প্রভাষ যেখানে হারিয়ে দিলেন শাহরুখকেআবদুল বারী সরকার :: একজন শাহরুখ খান আর প্রভাষ’র মধ্যে পার্থক্য কোথায়। উত্তর- ব্যক্তিত্ব আর মানবিকতায়!
একটু খোলাসা করে বলি। খান সাহেব প্রায় দুই যুগ ধরে বলিউডে রাজত্ব করছেন। কে সেরা? এমন প্রশ্নে অন্য দুই খান যখন বিনয়ী থেকে চুপ, তখন বাদশা খান সাহেব নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন নিজেকে অভিনয়ের রোনালদিনহো বলে! তা তিনি অভিনয় ভালোই জানেন। আমীর খান নিজেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন নানা রকম ব্যতিক্রম চ্যালেঞ্জিং চরিত্র দিয়ে। তিনি তাতে স্বার্থক শতভাগ। এই খানও পিছিয়ে থাকবেন কেন? তারও চাই ব্যতিক্রম চরিত্র। সেই বোধ থেকেই অশোকা করেছেন।
ফলাফল ব্যর্থ। তন্বী তরুণী কাপুর কন্যা (কারিনা) ঠিকই আলোচিত হয়েছিলেন শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ দেখিয়ে! পাহাড়, বন – জঙলের ভিতর ঝর্না ধারায় কিম্বা স্বচ্ছ নদীজলে গোসলের অনুপম সৌন্দর্য দেখিয়ে। আর শাহরুখ খানকে আদালতে তলব করা হয় নগ্নতা আর রগরগে দৃশ্য দেখানোর জন্য।
উল্লেখ্য, তার রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট (তখন সেটি ছিলো ড্রীমস আনলিমিটেড) ছিলো ছবিটির প্রযোজনায়। এর পর আশুতোষ গোয়াড়িকরের ছবি স্বদেশ। যিনি এর আগে লাগান বানিয়ে বিশ্বকে মাত করেদিয়েছিলেন। অস্কার আসরে সেরা ভিনদেশী ভাষার ছবি বিভাগে চূড়ান্ত পর্বে মনোনয়ন পেয়েছিলো। তারপরও স্বদেশের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। যদিও ইন্ডিয়ান দর্শকদের জন্য আবেগী দেশপ্রেমের মাল মসলা ছিলো।
ছবিতে ব্যতিক্রমী চরিত্রে ব্যর্থতা থেকেই কিনা ব্যতিক্রমী বিজ্ঞাপনে সফল হতে চেয়েছিলেন হয়ত! তাই যুগ, যুগ ধরে সৌন্দর্য সাবানের (Beauty Soap) বিজ্ঞাপনে নারী তারকাদের যেখানে দেখে অভ্যস্ত, হঠাৎ সেখানে শাহরুখ খান হাজির! বাথটাবে ডুবে তিনিও লাক্সের সুবাসিত ফেনার মধ্যে কোমনীয় হচ্ছেন! এতে তিনি কতটা পুরুষদেরকে বাথটাবে লাক্সের সুবাসিত জগতে টানতে (লাক্সের কাটতি বাড়ানো) পেরেছিলেন তা একমাত্র ইউনিলিভার জানে।
রিয়ালিজম ঘেঁষা ছবিতে অভিনয় এবং পরিচালনার জন্য নন্দিতা দাস খ্যাতিমান। তিনি কখনো মেক আপ করে ত্বক ফর্সা করেন নি। মহেশ ভাটের মতো পরিচালকও ব্যর্থ হয়েছেন মেক আপ করাতে। তিনি প্রান্তিক ভারতীয় নারীদের প্রতিনিধি। তিনি প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছিলেন ত্বক ফর্সাকারী ক্রীম প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে।
উল্লেখ্য গায়ের রং কালো হবার কারণে ভারতে অসংখ্য নারী সামাজিকভাবে লাঞ্ছনা, গঞ্চনার শিকার হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করেন। বর্ণবৈষম্যের শিকার অনেক মেয়ে আত্তহত্যার পথ বেছে নেন। আর শাহরুখ খান একজন প্রতিষ্ঠিত মহাতারকা হয়েও শুধুমাত্র মোটা অংকের টাকার জন্য রঙ ফর্সাকারী ক্রীমের বিজ্ঞাপন করেন। নন্দিতা দাস তাকে আহবান করেন এমন বিজ্ঞাপনে কাজ না করার জন্য। তাতে যে কাজ হয়নি বলাই বাহুল্য। তবে এটাও কিন্তু নতুন এবং ব্যতিক্রম! সেটাই যে ছিলো ১ম পুরুষ মডেল ত্বক ফর্সাকারী ক্রীমের।
খানের তুলনায় প্রভাষ খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছা একদমই নতুন। কিন্তু অনেক বেশী ব্যক্তিত্ববান, মানবিক। যে টাকার হাতছানি খান ফেরাতে পারেন নি। সেখানে সদ্য খ্যাতির শীর্ষ ছোঁয়া প্রভাষ নির্দ্বিধায় ফিরিয়ে দেন ১৮ কোটি’র প্রস্তাব! যিনি কিনা বিশ্বাস করেন সৌন্দর্য মানেই ফর্সা হওয়া নয়! অনেক শুভকামনা আর শ্রদ্ধা প্রভাষ আপনাকে।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here