স্টাফ রিপোর্টার :: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বাম জোট ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে চা-চক্রে অংশ নিয়েছেন।
আজ শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এই চা-চক্রে দেশের বিভিন্ন দলের রাজনীতিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। রাজনৈতিক আড্ডা, কুশল বিনিময়, পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে গণভবনে সবুজ চত্বর।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নেয়। ৩০ ডিসেম্বর অুনষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে একদিন বসতে চেয়েছিলেন। মূলত তার সেই ভাবনা থেকেই আজকের চা-চক্র। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে যোগ দেন চা-চক্রে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং সিপিবি ও বাসদ নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক বাম জোটের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর এই চা-চক্রে আসেননি।
আজ বিকেল ৪টার পরে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন টানা তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় গণভবনের সবুজ প্রাঙ্গনে ঘুরে ঘুরে আমন্ত্রিত অতিথিদের সবার সঙ্গে হাসিমুখে কুশলাদি বিনিময় করেন ও শুভেচ্ছা জানান তিনি। চা-চক্র চলে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত। পরে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শীতের বিকেলে গণভবনের সবুজ মাঠ সাজানো হয় আবহমান বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্য দিয়ে। অতিথিদের বসার জন্য গণভবনের সবুজ লনে চেয়ার, টেবিল, মোড়া এবং মাদুরের ব্যবস্থা করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানস্থল জুড়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল দেশাত্মবোধক বিভিন্ন গান। আমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়নে চায়ের পাশাপাশি ফুচকা, চটপটি, পাঠিসাপটা পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, জিলাপি, কাবাব-রুটির ব্যবস্থাও ছিল। পাশাপাশি খাবারের তালিকায় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল এবং জুসও ছিল।
চা-চক্রে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাপা নেতা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সুনীল শুভ রায়, ফয়সাল চিশতি, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ একাংশের (ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাসদ (আম্বিয়া) অংশের কার্যকরী সভাপতি নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন চা-চক্রে।
এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডরী, সাম্যবাদী দলের সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদোজ্জা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এম এ মান্নান, মাহী বি চৌধুরী এবং শমশের মুবীন চৌধুরী, বিএনএফ প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের এম এ আউয়াল, ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, ১৪ দলের নেতা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চা-চক্রের শেষের দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু চা-চক্রই করিনি, এখানে আমরা রাজনৈতিক ও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছি। আমাদের আতিথেয়তার ঘাটতি থাকলে সেটা আমরা হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করেছি।’
দেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সবার সহযোগিতা কামনা করে কাদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময়ে তার দেওয়া অঙ্গীকারগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চান। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় শতাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সংলাপে অংশ নেওয়া সব দলের নেতাদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো গণভবনে যায়নি। তারা যে চা-চক্রে অংশ নিচ্ছে না তা শুক্রবারই জানিয়েছিল। তবে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট চা-চক্রে না আসায় গণভবনের পরিবেশ খুবই প্রাণবন্ত ছিল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।