নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তালিকাভুক্ত শতাধিক অস্ত্র ব্যবসায়ী সক্রিয় রয়েছে। এরাই মূলত অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির পাশাপাশি এরা অস্ত্র ভাড়া দেয়ার ব্যবসাও করছে। মূলত এ অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়, ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রন, জমি দখল, মাদক ব্যবসার আধিপত্য, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।
নতুন নতুন কৌশলে দেশের বিভিন্ন সীমানত্ম এলাকা থেকে রাজধানী হয়ে ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে আনা হচ্ছে অস্ত্রের চালান।
সদর উপজেলার ফতুল্লার ক্ষুদ্র অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বের নামিদামি মডেলের আগ্নেয়াস্ত্র চলে আসছে পেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পেশাদার খুনি, ডাকাত, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, জমির দখলসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী অস্ত্র ভাড়া নিচ্ছে। সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ধরনের ওপর নির্ভর করে অস্ত্র ভাড়ার রেট। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মাঝে মাঝে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও অস্ত্র পাচার ও সরবরাহ থামছে না। অপরাধ সংগঠনে হ্যান্ডগানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলেও বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে তালিকাভুক্ত একাধিক অস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের ছত্র ছায়ায় এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদীন ধরে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশ্বের নামিদামি মডেলের আগ্নেয়াস্ত্র চলে আসছে পেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতে।
ফতুল্লায় অবৈধ ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায়ই ধরা পড়ছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। বিভিন্ন হত্যাকান্ড, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রকাশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন অস্ত্র।
ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে ভাড়ায় অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে সহস্রাধিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। প্রতিঘণ্টা বা দিন হিসেবে অস্ত্র ভাড়া দেয়া হয়। পুলিশের হাতে অস্ত্র ধরা পড়লে বা খোয়া গেলে অস্ত্রের পুরো দাম দিতে হয় অস্ত্র মালিককে।
অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে দাগি সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক ক্যাডার, পাতি ও ছিঁচকে সন্ত্রাসীও রয়েছে। খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে কারও কারও বিরুদ্ধে ১০ থেকে ১৫টি মামলাও রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধ অস্ত্র ভাড়া দেয়া পেশাদার ব্যবসায়ীদের পুরনো একটি ব্যবসা। অস্ত্র কিনতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয় তা ভাড়ায় খাটিয়ে উঠানোর টার্গেট থাকে তাদের। অনেকে নিজের দল পরিচালনার জন্যও সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, খুন-খারাবিসহ বিভিন্ন অপরাধে ভাড়ায় অস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে। ভাড়ায় অস্ত্র দেয়া লাভ বলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে এটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
তাদের মতে, পেশাদার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন মডেলের হ্যান্ডগান পছন্দ করে। এসব ক্ষুদ্র অস্ত্র মজুদ, বহন ও সরবরাহ করা যায় সহজে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সময় হ্যান্ডগান ব্যবহার অধিক নিরাপদ বলে মনে করে সন্ত্রাসীরা।
এরমধ্যে সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ পিস্তল, নাইন এমএম পিস্তল, সি-জেড, তাওরাশ, পেট্রা ভ্যারেটা, আরমানিজ রিভলবার, ওয়ান শুটার, কাটা বন্দুক ও পয়েন্ট টু-টু মডেলের অস্ত্রের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
সূত্রে আরো জানা যায়, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে লাঁলপুর এলাকায় অস্ত্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রন করে থাকেন রুস্তুম, রবিন, আনছার, নেছার, জামাল। কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার আরমান, ফয়েজ আহাম্মেদ বুলু, রাঙ্গা, শিপলু, উজ্জল, কানা আক্তার, ছিনতাই আক্তার।
ফতুল্লার পাগলা এলাকার জাকির হোসেন এসপি, বড় বাশার, কামাল, ছোট বাশার, লিখন, হাবিব শেটের ভাতিজা রনি। ফতুল্লার রেলষ্ট্রেশন দাপা ইন্দ্রাকপুর এলাকার তুষার আহাম্মেদ মিঠু ওরফে পিস্তল মিঠু, ফতুল্লার গুদারাঘাট এলাকায় অবস্থিত মোবাইল আরিফ, ডাকাত শহীদ, ডাকাত শাহীন, কবীর হোসেন ফেলা ওরফে ডাকাত ফেলা। উল্লেখিত সন্ত্রাসীগুলোই ফতুল্লার অস্ত্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রন করে থাকেন।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান, অপরাধী যতবরই শক্তিশালী হোক না কেন পুলিশের শক্তির চেয়ে অনেক কম। এলাকার শান্তি রক্ষার্থে এ সকল অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে খোঁজখবর নিয়ে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এম আর কামাল/