বদলাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী ফল বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে :: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হ্যাকিংজনিত কারচুপির অভিযোগ ওঠা তিন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে প্রথম দফায় উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানানো হয়েছে। কারচুপির অভিযোগ ওঠা অপর দুই অঙ্গরাজ্য মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ায়ও শিগগিরই ভোট পুনর্গণনার আবেদন করা হবে। ভোট পুনর্গণনার জন্য আবেদনের চূড়ান্ত সময়সীমার দিন গত শুক্রবার গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইন উইসকনসিনের নির্বাচন কমিশনে আবেদনটি জমা দেন।
শুক্রবার এক টুইটে উইসকনসিনের নির্বাচন কমিশনও ভোট পুনর্গণনার আবেদন হাতে পাওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই বিস্তারিত জানানো হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে জিল স্টেইনও একটি টুইট করেছেন। টুইটে তিনি জানিয়েছেন আগামী সপ্তাহে উইসকনসিনের ভোট পুনর্গণনা শুরু হতে পারে। স্টেইনের ওই আবেদনে, উইসকনসিনে গত বছরের চেয়ে এ বছর ভোটদান থেকে বিরত থাকা ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
উইসকনসিনে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে খুবই কম ব্যবধানের জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পুনর্গণনায় উইসকনসিনের ফলাফল পাল্টে গেলেই যে হিলারি জিতে যাবেন তা নয়। এর জন্য মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার ফলাফলের ওপরও নির্ভর করবে। উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে ইলেক্টোরাল ভোট ছিল যথাক্রমে ১০, ১৬ ও ২০।  পেনসিলভানিয়ায় ভোট পুনর্গণনার আবেদনের সময়সীমা সোমবার আর মিশিগানের সময়সীমা বুধবার পর্যন্ত।
১০টি ইলেকটোরাল ভোটের এই রাজ‌্যে ঘোষিত ফল অনুযায়ী ২৭ হাজার ভোটে জিতেছেন ট্রাম্প। ভোট পুনর্গণনায় ট্রাম্পের ১০টি ইলেকটোরাল ভোট হাতছাড়া হলেও ফলাফলে হেরফের হবে না। কেননা ২৯০ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে সুস্পষ্ট ব‌্যবধানে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। হিলারির ইলেকটোরাল ভোট সংখ‌্যা ২৩২। উইসকনসিনের চিত্র বদলে গেলে ট্রাম্পের ভোট ১০টি কমে হিলারির ১০টি বাড়লেও প্রয়োজনীয় ২৭০টি থেকেই যাচ্ছে ট্রাম্পের।
উইসকনসিনে অন‌্য দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টাইন পেয়েছেন ৩১ হাজার ৬ ভোট, গ্যারি জনসন পেয়েছেন এক লাখ ৬ হাজার ভোট।
উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনার ফল না বদলালেও যদি অন‌্য দুটি রাজ‌্যেও ভোট পুনর্গণনার হয় এবং তিনটিতে হিলারি জয় পান, তবে ফল উল্টে যাবে। তখন ইলেকটোরাল কলেজে ২৭৮টি ভোট হয়ে যাবে হিলারির, অন‌্যদিকে ২৫৪টিতে নেমে আসবে ট্রাম্পের ভোট।
এ তিনটি অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনার আবেদনের খরচ মেটানোর জন্য জিল স্টেইন অনলাইনে ফান্ড খুলেছেন সেখানে ৫৩ লাখ ডলার অর্থ সগ্রহ হয়েছে। এ পর্যন্ত যে অর্থ সংগৃহীত হয়েছে তা দিয়ে উইসকনসিন আর পেনসিলভানিয়ার ব্যয় মেটানো যাবে। তবে মিশিগানে আবেদনের জন্য আরও টাকার প্রয়োজন পড়বে। স্টেইনের ওই তহবিল সংগ্রহের পেইজে বলা হয়েছে, তিন অঙ্গরাজ্যে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের ফলাফলে হ্যাকিংজনিত কারচুপির অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হয়ে ওঠার পর জিল স্টেইন এ পদক্ষেপ নেন। বিপুল সংখ্যক অ্যাকটিভিস্ট  এবং অ্যাকাডেমিশিয়ান এই দাবি তুলেছেন। তারা মনে করছেন, বিদেশি হ্যাকাররা পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন ও মিশিগান এ তিন অঙ্গরাজ্যের ফলাফল প্রভাবিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিন অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনি ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য হিলারির প্রতিও আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা।
তবে এখনও কারচুপির অকাট্য প্রমাণ পায়নি ডেমোক্র্যাটরা। তাই ফলাফল চ্যালেঞ্জের ব্যাপারেও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি হিলারি।
ভোট পুনর্গণনার আবেদনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে স্টেইন বলেন, ‘ভোটে অনিয়ম হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ থাকার দাবি ওঠায়’ আমি এ পদক্ষেপ নিয়েছি। মোট ভোটের হিসেবে যে উল্লেখযোগ্য অসামঞ্জস্য রয়েছে তা ডাটা বিশ্লেষণ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে।’
স্টেইন আরও বলেন, ‘২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে এ উদ্বেগগুলোর বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমরা এমন নির্বাচন চাই যার ওপর আমাদের আস্থা থাকবে।’
এদিকে ভোট পর্যালোচনায় গঠিত মার্কিন সরকারের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ইউএস ইলেকশন অ্যাসিট্যান্ট কমিশনের একজন উপদেষ্টা বারবারা সিমন্স গত বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি ভোট পুনগণনায় আগ্রহী’। ভোট-পরবর্তী ব্যালট পেপারগুলো আবারও পরীক্ষানীরিক্ষা করে দেখা দরকার বলে মনে করছেন তিনি। ফলাফল পর্যালোচনায় নিজের অন্তর্ভূক্তির ধরন সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি সিমন্স।
পুনরায় গণনার সময় প্রতিটি ব্যালটে ভোটারের মনোভাবও পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মাইকেল হ্যাস। এই রাজ্যের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যাপারেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সেটিরও পর্যালোচনা চলছে পৃথক আরেকটি গ্রুপের মাধ্যমে।
গত ৮ নভেম্বরের ভোটে জয়ী ইলেকটোরাল কলেজের সদস‌্যরা আগামী ১৯ ডিসেম্বর ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here