লেখক: কৌশলী ইমা ::

১৬ ডিসেম্বর ৭১ মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে হানাদার বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শহীদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশের পবিত্র মাটি হানাদার মুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগার থেকে ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। 

বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বনেতা- বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে তিনি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে তুলে ধরেছিলেন। নতুন রাষ্ট্রের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় সাংবিধানিক রূপ প্রদানের কাজটি তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়- রচিত হয় ৭১-এর সংবিধান, ঘোষিত হয় চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি। 
বাঙ্গালী জাতির জন্য আগস্ট একটি শোক ও বেদনার মাস। বাঙালী জাতি এই মাসে চার কৃতি সন্তানকে হারিয়েছে। এরা হলেন- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং ক্ষুদিরাম। এই মাসে ঘটেছিল বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম কলঙ্কজনক ট্রাজেডি- একাত্তরের পরাজিত ঘাতকদের হাতে এ মাসেরই ১৫ আগস্ট সপরিবার নিহত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- রচিত হলো পৃথিবীর এ যাবতকালের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্যতম ইতিহাস। 
পৃথিবীতে কিছু কিছু মহান ব্যক্তি আছেন যাঁদের কখনো মৃত্যু হয় না- তাঁদের আদর্শ, চেতনা, স্বপ্ন মানুষের মাঝে চিরদিন বেঁচে থাকে। সেরকম বঙ্গবন্ধুও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন- বঙ্গবন্ধু মরে নাই মরতে পারে না- কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে রাখা হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি যারা তারাই বঙ্গবন্ধুকে আটকিয়ে রেখেছেন। 
বঙ্গবন্ধু যদি বন্দীই না থাকতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কেন সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছেন? কেনই বা মন্দির গির্জায় প্যাগোডায় হামলা হচ্ছে- এমনকি মসজিদেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পবিত্র কোরআন শরিফ আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।    
বঙ্গবন্ধুর সাধনা সেই ৭২-এর সংবিধানে বার বার কেন কাঁচি চালানো হচ্ছে। জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে যারা হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন- সেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা কোনঠাসা এবং অবহেলিত কেন।
বঙ্গবন্ধু একটিই স্লোগান দিতেন জয় বালা’- আর সেই বঙ্গবন্ধুর জয় বাংলাশ্লোগান দিয়ে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজের জীবনকে হাসি মুখে বাংলা মায়ের জন্য উৎসর্গ করে দিতো মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু জয় বাংলাআজ নির্বাসিত কেন? এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিও জয়বাংলাস্লোগান দিতে বিব্রতবোধ ও লজ্জা পান কেন? যারা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয়বাংলাবিশ্বাস করেন না-তারাতো বাঙালি না তারা খাঁটি পাকিস্তানি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল শোষণমুক্ত সোনার বাংলা- সেই সোনার বাংলায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-স্বপ্ন যতদিন বাস্তবায়িত না হবে- চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুর ৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধার সাথে তাঁকে স্মরণ করে আমি চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে যাবো- বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই!

 

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কন্ঠশিল্পী। সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কমান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং পরিচালক সঙ্গীত একাডেমী, নিউইংল্যান্ড

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here