বগুড়া পৃথক ঘটনায় ৫ জনকে হত্যাতানসেন আলম, বগুড়া প্রতিনিধি :: বগুড়ায় পৃথক ঘটনায় ৫ চনকে হত্যা করা হয়েছে। এরমধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার আটমূল ইউনিয়নের ডাবুইর গ্রাম সংলগ্ন ধান ক্ষেতে চার ব্যক্তির গলা কাটা লাশ পাওয়া গেছে। ও একই দিনে শহরের ফুলবাড়ী দক্ষিনপাড়া এলাকায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা হরা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে শিবগঞ্জের ৩ জন ও বগুড়া শহরের এক জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

এরা হল, আটমূল ইউনিয়নের কাঠগাড়া চকপাড়া গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে সাহাবুল ইসলাম সাবুল (৩০), একই গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে জাকারিয়া (৩২) এবং পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পাঁচপাইকা চেয়ারম্যান পাড়ার আজার মণ্ডলের ছেলে হেলাল (২৯)।

অপরজন শহরের ফুলবাড়ী দক্ষিনপাড়া এলাকার সঞ্জু মিয়ার ছেলে রুবেল(২৩)। পুলিশ লাশগুলি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশ সুপার সহ অনান্য কর্মকর্তারা।

আটমূল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন জানান, সোমবার সকাল ১০টার দিকে মাহবুব নামে এক ব্যক্তিকে তাকে ডাবুইর গ্রাম সংলগ্ন ধান ক্ষেতের মধ্যে ৪টি লাশ পড়ে থাকার কথা জানান। এরপর তিনি পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং বেতগাড়ি-বাদলাদিঘী সড়ক থেকে প্রায় আধাকিলোমিটার উত্তরে ধান ক্ষেত থেকে একে একে চারটি লাশ উদ্ধার করে।

বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার ওসি (অপারেশন্স) জাহিদ হাসান জানান, ১৫ থেকে ২০ ফুট দূরে লাশগুলো পড়ে ছিল। তিনটি লাশ পৃথক তিনটি জমিতে আর একটি জমির আইলের ওপর পড়েছিল। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ধান ক্ষেতে পানি জমেছিল। একটি লাশের পরণে কোন কাপড় ছিল না। বাকি তিনটির মধ্যে একটির পরণে প্যান্ট এবং দুজন লুঙ্গি পড়া ছিল।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি লাশের হাত বাঁধা ছিল। যাদের পরণে কাপড় ছিল তাদের কাপড়ের ভেতর থেকে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি এবং বেশ কিছু গাঁজার পুরিয়া পাওয়া গেছে।

এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে পাউরুটি এবং কিছু পিয়াজুও পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে মাদক সংক্রান্ত কোন বিরোধের জের ধরেই ওই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে।

এদিকে এক সঙ্গে চারটি লাশ পাওয়ার খবরে শিবগঞ্জ উপজেলা জুড়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লাশগুলো দেখার জন্য দুর-দুরান্ত থেকে শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বিকেলে লাশগুলো শিবগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। উদ্ভুত পরিসি’তিতে ঘটনাস’লসহ আশ-পাশের এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা সবাইকে শান্ত থেকে তদন্ত কাজে সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন। ঘটনাস্থলের পাশে সমবেত এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। খুনীদের খুব তাড়াতাড়ি ধরা হবে। আপনারা ধৈর্য্য ধরুন এবং তথ্য দিয়ে তদন্ত কাজে সহযোগিতা করুন।

মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা ওই চারজনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হাত বেঁধে জবাই করেছে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ছোট ছোট কাগজের অনেকগুলো টুকরা এবং দু’টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি পাওয়া গেছে। কাগজের টুকরাগুলোতে একাধিক ব্যক্তির নাম এবং তাদের মোবাইল ফোনের নম্বর লেখা রয়েছে।

নিহত সাবুলের বাবা আছির উদ্দিন জানান, বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ভায়েপুকুর বাজারে তার একটা মুদি দোকান রয়েছে। দিনে দোকানে বসার পর রাতে বাজারের নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। মাঝে মাঝে সাবুলও দোকানে বসত। রাতে বাজারে গার্ড দিত। আবার ঢাকায় গিয়ে রিকশাও চালাতো।

তিনি বলেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে দু’ ছেলে ঢাকায় রিকশা চালায়। সোমবার সকালে সাবুলেরও ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। রোববার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সে বাজারে আমার সঙ্গেই দোকানে ছিল। সকালে (সোমবার) ঢাকা যাবে বলে আমি তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিই। আসার সময় সে পাউরুটি ও দুধ নিয়েছিল। এরপর আর রাতে সে বাড়ি ফেরেনি। সকালে লোকমুখে শুনলাম ৪ লাশের মধ্যে আমার সাবুলের লাশও আছে। তার ধারণা দুর্বৃত্তরা ওই বাজার থেকে ফেরার পথে তার ছেলেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে।

জাকারিয়ার বড় ভাই জান্নাতুল জানান, জাকারিয়া রোববার সকাল ৯টার দিকে পাশের জয়পুরহাট জেলায় রংয়ের কাজে যায়। রাত ১০টার দিকে তাকে ফোন দিলে জানায় দেড় ঘন্টার মধ্যে সে বাড়ি ফিরছে। মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় গাড়ির শব্দও শোনা গেছে। তবে রাত ১১টায়ও বাড়ি না ফেরায় তাকে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তা বন্ধ পাওয়া যায়। এভাবে রাত ৩টা পর্যন্ত তাকে ফোন দেওয়া হয়। কিন’ বার বারই তা বন্ধ পাওয়া যায়। সোমবার সকালে এলাকার লোকজনের মুখে জাকারিয়া ও সাবুলসহ ৪জনের লাশ পাওয়ার কথা শোনা যায়।

জাকারিয়া মা জাহানারা বেগম জানান, তার ছেলে ইয়াবা সেবন করতো। তার ছেলের কাছে অপরিচিত অনেক ছেলে আসা-যাওয়া করতো। তার সন্দেহ এলাকার দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী তার ওই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আনিছুর রহমান জানান, আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। আশাকরি খুব দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

এদিকে সোমবার বিকেলে শহরের ফুলবাড়ী দক্ষিনপাড়া এলাকায় দিনে দুপুরে রুবেল(২৩)নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত রুবেল ফুলবাড়ী দক্ষিনপাড়া এলাকার সঞ্জু মিয়ার ছেলে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে স্থনীয় পুলিশ। পুলিশ ও স্থনীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে রুবেল এর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এলাকাবাসী। বেশ

কয়েকদিন যাবত পুলিশ ও এলাকাবাসী তার খোঁজ করছিল। সোমবার বিকালে ৩টার দিকে আত্বগোপন করে থাকাবস্থায় রুবেলকে পাকড়াও করে গনপিটুনি দেয় স্থানীয় জনতা। মারপিটের এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here