আসাদুজ্জামান সরদার :: সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার রিয়াজুল ইসলাম রাজু দেশীয় প্রযুক্তিতে ইতালির বিশ্বনন্দিত বিলাশ বহুল ব্যান্ডের স্পোর্টস কার ল্যাম্বরগিনির আদলে প্রাইভেটকার তৈরি করে সকলের নজর কেড়েছেন। ব্যস্ততার কারণে তার কারের কাজ এখন শেষ তুলতে না পারলেও ইতোমধ্যে তিনি আশিটির বেশি গাড়ির অর্ডার পেয়েছেন বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে। স্বপ্ন দেখছেন, গাড়িটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের। এব্যাপারে সরকারের সহায়তা চান তিনি।

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই নতুন কোন কিছু উদ্ভাবন করে সবাইকে চমক লাগিয়ে দিতেন রিয়াজুল। এখান থেকে ১৫ বছর আগে স্কুল পড়াকালিন সময়ে বাইসাইকেলে মোটর লাগিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। কলেজ জীবনে তিন ইঞ্চি স্যালেমেশিন দিয়ে ডিজেল চালিত মোটরসাইকেল উদ্ভাবন করেন। এরপর ২০১৯ সাল থেকে তার মাথায় আসে প্রাইভেট কার তৈরীর বিষয়টি। যে ভাবনা-সেই কাজ। লেগে যান কাজে। মোটরসাইকেলের পুরাতন ইঞ্জিন, ইজিবাইকের চাকা এবং প্রাইভেট কারের সীট ও স্টিয়ারিং দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী করেন ইতালির বিখ্যাত বিলাশ বহুল ব্যান্ডোর কার ল্যাম্বরগিনির আদলে একটি পাইভেটকার। কারটির শুধুমাত্র কাঠামো তৈরী করে পরিক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছেন তিনি। অফিসের ব্যস্ততার কারণে এখন বডি তৈরী করতে পারেননি তিনি। ইতোমধ্যে ৭০/৮০ টি গাড়ির তৈরীর অর্ডার পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়বে তার কারটি তৈরী করতে। তার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরী গাড়িটি অনেকে দেখতে আসেন। রিয়াজুলের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী কারটি ১ লিটার জ্বালানিতে ঘন্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে ৩৭ কিলোমিটার চলাচলে সক্ষম।

সাতক্ষীরার তরুণ উদ্ভাবক রিয়াজুল ইসলাম রাজু বলেন, ছোটবেলা থেকে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার চেষ্টায় থাকতাম। এসব নিয়ে সারক্ষণ ভাবতাম।

কার তৈরী বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের কার তৈরীর চিন্তা মাথায় আসে। কিছুদিন পরেই কাজে নেমে পড়ি। মোটরসাইকেলে পুরাতন ইঞ্জিন, ইজিবাইকের চাকা এবং প্রাইভেট কারের সীট ও স্টিয়ারিং দিয়ে এক ভাইয়ের ওয়ার্কশপে তৈরী করেছি ইতালির বিখ্যাত কার ল্যাম্বরগিনির আদলে একটি প্রাইভেটকার। এখন অনেক সম্পূর্ণ শেষ করতে পারিনি। বনবিভাগে চাকরি করি। অফিসের বাইরে সময় পেলে তখন এটা নিয়ে কাজ করি। খুব দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলবো। আমার গাড়ি অনেকে দেখতে আসে। আমার কারের কাজ এখন শেষ করতে পারিনি কিন্তু ইতোমধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জন এই ধরনের প্রাইভেট কার তৈরী করে নিতে চেয়েছেন। মাত্র দেড় লাখ টাকা এই কার তৈরী করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, হাইস্কুল জীবনে ইঞ্জিন চালিত সাইকেল তৈরী করেছিলাম। কলেজ জীবনে স্যালোমেশিন দিয়ে বিকাল আকৃতির মোটরসাইকেল তৈরী করি। সেটা চলতে ডিজেলে। বর্তমানে বনবিভাগে কর্মরত। দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় লম্বরগীনির আদলে একটি কাঠমো করিয়েছি। এটা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। অনেকের প্রাইভেট চড়ার শখ থাকলেও তারা টাকার অভাবে কিনতে পারে না। তার যেন অল্প টাকায় সেই প্রাইভেট কেনার শখ পূরণ করতে পারে সেজন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এটি খুবই সাশ্রয়ী। একটি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন দিয়ে তৈরী করেছি। এর সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ৭০ কিলোমিটার। ১ লিটার জ্বালানীতে এটি ৩৭ কিলোমিটার যায়। চার চাকায় ব্রেক আছে। জিআই বক্স দিয়ে ফ্রেম তৈরী করা হয়েছে। বডির কাজ এখন হয়নি। অফিসের ফাকে অল্প সময় কাজে লাগান তিনি। এতে চারজন বহন করতে পারবে।

খুবই সহজ এটা সকলেই চালাতে পারবে। প্রতিটা মানুষ যেন প্রাইভেটকার ব্যবহার করতে পারে সেজন্য তিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে আমার কাজ সহজ হবে দ্রুত এবং সুন্দর হবে।

তিনি দাবী করেন, সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে দেশেই গাড়ি তৈরী করা সম্ভব হবে। সরকার এগিযে আসলে এটা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা সম্ভব। বর্তমান সরকারের আমলে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এখন সাইকেল এবং ভ্যানে পর্যন্ত ইঞ্জিন লাগানো হচ্ছে। তার বিষয়টি দেখে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

রিয়াজুলের বাবার বন্ধু ও সাতক্ষীর সদর উপজেলা মসজিদের ইমাম ও খতিব এহসানুর রহমান বলেন, রিয়াজুলকে ছোটবেলা থেকে চিনি। ওর বাবা আমার বন্ধু। স্কুলে পড়াকালিন সময়ে রিয়াজুল সাইকেল ইঞ্জিন লাগিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। এর কয়েকবছর পর তিন ইঞ্জি স্যালোমেশিন দিয়ে মোটরসাইকে তৈরী করে। এখন আবার প্রাইভেটকার তৈরী করছে। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন বিষয় আবিষ্কার করতো। এখন চাকরির কারণে কমে গেছে।

ভিডিও লিংকঃ https://youtu.be/Ts1gPMoNZTU
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here