স্টাফ রিপোর্টার :: সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের অনুপযোগী, ফিটনেসবিহীন ও অনিবন্ধিত যান চলাচল বন্ধে দেশের সব জেলায় টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক ও সেতু সচিবকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেন।

আদেশে আরও বলা হয়, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় এই টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। এই টাস্কফোর্স চলাচলের অনুপযোগী, ফিটনেসহীন ও অনিবন্ধিত যান শনাক্ত করবে। আইন অনুযায়ী এসব যান আটক, জব্দ ও ডাম্পিং করতে হবে। এই আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্নিষ্ট বিবাদীদের আগামী ১ জুন আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আদালতে বিআরটিএর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঈন ফিরোজী ও মো. রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আদেশের পর আইনজীবী মঈন ফিরোজী সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট সড়কে, বিশেষ করে মহাসড়কগুলোতে পরিবহনের অনুপযোগী, ফিটনেসহীন ও অনিবন্ধিত যান চলাচল বন্ধে প্রতিটি জেলায় টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া ফিটনেস নবায়ন না করা পর্যন্ত ফিটনেস ছাড়া গাড়িতে তেল-গ্যাস-পেট্রোলসহ কোনো ধরনের জ্বালানি না দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আগের নির্দেশ ও রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।

আইনজীবী মঈন ফিরোজী বলেন, অপরাধগুলো বিচার করার জন্য সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ১১৪, ১১৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী পুলিশ, বিআরটিএ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা বিচ্ছিন্নভাবে বাস্তবায়ন না করে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করতেই হাইকোর্ট এই টাস্কফোর্স গঠনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এটি কার্যকর হলে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন ও অনিবন্ধিত যান চলাচল অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

‘নো ফিটনেস ডকস, ইয়েট রানিং’ শিরোনামে গত ২৩ মার্চ একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদন নজরে এলে ২৭ মার্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে লাইসেন্সবিহীন চালক ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানের সংখ্যা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এ ছাড়া রুলে ফিটনেস, নিবন্ধনবিহীন যান চলাচল ও লাইসেন্স ছাড়া যান চলাচল বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ফ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবন ও ব্যক্তির বাঁচার অধিকার রক্ষায় মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর বিধান বাস্তবায়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে

চাওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে দেওয়া বিআরটিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন প্রায় পাঁচ লাখ গাড়ি ছিল। প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর হাইকোর্ট জানতে চান, ফিটনেস ছাড়া গাড়ির চলাচল বন্ধে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে গতকাল আদালতে বিআরটিএ প্রতিবেদন দাখিল করে, যার শুনানি নিয়ে দেশের সব জেলায় টাস্কফোর্স কমিটি গঠনের এই আদেশ দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here