স্কুলছাত্রী   আদিল হোসেন তপু ভোলা প্রতিনিধি :: ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব-ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সি এলাকার এক স্কুলছাত্রী (১১) বখাটেদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। ভবিষ্যতেও তার পড়া-লেখা হবে না বলে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্কুলে একাধিকবার মৌখিক অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও মেয়েটি কোনো বিচার পায়নি।

শনিবার দুপুরে অভিযোগ পেয়ে বখাটে মামুনের বাড়িতে গেলে তার মা ও বোন সাংবাদিকদের লাঠি নিয়ে তাড়া ও গালমন্দ করেন। চিৎকার করে বলেন, তাদের মামুন মেয়েটির পিছু নিলেও তাকে শারীরিক নির্যাতন করেনি।

ভোলা পরাণগঞ্জ হালিমা খাতুন স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর ভাষ্য, সে যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তখন থেকেই গুপ্তমুন্সি গ্রামের (৮ নম্বর ওয়ার্ড) মোল্লাবাড়ির মাহমুদুল্যা ও মমতাজ বেগমের বখাটে ছেলে মামুন ও তার বন্ধুরা পথিমধ্যে বিরক্ত করতো। গায়ে হাত দিয়ে আজে-বাজে মন্তব্য করতো। প্রেম নিবেদন করতো।

মেয়েটি ভয়ে কাউকে কিছু বলতোনা। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পরেও মামুন ও তার বন্ধুরা আজেবাজে কথা বলে গায়ে হাত দিতো।

এ ঘটনা জেনে যায় মেয়ের বাবা-মা। বাবা ক্ষোভে-দুঃখে মেয়ের চুল কেটে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পড়ার জন্য মেয়েটি প্রায়ই বাড়িতে বসে কান্নাকাটি করতো। বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধের পরেও বখাটেরা বাড়িতে এসে আজেবাজে কথা বলতো।

এক পর্যায়ে মেয়ের মা সাহস দেখিয়ে মেয়েকে ২০১৪ সালে হালিমা খাতুন স্কুল এন্ড কলেজে পুনরায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন।

স্কুলছাত্রী আরও বলেন, বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করলে মামুন ও তার বন্ধুরা আবারও শরীরে হাত দিয়ে আজেবাজে কথা বলতে শুরু করে। গায়ের ওড়না নিয়ে যায়। ডিসেম্বরে শুরু হয় তাদের বার্ষিক পরীক্ষা।

গত ১৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে মেয়েটি কর্মমূখী শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে বের হয়। বাড়ি ছেড়ে কিছু দূর গেলে মামুন ও তার বন্ধুরা পার্শ্ববর্তী মন্টুমাঝির ফাকা বাড়ি মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায়।

সেখানে ধর্ষনের চেষ্টা করলে মেয়েটি চিৎকার করে। বখাটে মামুন ওই সময় মেয়েটির নাকের উপর ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে মা। ওই দিন থেকে আর পরীক্ষা দিতে পারেনি।

নির্যাতনের শিকার মেয়েটি আমাদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সে বলে,  ‘আমি বিচার চাই! কিন্তু কে আমার বিচার করবো, মামুনেরা আমাগোরে হুমকী দেয়, কয় মাইরাফালাইবো।’

মেয়েটির মা নাসিমা বেগম বলেন, ১৫ ডিসেম্বর ঘটনা ঘটলেও মামুন ও তার পরিবারের হুমকী-ধামকিতে তিনি বিষয়টি কাউকেই জানাতে পারেননি।

শনিবার সাংবাদিকদের বিষয়টি জানানোর পড়ে কোন বিপদ নেমে আসে তা নিয়েও আশঙ্কায় আছেন। মা আরও বলেন, মামুন ও তার বন্ধুরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে গায়ে হাত দিয়ে বিরক্ত করায় আমি একাধিকবার বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেল্লাল হোসেনকে জানিয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। মেয়েটি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি একথা  বলার পর তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন- বলেন, ‘গরীবের লাইগ্যা পড়া-লেখা নাই, হের লাইগ্যাই ওর পড়া বন্ধ কইরা দিমু ভাবতেছি।

মেয়ের বাবা ইব্রাহীম খলিল ঢাকায় দিনমুজরের কাজ করেন। তিনি বলেন, তারা গরীব মানুষ, পড়ালেখা তাদের জন্য নয়,  গরীবের মেয়ে বলেই বড় লোকের বখাটেরা পথেঘাটে বিরক্ত করে, নির্যাতন করে। তার পক্ষে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঢাকা শহরে থাকাও সম্ভব না।

ভোলা পরানগঞ্জ হালিমা খাতুন স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক বেল্লাল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তারা মেয়ের মাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছিলেন। লিখিত না দেওয়ায় তারা বিষয়টি নিয়ে আর এগুতে পারেননি। এরই মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে।

পুর্ব-ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদ সরোয়ার উদ্দিন ও ৮ নম্বর ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, মামুন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসির একাধিক অভিযোগ আছে। তাদের কারনে মেয়েরা নিরাপদে বিদ্যালয়ে যেতে পারবেনা, এ ব্যাপারে প্রশসনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

জাতীয় শিশু টাস্কফোর্সের ভোলা জেলার সমন্বয়কারী বলেন, ঘটনাটি শোনার পড়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি। মেয়ের পরিবারটি অনিরাপত্তায় ভুগছে। আমরা চাই বখাটেরা বিচারের আওতায় আসুক এবং শিশুর লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হোক!

ভোলা সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম ফরিদ উদ্দিন বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে যথাযথ ব্যাবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here