার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বরিশাল সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগের উপ-প্রকৌশলী মোঃ নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটারের অধিক ক্ষতিগ্রস্থ ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক সংস্কারের জন্য গত ঈদুল ফিতরের পূর্বে ৬ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কাজটি সম্পন্নের দায়িত্ব পান সিরাজগঞ্জের জনৈক ঠিকাদার মোঃ ইসমাইল হোসেন। গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, ওইসময় মহাসড়ক সংস্কারের জন্য ঠিকাদারের লোকজন নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী নিয়ে মাহিলাড়া ও বাটাজোর বাসষ্ট্যান্ডে আসে। এ সময় স্থানীয়রা নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে বাঁধা প্রদান করে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি আরো জানান, বোল্ডার ভাঙ্গা পাথর দিয়ে মহাসড়ক সংস্কারের কথা থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন মাটি মাখা সিংঙ্গেল্‌স (মরা পাথর) দিয়ে কাজ করতে আসে। গৌরনদীর কটকস্থল গ্রামের আনিসুর রহমান জানান, মহাসড়ক সংস্কারের নামে দুর্নীতির মহা বাতাস শুরু হওয়ায় এলাকাবাসি সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয়। নামপ্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার দলীয় একাধিক নেতারা জানান, ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে মহাসড়কের সংস্কার কার সম্পন্নের জন্য ঠিকাদার প্রভাবশালী কতিপয় সাংসদ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দিয়ে লোকদেখানো ভাবে কাজ শুরু করেছিলেন। ওইসময় কোন একমতে বিট বালু দিয়ে খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছিলো। যা ১০দিন যেতে না যেতেই পূর্ণরায় মহাসড়কের মধ্যে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে ধান ক্ষেতে পরিনত হয়েছে।

বরিশাল বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কে খানা খন্দকের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। জরুরি ভিত্তিতে ব্যস্ততম এ মহাসড়কটি সংস্কারের জন্য বাস মালিক সমিতির উদ্যোগে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে স্থানীয় আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা-কর্মীরা জানান, ইতোমধ্যে সরকারের অন্যান্য উন্নয়নকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রধান বিরোধীদল বিএনপির দক্ষিণাঞ্চলের র্শীর্ষ পর্যায়ের কতিপয় নেতারা মহাসড়কটিকে ইস্যু বানিয়ে মাঠে রাজনিতী শুরু করেছেন। তারা খানাখন্দে ভরা এ মহাসড়কটিকে “ডিজিটাল মহাসড়ক” আখ্যা দিয়ে সরকারের উন্নয়ন প্রশ্নে জনগনের মাঝে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। সূত্রটি আরো জানিয়েছেন, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কালকিনির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মহাসড়ক হচ্ছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক। জরুরি ভিত্তিতে এ মহাসড়কটি সংস্কার করা না হলে এর ব্যর্থতার দ্বায়ভার আগামি সংসদ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামীলীগের প্রার্থীদেরই নিতে হবে। গত একমাস পূর্বে সংস্কার কাজের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ নাসির উদ্দিন ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, এখনো মহাসড়ক সংস্কারের ডিবিএসটির কাজ শুরু করা হয়নি। ভারত থেকে উন্নতমানের পাথর এনে ডিবিএসটির কাজ শুরু করা হবে। গত একমাসেও ডিবিএসটির কাজ শুরু করা হয়নি। ফলে এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত যানবাহন বিকলসহ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

ব্যস্ততম মহাসড়কটি এখন ধানক্ষেতে পরিনত হওয়ার সতত্যা স্বীকার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ্‌ মোঃ শামস মোকাদ্দেস বলেন, মহাসড়কটি উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সে পরিমাণ অর্থ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নেই। সড়কটি উন্নয়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়টি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মামুনুর রশিদ/বরিশাল

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here