রহিমা আক্তার মৌ :: পাবেলকে মাঝে মাঝে বলি ওর পরিবারের ছবি দেখাতে। কিন্তু সে ভিন্ন ভিন্ন বায়না দেখায়, তাই চুপ করে থাকি। একদিন বললাম,
— মা মনি(পাবেলের মা)র একটা ছবি তুলে ইনবক্সে দিও, দেখবো।
— মা ছবি তোলেন না।
— একটা তো তুলতেই পারো।
কয়েকদিন পর পাবেলের প্রোফাইলে ওর আর মামনির ছবি দেখলাম। আমি জানি আমার বলার পরে ও এই ছবি তোলে। আমাকে ইনবক্সে দেয়নি, দিলে হয়তো আমি খুশিই হতাম। এই নিয়ে ওকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করিনি। ওর সন্তান হয়েছে এটা শুনেছি, একদা ওর সন্তানের সাথে কথাও বলি। আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়,
“কথা বলো, তোমার ফুপ্পি উনি”।
একদিন ওর ছেলের জন্যে চকলেট কিনে দিতে চাইলে ও বলল,
— দিতে যখন চাও বড় দিও না, ছোট ধরণের দুইটা দাও।
আমি মাঝারি দুইটা চকলেট দিলাম। সেদিন মনে প্রশ্ন জাগলো কেন দুইটা চাইলো। ধরেই নিলাম ওর দুই সন্তান। ওর ভাই বোনদের নাম বলেছিলো আমায়। একদিন ওর আইডিতে একটা ট্যাগ করা ছবি দেখি। মাশাআল্লাহ্ দুই সন্তানের সাথে পাবেলের ছবি। ছবিখানা যিনি পোস্ট করেছেন তিনি পাবেলের অর্ধাঙ্গিনী। সেই ছবিতে কমেন্ট করলো ওর বোনেরা। ক্রমে ওর পরিবারের অনেকের আইডি পেলাম, ছবি দেখলাম, খুবই ভালো লাগলো।
পরিবারের দুইটা ছবি সেভ করে ওকে দেখাই। ছবি দেখে বলল,
— যতক্ষন গোয়েন্দাগিরি করবা ততক্ষণ পড়ালেখা করা ভালো নয় কি? বাজে কাজে সময় নষ্ট না করাই ভালো।
— কেমন গোয়েন্দাগিরি করলাম আগে সেটা বল।
— ভালোই করেছ, গোয়েন্দা বিভাগকে বলব তোমাকে একটা চাকরি দিতে।
— ফ্যান নয়, আসল কথা বল।
— আমি জানি তুমি বরাবরই বুদ্ধিমান।
পুরানো ডায়রিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার লেখা ছিল, যে নাম্বারের মাঝে জোড়া অংক ছিল। নতুন এক জোড়া অংকের নাম্বার পেয়ে খোঁজ করি পুরানো নাম্বার। অবশেষে পেয়ে গেলাম। সে নাম্বার মোবাইলে সেভ করতেই ইমো সো করলো। গেলাম ইমোতে। ইমোতে অর্জিনাল নাম সেভ করা, সে নাম দিয়ে ফেবুতে সার্চ দিই, চলে আসে আইডি। কিছুক্ষণ ঘুরলাম আইডিতে। আবিস্কার করি ওর দুই সন্তান, স্বামী আর পরিবারের ছবি। কোন বদ উদ্দেশ্যে ঘুরছিনা কিন্তু। শুধু দেখার জন্যে। এক যুগ আগে ওর সাথে কথা হয়েছিল অন্য পরিচয়ে। লুকিয়ে আজ ওকে দেখলাম, দেখলাম ওর পরিবারকে। আর ভাবলাম কেন মানুষ ফেইসবুক আইডিতে তালা মেরে রাখে।
ছবিগুলো দেখছি আর এক যুগ আগের কথা মনে করছি। সেই সময়ের সাথে মিলিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। যদিও তার আইডি খোলা হয়েছে ২০১২ সালে। একটা কল দিতে ইচ্ছে করে, শুধু একটা কল। কল দিয়ে শুধু বলবো,
— এখন যিনি তোমার বর উনিই কি এক যুগ আগে তোমার স্বামী ছিলো?
যদি হা উত্তর আসে তবে আরেকটা প্রশ্ন করবো,
— তবে তুমি কেনো বলে ছিলে তুমি ডিভোর্সি?
হয়তো সে আমায় চিনবে নয়তো চিনবে না। সে কি করে বুঝবে এক যুগ জীবনের অনেক কিছুই পাল্টায়। মেরুদন্ডহীন সেই অপরিচিত কলের নারীই আজকের নীলাঞ্জনা। ফেইসবুক আইডি তালা দেয়া থাকলে নীলাঞ্জনা খুব চটে যায়, ওর মতো অনেকেই। তবে সব কিছুর পজেটিভ নেগেটিভ ঠিক আছে। তবে নিজের আইডি লক থাকলে কাউকে রিকুয়েস্ট দিতে চাইলে ছোট্ট করে একটা পরিচয় ইনবক্সে জানানো হয়তো ঠিক। জীবন আসলে শিখায় প্রতিমুহূর্তে।
লেখকঃ সাহিত্যিক, কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক।