আ হ ম ফয়সল :: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাহিরে প্রথম সফর করেন। সেদিন হেলিকপ্টার যোগে প্রথমে তিনি পৌছান লক্ষ্মীপুর জেলার (তৎকালিন নোয়াখালী) রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে। বঙ্গবন্ধুর আগমকে ঘিরে খোলা স্থানটিতে মাটির একটি উঁচু স্থান (মঞ্চ) নির্মান করা হয়। যেখানে দাঁয়িয়ে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখার জন্য সমবেত হয়েছিলো কয়েক লাখ মানুষ। বঙ্গবন্ধু ভাষণ শেষে ওড়া-কোদাল নিয়ে নিজ হাতে মাটি কেটে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মানের কাজ উদ্বোধন করেন। সেটি এখন আলেকজান্ডার (রামগতি)-সোনাপুর (নোয়াখালী) আঞ্চলিক সড়ক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সড়কটির পাশে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি ‘শেখের কিল্লা’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর স্বেচ্ছাশ্রম, উৎপাদন ও সমাবেশ থেকে গ্রামোউন্নয়ন ডাক পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত শেখের কিল্লার স্মৃতি রক্ষায় ৪৮ বছরেও রাষ্ট্রিয়ভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু যে স্থানটিতে দাড়িয়ে ভাষন দিয়েছিলেন সেখানে বেসরকারি সংস্থা ‘র্ডপ’ স্থানটির গুরুত্ব ও ইতিহাসসহ ২০১৩ সালে নামফলক নির্মান করে। যা এলাকা ও দেশ-বিদেশের পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষন করছে। তখন থেকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিকে সংরক্ষণের জন্য তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দ্বারস্থ হন। ফলে কয়েকটি মন্ত্রণালয় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিঠি চালাচালি করলেও শেষ পর্যন্ত কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ চলতি ২০২০ সাল মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত শেখের কিল্লা স্থানটি পরিদর্শণে আসেন। স্থানীয় সুধি সমাবেশে ভূমিমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্নিত সঠিক স্থানটি চিহ্নিত করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্মৃতি স্তম্ভ’ নির্মানের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয়রা হতাশায় রয়েছেন।

‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্মৃতি ইতিহাস রক্ষা কমিটি’র সভাপতি হাজী মো: উল্ল্যাহ সওদাগর জানান, আমরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত শেখের কিল্লা স্থানে ২৪ শতাংশ জমি সীমানা করে স্থানটিতে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখ স্মরণে ২০টি সীমানা পিলার স্থাপন করে রেখেছি। কমিটি’র সদস্য সচিব মো: মোমিন উল্যাহ জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রামগতিতে বঙ্গবন্ধুর আগমনের ৪৮ বছর পূর্তিতে সার্বজনীন কর্মসূচি পালন করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষা করতে গিয়ে এলাকারও উন্নয়ন হবে।

রামগতি থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং সেদিনের জনসভার অন্যতম নেতৃত্বদানকারী এএইচএম নোমান বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের একান্ত আশা-আবেদন ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা’ স্থানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ, পর্যটক রেষ্ট হাউজ, স্থানীয় কৃষ্টি কালচার, যাদুঘর, উন্নয়ন দ্বার, তাঁর ভাষণ ইতিহাসসহ পাঠাগার সম্বলিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্বপ্ন কমপ্লেক্স’ স্থাপন করা হোক। এতে করে স্থানটির গুরুত্ব তৈরী হবে এবং মেঘনা নদীসহ রামগতি উপজেলা একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে।

স্থানীয়রা জাতির পিতার স্মৃতি আকড়ে ধরে রাখতে চায়। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চায় বিশ্ব বরেণ্য শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি। শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয়ভাবেও শেখের কিল্লা স্থানটির গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে বঙ্গবন্ধুর প্রথম পরিদর্শিত স্থান এটি। জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত রামগতির চর পোড়াগাছায় শেখের কিল্লা স্থানটিতে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানসহ বহুমূখী উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here